আজ: শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ইং, ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৭ই রমজান, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

২৬ মে ২০১৫, মঙ্গলবার |

kidarkar

৬৮৪ কোটি টাকার দাবীর মুখে ৩১ বীমা কোম্পানি

life insurance copyশেয়ারবাজার রিপোর্ট: মৃত্যুর পর পরিবারের আর্থিক সঙ্কট নিরাময়ের অঙ্গীকার করে গ্রাহকের কাছ থেকে প্রিমিয়ামের টাকা আদায় করলেও জীবন বীমা কোম্পানিগুলো যথাসময়ে মৃত্যুদাবী পরিশোধ করছে না। এমনকি পলিসির মেয়াদ শেষ হলেও যথাসময়ে গ্রাহকের প্রাপ্য অর্থ বুঝিয়ে দিচ্ছে না এ কোম্পানিগুলো।

এসব কারণে ২০১৪ হিসাব বছরে মেয়াদ শেষ হওয়া পলিসি সমর্পণের অর্থ এবং মৃত্যু দাবী বাবদ ৩১টি জীবন বীমা কোম্পানিগুলোর কাছে সাধারণ গ্রাহকের ৩ লাখ ৩৬ হাজার ৮৮৮টি দাবীর ৬৮৩ কোটি ৮৭ লাখ টাকা ঝুলে আছে। আইডিআরএ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

পরিণতিতে জীবন বীমার প্রতি সাধারণ গ্রাহকের অনাস্থা বাড়ছে বলে মনে করছেন বীমা সংশ্লিষ্টরা।

তাদের মতে, মৃত্যুদাবী কিংবা পলিসি সমর্পণের টাকা পেতে আইন অনুযায়ী অনেক কাগজ-পত্র জমা দিতে হয়। আর এর জন্য গ্রাহককে অনেক জটিলতার মধ্যে যেতে হয়। তাছাড়া সাধারণের বীমার প্রতি সচেতনতা না থাকায় সঠিকভাবে কাগজপত্র সংরক্ষণ করতে পারেনা। এর জন্য কোম্পানিগুলো থেকেও তারা পর্যাপ্ত সহায়তা পায়না। এমনকি এই বিষয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) নজরদারীর অভাব রয়েছে। আর এ সুযোগে জীবন বীমা কোম্পানিগুলোও গ্রাহককে দাবীর টাকা পরিশোধ করছে না। পরিণতিতে দেশের বীমা ব্যবসায় চরম বিশৃঙ্খলের দিকেই যাচ্ছে।

অনিষ্পত্তিকৃত দাবীর পরিমাণের দিক দিয়ে দেশের শীর্ষ স্থানীয় বীমা কোম্পানিগুলো এগিয়ে রয়েছে।

বেসরকারি কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বীমা দাবী অনিষ্পত্তিকৃত অবস্থায় রয়েছে পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্সের। ২০১৪ হিসাব বছরে কোম্পানিটির কাছে সাধারণ গ্রাহকের ১ লাখ ২৬ হাজার ৯৬৩টি বীমা দাবী জমা পড়েছে। যার আর্থিক মূল্য ২৫১ কোটি ২ লাখ টাকা।

অপরদিকে, জীবন বীমায় রাষ্ট্রায়ত্ত্ব একমাত্র প্রতিষ্ঠান জীবন বীমা কর্পোরেশনের কাছে ২০১৪ হিসাব বছরে সাধারণ গ্রাহকের ৫৬ হাজার ৬৮৬টি বীমা দাবী জমা পড়েছে। যার আর্থিক মূল্য ২৫৬ কোটি ৬৩ লাখ টাকা।

এছাড়া, বায়রা লাইফের কাছে ৪৮ লাখ টাকার ৭৩টি বীমা দাবী, বেস্ট লাইফের কাছে ১ লাখ টাকার ২টি বীমা দাবী, ডেল্টা লাইফের কাছে ৯৮ কোটি ১৫ লাখ টাকার ১ লাখ ৩১ হাজার ২৩৬টি বীমা দাবী, ফার-ইস্ট ইসলামি লাইফের কাছে ৭২ লাখ ৮৬ হাজার টাকার ৬৬টি দাবী, গোল্ডেন লাইফ ইন্স্যুরেন্সের কাছে ৫ কোটি ২৬ লাখ টাকার ১ হাজার ৪টি দাবী, হোমল্যান্ড লাইফের কাছে ১ কোটি ২০ লাখ টাকার ৪৫৫টি দাবী, মেঘনা লাইফের কাছে ৪৮ কোটি ৩০ লাখ টাকার ২ হাজার ৭৭৪টি দাবী, মার্কেন্টাইল ইসলামি লাইফের কাছে ৯ লাখ ৮০ হাজার টাকার ৩টি দাবী, মেটলাইফের কাছে ২১ কোটি ৮ লাখ টাকার ১ হাজার ১৭৯টি দাবী, ন্যাশনাল লাইফের কাছে ১৭ কোটি ৮০ লাখ টাকার ২ হাজার ৫৭১টি দাবী, পদ্মা ইসলামি লাইফের কাছে ১৫ কোটি ৮১ লাখ টাকার ১০ হাজার ৩৩২টি দাবী, প্রগতি লাইফের কাছে ১ কোটি ৯০ লাখ টাকার ৫১টি দাবী, প্রাইম ইসলামি লাইফের কাছে ১০ লাখ ৮৭ হাজার টাকার ১৯টি দাবী, প্রগ্রেসিভ লাইফের কাছে ৩১ লাখ টাকার ৭৪টি দাবী, রূপালী লাইফের কাছে ৬৪ লাখ ৮২ হাজার টাকার ৪৭০টি দাবী, সন্ধানী লাইফের কাছে ৪৯ কোটি ৮৪ লাখ টাকার ২ হাজার ৬২৮টি দাবী, সোনালী লাইফের কাছে ১ কোটি ৩৮ লাখ টাকার ৬৯টি দাবী, সানফ্লাওয়ার লাইফের কাছে ১ কোটি ২৬ লাখ টাকার ১৯৭টি দাবী, সানলাইফ ইন্স্যুরেন্সের কাছে ১ লাখ টাকার ২৯টি দাবী, ট্রাস্ট ইসলামী লাইফের কাছে ১০ লাখ ৫৪ হাজার টাকার ৩টি দাবী এবং জেনিথ ইসলামি লাইফের কাছে ৪ লাখ ৩০ হাজার টাকার ৩টি দাবী ঝুলে আছে।

এই বিষয়ে বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স এসোসিয়েশনের (বিআইএ) ভাইস-প্রেসিডেন্ট এবং সন্ধানি লাইফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো: আহসানুল ইসলাম টিটু শেয়ারবাজারিনিউজ ডটকমকে বলেন, বিদ্যমান আইন অনুযায়ী বীমা দাবী পরিশোধ করতে কিছুটা সময়ের প্রয়োজন পড়ে। তাই দ্রুত সময়ে দাবী নিষ্পত্তি সম্ভব হয়না। তবে ২০১৩ সালের তুলনায় ২০১৪ সালে বীমা দাবী বেশি পড়েছে। যা জীবন বীমার জন্য খুবই ইতিবাচক।

কিন্তু এতো বিপুল পরিমাণ অর্থ বীমা কোম্পানির কাছে আটকে আছে এতে জীবন বীমায় নেতিবাচক প্রভাব পড়বে কিনা এই বিষয়ে তিনি বলেন, অধিকাংশ দাবীই আইন অনুযায়ী নিষ্পত্তি হবে। তাই এখানে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা কম। আর এখন বাজারে প্রতিযোগীতা বেড়েছে সুতরাং কোম্পানিগুলোকেই যথানিয়মে নিয়মিত দাবী পরিশোধ করতে হবে।

বিআইএ থেকে দ্রুত দাবী পরিশোধের জন্য কোন পরিকল্পনা কিংবা প্রস্তাবনা রয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি আরো বলেন, বিআইএ থেকে এখনো তেমন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়নি। তবে আমাদের কোম্পানিতে অর্থাৎ সন্ধানি লাইফে আমরা আগামি জুলাই মাস থেকেই ব্যাংক অ্যাকাউন্টের আদলে অনলাইনে ওয়ান স্টপ পলিসি অ্যাকাউন্ট চালু করবো। এতে পলিসি রক্ষণাবেক্ষণ করতে বিদ্যমান জটিলতার অবসান হবে। কোম্পানিও দ্রুততম সময়ে দাবী পরিশোধ করতে পারবে।

অপরদিকে নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ’র সদস্য মো: কুদ্দুস খান এই বিষয়ে বলেন, বীমা দাবী পরিশোধের ক্ষেত্রে আইনি কিছু জটিলতা রয়েছে। যার সুযোগ কোম্পানিগুলো নিচ্ছে। যদিও এইসব বিষয়ের জন্য আমরা বিরোধ নিষ্পত্তি কমিটি করেছি। আর বীমা দাবী পরিশোধ কিভাবে আরো সহজে করা যায় সেই বিষয়ে আইডিআরএ কাজ করছে।

 

শেয়ারবাজারনিউজ/ও/তু/সা

 

 

 

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.