আজ: মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪ইং, ১০ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৩ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

০৮ ডিসেম্বর ২০২০, মঙ্গলবার |

kidarkar

শীর্ষ তিনে থাকবে বিডি ফাইন্যান্স: সম্পদ নয়,স্বাস্থ্য নিয়েও কাজ করছি- এমডি

শেয়ারবাজারের তালিকাভুক্ত আর্থিক খাতের কোম্পানি বাংলাদেশ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট (বিডি ফাইন্যান্স) এর দায়িত্ব নিয়েছেন। এই খাতের সবচেয়ে কম বয়সী ও তরুণ ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সিইও মোহাম্মদ কায়সার হামিদ। তিনি ১৫ বছর আগে দেশের অন্যতম এনবিএফআই ডেলটা ব্র্যাকের (ডিবিএইচ) মাধ্যমে আর্থিক খাতে যাত্রা শুরু করেন। একই সময়ে তিনি আরো বেশ কয়েকটি সুপরিচিত আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন ও ব্যাংকে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। তিনি কাজের মাধ্যমে অভিজ্ঞতা অর্জনের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানকে দিয়েছেন অনেক সাফল্য। তিনি গতিশীল নেতৃত্বের জন্যে বাংলাদেশের আর্থিক সেবা অঙ্গনে অত্যন্ত সুপরিচিত।

গত ২ সেপ্টেম্বর দায়িত্ব নিয়েছেন বিডি ফাইন্যান্স এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সিইও হিসেবে। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই প্রতিষ্ঠানটিকে ভালো অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। বিডি ফাইন্যান্স কে নিয়ে তার এগিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা ও কাজ করার বিষয়ে তিনি কথা বলেছেন দেশের আর্থিক খাতের অন্যতম ও ক্যাপিটাল মার্কেটের শীর্ষ স্থানীয় নিউজ পোর্টাল শেয়ারবাজার নিউজ এর সম্পাদক মাহবুবা ইসলামবিজনেস রিপোর্টার আতাউর রহমান

নিচে তার কথাগুলো পাঠকের জন্য তুলে ধরা হয়েছে।

কায়সার হামিদ: শুরুটা যদি বলি আমি কাজ শুরু করেছি একটি পরিচিত আর্থিক প্রতিষ্ঠান ডেল্টা ব্রাক হাউজিং। সেখানে আমি প্রায় ৬ বছর কাজ করি। ম্যানেজমেন্ট ট্রেইনি হিসেবে শুরু করেছিলাম। যা বাংলাদেশের হাউজিং ফাইন্যান্সের প্রথম সারির আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে রয়েছে। এবং এটার পরে আমি আইডিএলসি ফাইন্যান্সে কাজ শুরু করি। সেখানে ৪ বছর কাজ করি। সেখানে রিজনাল কনজ্যুমার বিজনেস এর প্রধান হিসেবে ছিলাম।

তিনি বলেন, প্রশ্ন করতে পারেন আমি শীর্ষ তিনটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাথে কাজ করার পরে কেন বিডি ফাইন্যান্সে যোগদান করলাম।

আমাদের দেশে মোট আর্থিক প্রতিষ্ঠান ৩৫ টি। আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বিডি ফাইনাস একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান যার দুইটা সাবসিডিয়ারি আছে ক্যাপিটাল মার্কেট অপারেশনে। বিডি সিকিউরিটিজ লিমিটেড ও বিডি ক্যাপিটাল। এটার বাইরে আমাদের কিন্তু নিজস্ব মতিঝিল কমার্শিয়াল এর মধ্যে একটি পাঁচতলা ভবন রয়েছে। আমাদের বোর্ডে যে শেয়ার হোল্ডিং স্ট্রাকচার দেখবেন সেখানে প্রথমেই রয়েছে আনোয়ার গ্রুপ। যে কোম্পানিটির চতুর্থ জেনারেশন ব্যবসা করছে। তাদের হাত দিয়েই বাংলাদেশের বেশিরভাগ ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করেছে। তারা ছাড়া আমাদের আরো তিনজন পরিচালক রয়েছেন যারা কিনা দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে প্রতিনিধিত্ব করেছেন, সিইও হিসেবে কাজ করেছেন। স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে চার্টার্ড একাউন্টেন্টরা রয়েছেন। তাই এই বোর্ডের কম্পোজিশন, আমাদের ব্যালেন্স শীট এবং যদি আমাদের গ্রাহক দেখেন সেখানে কর্পোরেট ৫৬%, এসএমই ২৬% ও বাকিটা রিটেইল পোর্টফলিও। সাথে ক্যাপিটাল মার্কেট এর অপারেশন তো রয়েছেই। এবং আমাদের এই সম্পূর্ণ বিজনেস সাইকেল এর মধ্যে কাস্টমারের সম্পূর্ণ সমাধান দেয়ার জন্য আরও যে কার্যক্রম থাকা দরকার আমাদের গ্রুপের সঙ্গে সে সব সুবিধা রয়েছে।

তিনি বলেন, আমার কাছে মনে হয়েছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান যে বিজনেস করার যে সুযোগ রয়েছে আমরা যদি সবগুলো কাজে লাগাই যার মাধ্যমে আগামী তিন বছরের মধ্যে শীর্ষ তিনে অবস্থান করবে। এটার ব্যবসা ও প্রচার বাড়ানো হচ্ছে আমার লক্ষ্য। আপনি যদি প্রধান বিষয় নিয়ে কাজ করতে চান তাহলে শুধু লাভ আর ব্যবসা গ্রোথ বাড়বে। শুধু ব্যবসা বড় করলেই হবে না আমাদের যেসব বিষয়গুলো ঘাটতি আছে সেগুলো নিয়ে কাজ করে বাংলাদেশের ইনভাইরনমেন্টে শীর্ষ একটি জায়গায় যাওয়া যায় সেটা নিয়ে আমার কাজ করা।

তরুণ এই ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সিইও বলেন, আমাদের ইন্টার্নাল অডিটকে খুব মজবুত করেছি। আমাদের এক্সটার্নাল অডিটর হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে হুদা ভাসি ফার্মকে। যেখানে এটি দেশের একটি শীর্ষ পর্যায়ের অডিট ফার্ম হিসেবে পরিচিত। বর্তমান সময়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে তাদের খরচ কমানোর কারণে বি বা সি ক্যাটাগরির অডিট ফার্ম দিয়ে অডিট করে, সেখানে আমরা টপ এর দিকে যাচ্ছি। আমরা ১২% ক্যাশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছি এই কঠিন সময়ের মধ্যে। এবং সেটার প্রভাব কিন্তু ক্যাপিটাল মার্কেট আমরা দেখতে পেয়েছি। আমরা আমাদের করপোরেট গভর্নেন্স অডিটর হিসেবে শীর্ষ পর্যায়ের অডিটরকে নিয়োগ দিয়েছে। আমরা এই মুহূর্তে বন্ড ইস্যু করার জন্য ইতোমধ্যে চুক্তিবদ্ধ হয়েছি ক্যাপিটাল মার্কেট এর মার্চেন্ট ব্যাংক সিটি ক্যাপিটাল এর সাথে।

তিনি আরো বলেন, বিদেশি ঋণের বিষয়ে আমরা ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটিটি দেশের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করেছি। যার মাধ্যমে আমরা বিদেশি ঋণ নিয়ে আসব।

আমাদের শুরুর দিকের কার্যক্রমের প্রধান লক্ষ্য হলো, নিজেদের একটি শতভাগ কমপ্লায়েন্সড আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা। উন্নত কর্পোরেট গভর্নেন্স এর মাধ্যমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে নিজেদের বাংলাদেশের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে তৈরি করতে কাজ করে যাচ্ছি।

তিনি আরো বলেন, আমি মূলত দুইটা জায়গায় প্রাধান্য দিয়ে কাজ করবো। একটা হলো ফান্ডিং মিক্সে কাস্টমার ডিপোজিটের পরিমান বাড়ানো, রিকারিং এবং স্টিকি ডিপোজিট নেয়ার জন্য একটি সেলস্ মডেল এবং রিলেশনশিপ বেজ বিজনেস মডেল তৈরি করা, যেখানে ওয়েলথ ম্যানেজমেন্ট এর একটি নতুন কনসেপ্ট নিয়ে আসতে চাচ্ছি। গ্রাহকদের বীমা সেবা,পুঁজিবাজারের ব্যবসার সুযোগ এবং আর্থিক খাতের অন্যান্য সুবিধা দেওয়ার জন্য এই ওয়েলথ ম্যানেজমেন্ট কনসেপ্ট কাজ করবে। এক কথায় অর্থ বাজারের সকল সুবিধা এক ছাতার নিচে নিয়ে আসতে চাই। যেহেতু আমার এনবিএফআইয়ের বিজনেস মডেলে দীর্ঘ দিন কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে, ব্যাংকেও আমার কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে, আমি বিশ্বাস করি আমাদের বর্তমান পর্ষদের সহযোগিতায় আগামী তিন-চার বছরে বিডি ফাইন্যান্সকে একটি অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারবো। বিগত এক মাসে বিডি ফাইন্যান্সের মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশন যে পরিমান বেড়েছে , আমি বলবো এটা ডাবলেরও বেশি।

তিনি বিডি ফাইন্যান্সে যোগদানের ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ইসলামী শরীয়াহভিত্তিক উইং খোলার অনুমোদন পেয়েছে। এ্ই অনুমোদনের ফলে বিডি ফাইন্যান্স এখন ইসলামী শরীয়াহভিত্তিক ব্যবসা পরিচালনার জন্য পৃথক উইং খুলতে পারবে এবং ইসলামী মূল্যবোধের আলোকে প্রনীত বিধি-বিধান মেনে গ্রাহকদের প্রয়োজনীয় আর্থিক সেবা প্রদান করতে পারবে।

গত বছরের আগষ্টে বিডি ফাইন্যান্সের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকে ইসলামী শরীয়াহভিত্তিক ব্যবসা পরিচালনার জন্য পৃথক উইং খুলার অনুমোদন চেয়ে আবেদন করা হয়েছিল। সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক পত্র মারফত আজ ইসলামী শরীয়াহভিত্তিক ব্যবসা পরিচালনার জন্য পৃথক উইং খুলার জন্য কিছিু শর্ত পরিপালন স্বাপেক্ষে নীতিগতভাবে অনমোদন প্রদান করেছে।

বর্তমানে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে বিডি ফাইন্যান্স ইসলামী শরীয়াহভিত্তিক ব্যবসা পরিচালনার জন্য বাংলাদেশ ব্যংকের অনুমোদন প্রাপ্ত প্রথম আর্থিক প্রতিষ্ঠান হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে।

এছাড়া গ্রাহকদের শুধু অর্থ বা সম্পদের সুরক্ষা নয়, সাথে তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়ে তিনি একটি নতুন প্রডাক্ট চালু করেছেন যার নাম ‘বিডি ফাইন্যান্স সুরক্ষা’। বিডি ফাইন্যান্স মহামারীজনিত কারণে জনগণের নিবিড় স্বাস্থ্য চেতনায় গ্রাহকদের আকর্ষণ করতে চায়। সেই পরিকল্পনা থেকে তারা একটি পণ্য ডিজাইন করেছে যাতে স্বাস্থ্য সুবিধাসমূহ (টেলি-মেডিসিন, স্বাস্থ্য ও জীবন বীমা, কোভিড -১৯ সুবিধা, ডায়াগনস্টিক এবং মেডিসিনে ছাড় এবং ডাক্তারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট পরিচালনার) অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। আমরা এই পণ্যটি ‘বিডি ফিনান্স সুরক্ষা’ হিসাবে পরিচয় করিয়ে দিতে চাই যা আমাদের আকর্ষণীয় সঞ্চয়ের অফারের পাশাপাশি সমস্ত স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া যাবে।

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.