আজ: মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪ইং, ১০ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১২ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

১৭ ডিসেম্বর ২০২০, বৃহস্পতিবার |

kidarkar

করোনার টিকা সংরক্ষণে ‘কোল্ড চেইন’ বড় প্রতিবন্ধকতা

শেয়ারবাজার ডেস্ক: করোনা ভাইরাসের মহামারির প্রলয় ঠেকাতে ইতিমধ্যে জরুরি ক্ষেত্রে তিনটি ভ্যাকসিনের প্রয়োগ শুরু হয়েছে দেশে দেশে। আরো একটি ভ্যাকসিন অনুমোদনের সুপারিশ করেছে মার্কিন ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ)। এর বাইরে এমাসের মধ্যে আসছে আরো দুইটি। ইতোমধ্যে টিকা দিতে শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও যুক্তরাজ্য। যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে প্রায় ১৫০টি হাসপাতালে এই টিকা দেয়া হচ্ছে। টিকা পাওয়ার জন্য প্রতিযোগিতা চলছে বিশ্বজুড়ে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, আগামী জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে দেশে করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন আনা হবে। প্রথমে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ৫০ লাখ ডোজ টিকা আসবে। চুক্তি অনুযায়ী এই টিকা তিন কোটি ডোজ বাংলাদেশে নিয়ে আসবো। এই টিকা দেয়া হবে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে। তবে টিকা সংরক্ষণ,পরিবহন ও বিতরণে জটিলতার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। টিকা সংরক্ষণ করার জন্য যে কোল্ড চেইন (শীতল ব্যবস্থা) দরকার, তার অভাবকে বাংলাদেশের সুফল পাওয়ার ক্ষেত্রে বড় বাধা হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।

তারা বলছেন, ফাইজার যে এমআরএনএ প্রযুক্তিভিত্তিক টিকা তৈরি করেছে, তা সংরক্ষণ করতে হবে হিমাঙ্কের ৭০ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার নিচে। কিন্তু বাংলাদেশে সমপ্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআই) আওতায় জীবন রক্ষাকারী ওষুধ ও শিশুদের টিকা সংরক্ষণ ও বিতরণের জন্য যে ব্যবস্থা আছে, তার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা মাইনাস ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই সক্ষমতা বাংলাদেশের রাতারাতি অর্জন করার সম্ভাবনা কম। আর এজন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক রেফ্রিজারেটর স্বল্প সময়ে পাওয়া যাবে না। তবে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনা ভ্যাকসিনটি ২ থেকে ৮ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় সংরক্ষণযোগ্য। যে সুবিধা বাংলাদেশে বিদ্যমান থাকলেও পর্যাপ্ত নয়। বাংলাদেশ সরকার সিরাম ইনস্টিটিউট ইন্ডিয়া ও বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের মধ্যে চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা উদ্ভাবিত কোভিড-১৯ এর তিন কোটি ডোজ টিকা কিনবে। এই টিকা কবে অনুমোদন পাবে তা এখনো নিশ্চিত নয়। সামান্য সমস্যা সৃষ্টি হওয়ায় তারা এখন গ্লোবাল ট্রায়ালে গেছে। এক্ষেত্রে আরও সময় লাগতে পারে।

মডার্নার আশা, তাদের টিকা রেফ্রিজারেটরে ২ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ৩০ দিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যাবে। আর মাইনাস ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় এটা সংরক্ষণ করা যাবে ৬ মাস। চীনের ন্যাশনাল ফার্মাসিউটিক্যাল গ্রুপ ও সিনোফার্মের তৈরি ভ্যাকসিন ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে মধ্যগ্রাচ্যের দেশ বাহরাইন। এই টিকাও মাইনাস ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য রাখা যাবে বলে তারা দাবি করছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই দেশে টিকা সংরক্ষণ ও প্রয়োগের ক্ষেত্রে সমস্যা রয়েছে অনেকগুলো। তার মধ্যে কোল্ড চেইন ইকুইপমেন্ট, এডি সিরিঞ্জ, সেফটি বক্স, এইএফআই কিট বক্স, এইএফআই ফরমস, সার্জিক্যাল মাক্স, সেনিটাইজার, পিপিই, ইনফেরার্ড থার্মোমিটার, পয়েন্টিং ম্যাটেরিয়ালস, আইস প্যাক, ভ্যাকসিন ক্যারিয়ার, কোল্ড বক্স, আইস লাইনার রেফ্রিজারেটর, পুশিং ফ্রিজ ইনডিকেটর, ফ্রিজ ট্যাগ, সেফটি বক্স ইত্যাদি থাকতে হবে। এসব চাহিদা পুরণের জন্য তাগিদ দিয়েছে সরকার গঠিত টিকা সংক্রান্ত কমিটি। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে টিকা সংরক্ষণের জন্য ব্যাবস্থা নেয়া হচ্ছে। জানা গেছে,আগামী ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত দেশে এমআর (হাম-রুবেলা) ক্যাম্পেইন সম্পন্ন করার কর্মসূচি হাতে নিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। এ ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে ৯ মাস থেকে ১০ বছর বয়সী অন্তত ৩ কোটি ৪০ লাখ শিশুকে টিকা দেয়ার কথা রয়েছে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর সহযোগী অধ্যাপক ড. লায়লা খালেদ বলেন, ফাইজার টিকার তাপমাত্রা সংরক্ষণ করার সক্ষমতা বাংলাদেশের হাসপাতাল কিংবা হেলথ সেন্টারগুলোতে নেই। তবে অক্সফোর্ডের টিকা সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে। সেটাও সীমিত সংখ্যক।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক আরও বলেন, এ টিকাটি বেক্সিমকোর কোল্ড স্টোরেজে সংরক্ষণ করা হবে। আমরা দেশের দেড় কোটি মানুষকে এ টিকা দিতে সক্ষম হব। ন্যাশনাল ভ্যাকসিন ডেপ্লয়মেন্ট কমিটির চেয়ার ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ভ্যাকসিন বিষয়ক কর্মসূচি পরিচালিত হবে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মা, শিশু ও কিশোর স্বাস্থ্য কর্মসূচির আওতায়।

ইউনিসেফের কান্ট্রি ডিরেক্টর তোমো হোজুমি বলেন, বাংলাদেশ প্রতিবছর ৩৯ লাখ শিশুকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনে যা দেশের মোট জনসংখ্যার ২ দশমিক ৪ শতাংশ। মডার্নার টিকা সংরক্ষণে আল্ট্রা-কোল্ড স্টোরেজ এর প্রয়োজন পড়বে না। এ টিকা রেফ্রিজারেটরের তাপমাত্রাতেই (২ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস) ৩০ দিনের জন্য সংরক্ষণ করা যাবে। আর ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে এই টিকা সংরক্ষণ করা যাবে ৬ মাস পর্যন্ত। ফলে মডার্নার টিকা বিতরণ করাও সম্ভব হবে।

শেয়ারবাজার নিউজ/মি

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.