আজ: বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ইং, ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৪ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

১১ জানুয়ারী ২০২১, সোমবার |

kidarkar

শেয়ারবাজারে সুশাসন নিশ্চিতে অগ্রাধিকার দিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ- বিএসইসি চেয়ারম্যান

আতাউর রহমান: আমরা শেয়ারবাজারের উন্নয়নে যেসব কর্মকাণ্ড করছি, সেসব বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সম্পূর্ণ সহযোগিতা রয়েছে। এই জন্য অনেক বিষয় আমরা বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়েছি। আর শেয়ারবাজারে সুশাসন প্রতিষ্ঠার ওপর অগ্রাধিকার দিতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলে জানিয়েছেন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স বিভাগের অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে ছিলেন সাধারণ বীমা করপোরেশনের চেয়ারম্যান। দীর্ঘদিন ধরে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডিন। সম্প্রতি একান্ত আলাপচারিতায় নতুন বছরের প্রত্যাশা ও শেয়ারবাজারের উন্নয়ন নিয়ে বিভিন্ন দিক তুলে ধরেছেন তিনি।

বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেন, নতুন বছরে বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়নে অনেক কঠিন চ্যালেঞ্জ ও বাধা রয়েছে। কেউ কেউ আমাদের এই কাজ সম্পন্ন করতে দিতে চাইবে না। কারণ এখানে ইচ্ছে করলেই কোটি কোটি টাকা আয় করা যায়। আমরা যাদের ডিসটার্ব করছি, তারা আমাদের আরামে কাজ করতে দেবে না। তবে, প্রধানমন্ত্রী সব সময় আমাদের সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছেন। যে কারণে বাজারকে এই পর্যায়ে আনা সম্ভব হয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা শেয়ারবাজারের উন্নয়নে যেসব কর্মকাণ্ড করছি, সেসব বিষয়ে তার সম্পূর্ণ সহযোগিতা রয়েছে। এই জন্য অনেক বিষয় আমরা বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়েছি। আর পুঁজিবাজারে সুশাসন প্রতিষ্ঠার ওপর অগ্রাধিকার দিতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যে কারণে কেউ আমাদের বাধা দিতে পারছে না।

শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, এখন পর্যন্ত কমিশন যা করতে চায়, তার ৩০ শতাংশ সম্পন্ন হয়নি। আমাদের মার্কেটের গ্রোথ, স্ট্যাবিলিটি, ট্রান্সপারেন্সি ও সাস্টেনেবিলিটির জায়গায় অনেক কাজ করার ব্যাপার আছে। এই কাজগুলো অনেক সহজ হয়ে যাবে, যদি তথ্যপ্রযুক্তির (আইটি) অ্যাপ্লিকেশনটা নিয়ে আসতে পারি। আইটির সঙ্গে সঙ্গে যখন সেন্ট্রাল কাউন্টারপার্টি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিসিবিএল) কাজ শুরু করবে। একইসঙ্গে বন্ডের লেনদেনও শুরু হবে। তখন শেয়ারবাজারে ডাইভারসিফাউড প্রোডাক্ট আসার মাধ্যমে পরিপূর্ণতা পাবে।

তিনি বলেন, নতুন বছরে আমরা যদি সুন্দর ভাবে কাজ করতে পারি, তাহলে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন করতে পারবো। এতে শেয়ারবাজার একটি পর্যায়ে চলে আসবে। আর পরবর্তী বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে উন্নত দেশের পুঁজিবাজারের মতো বাংলাদেশের শেয়ারবাজারকে দেখতে পাবেন। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে আমরা যেভাবে আগাতে চেয়েছি, ঠিক সেভাবেই এগুচ্ছি। আমরা ঠিক রাস্তায় আছি।

বিএসইসির এই চেয়ারম্যান আরো বলেন, মার্কেটের গ্রোথ, স্ট্যাবিলিটি, ট্রান্সপারেন্সি ও সাস্টেনেবিলিটির ওপর জোর দিয়ে তথ্যপ্রযুক্তি অ্যাপ্লিকেশনটা নিয়ে এলে বাজার স্বচ্ছ ও স্থিতিশীল হবে। ১৯৯৬ সালে বাজারে যখন পতন ঘটে, তখন কাগজে শেয়ার ছিল। তখন রাস্তায় রাস্তায় কেনা-বেচা হতো। কে কোন দিক দিয়ে কী করতো, তা খেয়াল করা যেতো না। এখন আর তা সম্ভব নয়। এখন সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি অব বাংলাদেশ (সিডিবিএল) আছে, সেন্ট্রাল কাউন্টারপার্টি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিসিবিএল) রয়েছে। সিসিবিএলের কার্যক্রম আগামী ৬ মাসের মধ্যে শুরু হবে। এছাড়া, ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশকে (আইসিবি) আরও শক্তিশালী করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে একটি শক্তিশালী শেয়ারবাজার গঠনের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি।

তিনি বলেন: সম্প্রতি সুকুক বন্ড সফলভাবে চালু করা সম্ভব হয়েছে। আমরা যোগ দেওয়ার পরপরই বলেছিলাম, সুকুক বন্ড চালু করবো। সফলভাবে চালু করতে সক্ষমও হয়েছি। ৪ হাজার কোটি সুকক বন্ডের বিপরীতে ১৫ হাজার কোটি টাকার আবেদন জমা পড়েছে, যা প্রায় চারগুণ। বাংলাদেশের সম্পূর্ণ ইনফ্রাস্ট্রাকচার পরিবর্তন করে দেওয়া সম্ভব হবে শুধু সুকুক বন্ড দিয়ে। যদি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই), চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই), সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি অব বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল) ও সেন্ট্রাল কাউন্টারপার্টি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিসিবিএল) প্রস্তুত থাকতো, তাহলে শেয়ারকাজারে সুকুক বন্ডের লেনদেন চালু করা যেতো। তবে আগামী ছয় মাসের মধ্যে এটা করা সম্ভব হবে।

তিনি আরো বলেন, যখন বন্ডের লেনদেন চালু হবে, তখন বাজার মূলধন, লেনদেন ও সূচক অনেক বেড়ে যাবে। কারণ বন্ডেই হাজার কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়। পাশপাশি মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলোর ওপর আমরা জোর দিয়েছি। যেন মানুষ এফডিআরের পরিবর্তে এখানে আসে। এতে মিউচ্যুয়াল ফান্ড অনেক বড় হবে। সামনের বছরে মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলো যদি তাদের খ্যাতি ও ভালোটা ধরে রাখতে পারে। তাহলে এফডিআরের টাকা আসতে শুরু করবে। তখন মিউচ্যুয়াল ফান্ডের তহবিলও অনেক বেড়ে যাবে।

চলতি বছরের বড় চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রডাক্ট ডাইভারসিফিকেশন আমাদের এই বছরের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। এখন তো শেয়ারবাজারে শুধুই ইকুইটি মার্কেট রয়েছে। নতুন বছরে বিভিন্ন ধরনের ডাইভারসিফাইড প্রোডাক্ট শেয়ারবাজারে আসবে বলে আশা করছি। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) বলা হয়েছে কমোডিটি এক্সচেঞ্জ নিয়ে কাজ করতে। তারা যেহেতু হোলসেল মার্কেটের কেন্দ্রে বসে আছে, তাই তাদের হোলসেল মার্কেটের সফটওয়্যার আপডেট করতে বলেছি। সফটওয়্যার আপডেট করলে তারা চট্টগ্রামে হোলসেল মার্কেটে চাল, তেল, পেঁয়াজ, প্রেট্রোল, ক্রুড অয়েল- এ ধরনের পণ্যের লেনদেন চালু করতে পারবে। এতে অনেক লাভ হবে। ইতোমধ্যে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান মার্কেট মেকার হিসেবে কাজ করার জন্য আবেদন করেছে। এ বছরে দুই-তিন প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্স দেওয়া হবে।

 

শেয়ারবাজার নিউজ/এন

৭ উত্তর “শেয়ারবাজারে সুশাসন নিশ্চিতে অগ্রাধিকার দিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ- বিএসইসি চেয়ারম্যান”

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.