আজ: শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ইং, ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৮ই রমজান, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

০৯ ফেব্রুয়ারী ২০২১, মঙ্গলবার |

kidarkar

অবশেষে করোনাপূর্ব অবস্থায় ফিরল তেলের দাম

শেয়ারবাজার ডেস্ক: মহামারির ধাক্কায় গত বছর এপ্রিল মাসে তেলের দাম নেমে গিয়েছিল প্রতি ব্যারেল মাইনাস ৩৭ ডলারে। অর্থাৎ ক্রেতা এক ব্যারেল তেল কিনলে তাঁকে উল্টো ৩৭ ডলার দিতে হয়েছে বিক্রেতাকে। এ ছাড়া ওপেকের সঙ্গে রাশিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধের কারণে তেলের বাজার কয়েক বছর ধরেই খারাপ।

তেলের মূল্য বা চাহিদা বৃদ্ধির সঙ্গে অর্থনৈতিক তৎপরতার প্রত্যক্ষ সম্পর্ক আছে। অর্থনীতিতে গতি এলে স্বাভাবিকভাবে তেলের চাহিদা বাড়ে। আশার খবর হলো, তেলের দাম মহামারি-পূর্বাবস্থায় ফিরে গেছে। গতকাল এই প্রতিবেদন লেখার সময় ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম প্রতি ব্যারেল ৬০ ডলারের ওপরে ছিল। নভেম্বর মাসের পর এই তেলের ফিউচার কনট্র্যাক্ট ৫৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। আর গত এক মাসে তেলের দাম বেড়েছে ৫০ শতাংশের বেশি।

সিঙ্গাপুরভিত্তিক তেল বাজার বিশ্লেষক বন্দনা হরি বিবিসিকে বলেছেন, করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে আসছে—শেষমেশ এই আশা সৃষ্টি হওয়ায় জনজীবনসহ অর্থনীতিতে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরতে শুরু করেছে। এশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় চাহিদা বাড়তে শুরু করেছে। পাশাপাশি তেল উৎপাদনকারী দেশ, বিশেষ করে সৌদি আরবের নানা তৎপরতায় তেলের উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে। এতে বাজারে সরবরাহ কমেছে। বেড়েছে দাম। এ ব্যাপারে অবশ্য গত বছরের এপ্রিল মাসেই ঐকমত্য হয়েছিল। সেই সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে তেল উৎপাদকেরা সম্মিলিতভাবে ২১০ কোটি ব্যারেল উৎপাদন স্থগিত রেখেছে।

সাধারণত অর্থনৈতিক কার্যক্রমের ব্যারোমিটার হিসেবে দেখা হয় তেলের দামকে। করোনার কারণে বছরখানেক ধরে এর অবস্থা ছিল বেশ নাজুক।

তবে একটু একটু করে চাহিদাবৃদ্ধির কারণে গত কয়েক মাসে তেলের দাম ৫০ শতাংশ বেড়েছে। আর চলতি সপ্তাহে এর দাম উঠেছে প্রতি ব্যারেল ৬০ মার্কিন ডলারে, যা সবশেষ করোনা আসার আগে দেখা গিয়েছিল।

ভবিষ্যৎ চুক্তিতে শক্ত অবস্থানে ফিরেছে তেলবাজারের প্রধান বেঞ্চমার্ক ব্রেন্ট ক্রুড। গত নভেম্বর থেকে এপর্যন্ত এর দাম বেড়েছে প্রায় ৫৯ শতাংশ।

সুসময় যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের তেলের বেঞ্চমার্ক ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েটেরও (ডব্লিউটিআই)। এক বছরেরও বেশি সময় পরে গত সপ্তাহে এর দাম উঠেছে ব্যারেলপ্রতি ৫৫ ডলারের ওপর।তেলবাজার বিষয়ক সিঙ্গাপুরভিত্তিক সংস্থা ভ্যান্ডা ইনসাইটসের প্রতিষ্ঠাতা বন্দনা হরি বলেন, গত সপ্তাহে [তেলের] মূল্যবৃদ্ধির সবচেয়ে বড় চালক হলো- করোনাভাইরাস পিছু হটছে, এমন ইঙ্গিতের ভিত্তিতে অর্থনৈতিক ও তেলের চাহিদা পুনরুদ্ধার প্রত্যাশার শক্তিশালী উত্থান।

এর পেছনে অন্য কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে উৎপাদক দেশগুলো, বিশেষ করে সৌদি আরব তেল সরবরাহ কমিয়ে দেওয়া।

গত এপ্রিলে উৎপাদন কমাতে রাজি হওয়ার পর থেকে উৎপাদকরা এপর্যন্ত অন্তত ২১০ কোটি ব্যারেল তেল কম সরবরাহ করেছে, যার ফলে মজুত অনেকটাই কমে গেছে।

গত বছর করোনাভাইরাস মহামারির হানায় তেল শিল্প রীতিমতো বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে এর দাম নেমে এসেছিল শূন্যেরও নিচে। তবে ধীরে ধীরে সেই সংকট কাটতে শুরু করায় আবারো আশার আলো দেখছেন ব্যবসায়ীরা।

তবে উড়োজাহাজের জ্বালানির চাহিদা এখনো গত বছরের এই সময়ের তুলনায় ৭০ শতাংশ কম। এখনো দেশে দেশে ভ্রমণনিষেধাজ্ঞা থাকার কারণে বিমান চলাচল অনেক কম। তবে চাহিদা আবার অন্যদিক দিয়ে বেড়েছে। ব্যাপারটা হলো, মানুষ ঘরে থেকে কাজ করার কারণে খাওয়ার পরিমাণ বেড়ে গেছে। ঘর থেকে কম বেরোলেও মানুষ ই-কমার্স সাইটগুলো থেকে বিপুল কেনাকাটা করছে। ই-কমার্সের চাহিদা বেড়ে যাওয়ার কারণে প্লাস্টিক প্যাকেটের চাহিদা এখন তুঙ্গে। আর এই প্যাকেট তৈরিতে তেল ব্যবহৃত হয়।

তবে তেলের চাহিদা এখনো মহামারি-পূর্ব সময়ের তুলনায় কম। এর সঙ্গে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির চাকা যদি দ্রুত না ঘোরে, তাহলে আরও বিপদ। ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সি গত মাসে সতর্ক করে দিয়েছে, এতে আগামী দিনগুলোতে তেলের চাহিদা সেভাবে না-ও বাড়তে পারে।

বিশ্বব্যাংকের প্রাক্কলন, ২০২১ সালে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়াবে ৪ শতাংশ। তবে সবকিছু নির্ভর করছে টিকাদানের ওপর। টিকা দিতে বিলম্ব হলে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কার্যক্রম আবার পিছিয়ে পড়তে পারে। তাতে তেলের চাহিদাও স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরবে না।

শেয়ারবাজার নিউজ/মি

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.