আগামী বাজেটে ঋণের সুদ ব্যয় বাড়বে
শেয়ারবাজার রিপোর্ট: করোনার কারণে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা অনেকটাই নাজুক। একদিকে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধ অন্যদিকে অর্থনীতির চাকা সচল রাখার প্রচেষ্টা। এই দুই বিষয় সামনে রেখে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ আগামী ২০২১-২০২২ অর্থবছরে বাজেট প্রণয়নের কাজ করছে। এ অবস্থায় ঘাটতি পূরণের জন্য সরকারকে উচ্চ সুদে ঋণ নিতে হবে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা। শুধু ঋণের সুদ মেটাতেই ব্যয় হবে ৬৮ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। বাজেট প্রণয়নে জড়িতদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বাজেট ঘাটতি মেটানোর জন্য অভ্যন্তরীণ খাত থেকে ব্যাপক হারে ঋণ নেওয়ার কারণে সরকারের সুদ ব্যয় প্রতিবছরই বেড়ে চলেছে। আগামী ২০২১-২০২২ অর্থবছরের বাজেটে এই সুদ খাতেই সরকারকে ব্যয় করতে হবে ৬৮ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। যা চলতি অর্থবছর থেকে চার হাজার ৫৯৯ কোটি টাকা বেশি। চলতি ২০২০-২০২১ অর্থবছরে এই খাতে ব্যয় ধরা রয়েছে ৬৩ হাজার ৮০১ কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আগামী অর্থবছরের বাজেটের আকার প্রাথমিকভাবে প্রাক্কলন করা হয়েছে ৫ লাখ ৯৬ হাজার কোটি টাকা। এই হিসেবে সুদ খাতে বাজেটের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ব্যয় করতে হচ্ছে। বাজেট ব্যয়ের শিক্ষা ও প্রযুক্তি ও পরিবহন ও যোগাযোগখাতের পরেই রয়েছে সুদ খাতে সর্বাধিক ব্যয়। আগামী অর্থবছরে সুদ খাতে যে ব্যয় হবে তা দিয়ে দুটি পদ্মা সেতু বা তিনটি মেট্রোরেল নির্মাণ করা সম্ভব।
জানা গেছে, আগামী অর্থবছরে সুদ খাতে অর্থব্যয় শেষ মুহূর্তে আরও কিছুটা বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে অর্থবিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘কোভিড-১৯ এর কারণে আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে বর্ধিতহারে কিছু ঋণ সহায়তা পাওয়া যাচ্ছে। এই ঋণের সুদ পরিশোধের জন্য আরও দুই-তিনশ কোটি টাকা খরচ হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে আগামী অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয় ৬৯ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছতে পারে।’
সূত্র জানায়, প্রতি অর্থবছরে ঋণ পরিশোধের ৯০ শতাংশই বরাদ্দ থাকে অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধে। বাকিটা বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধে ব্যয় হয়। অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধের মধ্যে সঞ্চয়পত্রের সুদ, ব্যাংকের মেয়াদি ঋণের সুদ, সরকারি কর্মচারীদের ভবিষ্যৎ তহবিল বা জিপিএফের সুদ, চলতি ঋণ এবং জীবন বিমা ও অন্যান্য ঋণের সুদ পরিশোধের বিষয়গুলো রয়েছে।
এছাড়া, করোনাকালে নতুন করে প্রণোদনা, ভ্যাকসিন কেনাসহ নানা খাতে সুদ ব্যয় হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি সুদ ব্যয় হয় সঞ্চয়পত্রখাতে। এখাতে সরকারকে ১১ শতাংশের বেশি সুদ দিতে হচ্ছে।
অর্থ বিভাগের এক প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে যেখানে বাজেটে সুদ খাতে ব্যয় হয়েছে ২৯ হাজার ৪৩৬ কোটি টাকা। সেখানে চলতি ২০২০-২০২১ অর্থবছরে এ খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৩ হাজার ৮০১ কোটি টাকা। এ সময় অভ্যন্তরীণ সুদ ব্যয়ের পাশাপাশি বৈদেশিক ঋণের সুদ ব্যয়ও ৫ গুণের বেশি বেড়েছে। মূলত গত কয়েক বছরে সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংক থেকে অধিকহারে ঋণ নেওয়ার কারণে এই ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে সূত্র জানিয়েছে।
উল্লেখ্য, চলতি ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয় করা হয়েছে ৫৭ হাজার ৬৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ খাতে সুদ ব্যয় হয়েছে ৫২ হাজার ৭৯৬ কোটি টাকা। বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় ৪ হাজার ৮৬৮ কোটি টাকা। এর আগের ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ খাতে সুদ ব্যয় ছিল ৪৫ হাজার ২৭৮ কোটি টাকা। বিদেশি সুদ ব্যয় ৩ হাজার ৪৬৭ কোটি টাকা। ১৭-১৮ অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ সুদ ব্যয় ৩৮ হাজার ১৬০ কোটি টাকা এবং বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় ছিল ৩ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা। একইভাবে ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে এই ব্যয় যথাক্রমে ৩৮ হাজার ২৪০ কোটি টাকা এবং একহাজার ৭১১ কোটি টাকা। ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে ৩০ হাজার ৪৪ কোটি টাকা ও এক হাজার ৬২৫ কোটি টাকা। ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ সুদ ব্যয় ছিল ২৯ হাজার ৪৩৬ কোটি টাকা এবং বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় হয়েছে এক হাজার ৫৩৭ কোটি টাকা।
আগামী বাজেটে ব্যাংকে নুন্নতম এক বছর মেয়াদি FDR কে অনুমোদিত বিনিয়োগ এবং DPS এর বিনিয়োগ সীমা ১,২০,০০০.০০ উন্নিত করার দাবি জানাচ্ছি। এতে ব্যাংক তারল্য সংকট থেকে রক্ষা পাবে এবং সঞ্চয় পত্রের উপর চাপ কমবে।