আজ: শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ইং, ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৭ই রমজান, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

১০ মে ২০২১, সোমবার |

kidarkar

এক কোটি ডোজ ভ্যাকসিন আসবে রাশিয়া থেকে

শেয়ারবাজার ডেস্ক: করোনাভাইরাসের সংক্রমণে বিপর্যস্ত গোটা বিশ্ব। এমন পরিস্থিতিতে মানবদেহে ভ্যাকসিন প্রয়োগের মাধ্যমে এন্টিবডি তৈরিতে জোর দিচ্ছে সব দেশ। ইতোমধ্যে বাংলাদেশেও একটি বড় অংশের মানুষের দেহে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হয়েছে।

তবে এবার ভারতের বাইরে রাশিয়ার টিকা স্পুটনিক-ভি আনতে যাচ্ছে সরকার। এক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে মাসে ২০ লাখ করে ৫ মাসে মোট ১ কোটি ভ্যাকসিন আনার পরামর্শ দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

জানা গেছে, সামগ্রিক যাচাই-বাছাই শেষে দেশে স্পুটনিক-ভি প্রয়োগে অনুমোদন দিয়েছে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর। স্বাস্থ্য অধিদফতরের নথির ভিত্তিতে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ রাশিয়া থেকে ভ্যাকসিন আনার চুক্তির বিষয়ে অর্থ বিভাগের মতামত চেয়ে চিঠি দেয়।

সেই চিঠির ভিত্তিতে মতামত জানিয়েছে অর্থ বিভাগ। সেখানে রাশিয়ার ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে চুক্তি হলে প্রতি মাসে ২ মিলিয়ন (২০ লাখ) টিকা আনার পরামর্শ দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এক্ষেত্রে স্পুটনিক-ভি ভ্যাকসিন ক্রয়ের ক্ষেত্রে আপাতত ১০ মিলিয়ন (১ কোটি) ডোজ টিকা ক্রয়ের চুক্তি করার বিষয়ে মতামত দেয়। তবে ১০ মিলিয়ন ডোজ সরবরাহের পর এই ভ্যাকসিনের ডোজের সংখ্যা বাড়ানো যেতে পারে বলেও মতামতে উল্লেখ করা হয়।

স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, স্বাস্থ্য অধিদফতরের চিঠির ভিত্তিতে রাশিয়া স্পুটনিক-ভি ভ্যাকসিন ক্রয়ের জন্য প্রস্তাবিত সরবরাহ চুক্তির বিষয়ে গত ৭ মে অর্থ বিভাগের বাজেট অনুবিভাগের মতামত চায় স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ। এর প্রেক্ষিতে রোববার স্বাস্থ্য সেবা বিভাগকে চিঠি দিয়ে মতামত জানায় অর্থ বিভাগ। যা ইতোমধ্যে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিবের কাছে পৌঁছেছে।

অর্থ বিভাগের যুগ্ম সচিব ড. মোহাম্মদ আবু ইউছুফ স্বাক্ষরিত মতামত সংক্রান্ত চিঠিতে বলা হয়, প্রস্তাবিত সাপ্লাই এগ্রিমেন্টটি গভর্ণমেন্ট টু গভর্নমেন্ট (জিটুজি) হিসেবে হবে না, এটি বিজনেজ-টু-গভর্নমেন্ট (বিটুজি) পদ্ধতিতে করা সমীচীন হবে।

বলা হয়, ভ্যাকসিন ক্রয় বাবদ অর্থের মধ্যে অগ্রীম ৫০ শতাংশ ও বাকি ৫০ শতাংশ অর্থ ভ্যাকসিন বুঝে পাওয়ার পর এলসির মাধ্যমে পরিশোধ করা যেতে পারে। যেহেতু সরকার এ ভ্যাকসিন বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করবে না, তাই ক্লজ ৪.১ এ বর্ণিত ০.১ শতাংশ রয়ালটি পরিশোধের বিষয়টি বাদ দেয়া যেতে পারে। তবে ভ্যাকসিনের মূল্য (ক্লজ ২.৬ এ উল্লিখিত) কত হবে তা স্বাস্থ্য সচিবের নেতৃত্বে গঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে চূড়ান্ত করতে পারে।

অর্থ বিভাগের মতামতে আরও বলা হয়, প্রস্তাবিত সরবরাহ চুক্তিটি গভর্নম্যান্ট-টু-গভর্ন্যান্ট নয় মর্মে প্রতীয়মান হয়। এ চুক্তিটি বিজনেজ-টু-গভর্ন্যান্ট এর পদ্ধতিতে সম্পাদন করা সমীচীন হবে। প্রস্তাবিত চুক্তির ক্লজ ২.২ এ বর্ণিত প্লেস অর ডিসপেথ- হযরত শাহ জালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর, ঢাকা হওয়া সমীচীন হবে। এক্ষেত্রে ভ্যাকসিনের মূল্য, পরিবহন ব্যয়, বীমা খরচ ও স্থানীয় শুল্ক করাদি বাংলাদেশ সরকার বহন করবে।

এদিকে রাশিয়ার করোনাভাইরাস ভ্যাকসিন স্পুটনিক-ভি ক্রয়ের বিষয়ে ২৯টি সুপারিশসহ চুক্তির খসড়া চূড়ান্ত করেছে আইন মন্ত্রণালয়। এসব শর্ত অনুযায়ী রাশিয়া টিকা দিতে না পারলে অর্থ ফেরত দেবে। সেইসঙ্গে কোনো জটিলতা হলে দায় হবে দেশটির সরকারের।

এছাড়া টিকা নেয়ার পর কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হলে উৎপাদক প্রতিষ্ঠানের দায়মুক্তির ধারা পর্যালোচনারও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে খসড়াটিতে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় চিঠির প্রেক্ষিতে এমন মতামত দিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়।

রাশিয়ার ভ্যাকসিনের বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক এবিএম খোরশেদ আলম বলেন, রাশিয়ার টিকা স্পুটনিক-ভি এর জন্য কত টাকা খরচ হবে তা এখনও নির্ধারণ করা হয়নি। আমরা আলাপ আলোচনা করছি। ভ্যাকসিনের দাম নির্ধারণ করতে পারলে আমরা অর্থ বরাদ্দের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়কে জানাব।

তিনি বলেন, তবে সেটি এখনও নির্দিষ্ট করা যায়নি যে ভ্যাকসিন বাবদ কত টাকা বরাদ্দ লাগবে। আশা করি খুব দ্রুতই আমরা ভ্যাকসিন আনতে পারব। রাশিয়ার ভ্যাকসিনের পাশাপাশি আমরা চীনের ভ্যাকসিনের বিষয়েও আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। কয়েকদিন আগে চীনের একটি রাষ্ট্রীয় কোম্পানীর সঙ্গে আমরা ভার্চুয়াল বৈঠক করেছি। দ্রুতই এ বিষয়ে রেসপন্স পাবো বলে আশা করছি।

এর আগে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে ৫০ লাখ ডোজ করোনার ভ্যাকসিন ক্রয়ের চুক্তি করেছিল সরকার। কিন্তু ভারত তার পুরোপুরি সরবরাহ করেনি। সেই অভিজ্ঞতাকে সামনে রেখে সার্বিক বিষয় বিচার বিশ্লেষণ করছে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ। ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের সমস্যায় পড়তে না হয় সেদিকে সতর্ক নজর রাখছেন তারা। ভারতের টিকা না পেলে যে আগাম টাকা দেয়া হয়েছে সেটি ফেরত পাওয়া নিয়েও চলছে আলোচনা।

এ বিষয়ে গত বুধবার (৫ মে) অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানিয়েছেন, ভ্যাকসিনের জন্য ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটকে দেয়া আগাম টাকা দেয়া হয়েছিল। সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে ভ্যাকসিন আসবে না সেটাও তো আমরা জানি না। আমরা তাদের সাথে কথাবার্তা বলছি। আমরা যখন চূড়ান্তভাবে জানতে পারব যে ভ্যাকসিন আসবে না, তখন চূড়ান্তভাবে এটি নিয়ে কথা বলতে পারব।

তিনি জানান, ভ্যাকসিন না আসলে অবশ্যই টাকা ফেরত পাব। এভাবে কোনো দেশ কোনো দেশের টাকা মেরে দেয় নাকি? আমরা লিগ্যাল ডকুমেন্টের মাধ্যমে চুক্তি করেছি। এটা তো গোপন কোনো কাজ নয়। কাগজপত্রে লেখালেখি হয়েছে, ডকুমেন্ট্রেশন হয়েছে সুতরাং কন্ট্রাক্টচুয়্যাল ডিভিশন তাদেরও আছে আমাদেরও আছে। আমরা চেষ্টা করছি ভ্যাকসিন আনার জন্য। আমরা অন্যান্য সোর্সেও চেষ্টা করছি ভ্যাকসিনের জন্য।

উল্লেখ্য, গত ২৮ এপ্রিল রাশিয়ার ‘স্পুটনিক-ভি’ ও চীনের ‘সাইনোফার্ম’ থেকে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতি অনুসরণ করে বাংলাদেশে টিকা উৎপাদনের জন্য অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা কমিটি।

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.