আজ: মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪ইং, ৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ৭ই রমজান, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

২১ জুন ২০২১, সোমবার |

kidarkar

আতঙ্ক কেটেছে

ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারের পরেও ইতিবাচক শেয়ারবাজার

রাসেল মাহমুদ: পুঁজিবাজার নিয়ে বিনিয়োগকারীদের আতঙ্ক আর ভয় বেশ পুরোনো। গত এক বছরে সেই আতঙ্ক পুরোপুরি দূর না হলেও বাজারের প্রতি যে বিনিয়োগকারীদের আস্থা তৈরি হয়েছে তার প্রমাণ মেলে লেনদেনে। ৬ হাজার ১২৫ পয়েন্ট সূচক আর দুই হাজার কোটি টাকার লেনদেন আশা জাগানিয়া বলেই মনে করা হচ্ছে।

তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) গত বৃহস্পতিবার ফ্লোর প্রাইস বা দরের প্রান্তসীমা প্রত্যাহার করায় বাজারে নতুন করে ‘চাপা আতঙ্ক’ দেখা দেয়। সেই আতঙ্কও অবশ্য লেনদেনে প্রভাব ফেলতে পারেনি। সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার লেনদেনের শুরুতে বাজার নেতিবাচক থাকলেও দিন শেষ হয় ইতিবাচক প্রবণতায়। আজ সোমবারও বাজারে সেই ধারাবাহিকতা ছিলো।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে জানা গেছে, এদিন প্রধান সূচক বা ডিএসই এক্স ৫৬ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ১২৫ পয়েন্ট হয়েছে। সোয়া তিন বছর পর ডিএসই এক্স ৬ হাজার পয়েন্ট স্পর্শ করার পর তা টিকে থাকবে কিনা তা নিয়ে সংশয় ছিলো।

জানা গেছে, করোনার মহামারিতে পুঁজিবাজারে দরপতন ঠেকাতে ২০২০ সালের মার্চে প্রতিটি কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস বেঁধে দেয়া হয়। চলতি বছরের ৭ এপ্রিল প্রথম ধাপে ৬৬ কোম্পানির, গত ৩ জুন দ্বিতীয় ধাপে ৩০ কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার করে বিএসইসি। গত বৃহস্পতিবার বিএসইসি তৃতীয় পর্যায়ে পুঁজিবাজারের সব কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস বাতিল করে। ফলে রোববার সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে ফ্লোর প্রাইসহীন লেনদেন হয়েছে। ধারণা করা হয়েছিল, কোনো কোম্পানিতে ফ্লোর প্রাইস না থাকায় পুঁজিবাজারে ধাক্কা লাগতে পারে। তবে গত দুই কার্যদিবস ফ্লোর প্রাইসহীন বাজারও স্বাভাবিক ছিলো।

এ বিষয়ে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ গণমাধ্যমে বলেন, ফ্লোর প্রাইসের কারণে বিনিয়োগকারীদের তারল্য এতদিন আটকে ছিল। এখন সেগুলো মুক্ত হয়েছে। যেসব কোম্পানির অনেক বেশি ফ্লোর প্রাইস ধরা হয়েছিল, সেগুলোর কোনো লেনদেন হতো না, এখন হবে।

তিনি বলেন, যারা বেশি দামে শেয়ার কিনেছিল, তাদের জন্য ফ্লোর প্রাইস ভালো ছিল। কিন্তু যারা পুঁজিবাজারে নিয়মিত শেয়ার কেনাবেচা করেন, তারা লেনদেন হওয়া কোম্পানিতেই বিনিয়োগ করেন। ফলে এখন আর কারো তারল্য আটকে থাকবে না। লেনদেনের মাধ্যমে যৌক্তিক দামে শেয়ার কেনাবেচা করা যাবে।

বাজার বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ৩৯ মাসের মধ্যে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স প্রথমবারের মতো ছয় হাজার পয়েন্ট অতিক্রম করে গত গত ৩০ মে। এরপর কখনও ছয় হাজারের নিচে, আবার ছয় হাজার ছাড়িয়েছে। কিন্তু ছয় হাজার পয়েন্টে টিকে থাকা নিয়ে মনস্তাত্ত্বিক লড়া চলে আসছিলো। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারে বিএসইসির আদেশের পর আতঙ্ক তৈরি হয় কি না, এ নিয়েও তৈরি হয় আলোচনা।

বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সোমবার লেনদেনের শুরুতেই সূচক ছিলো ঊর্দ্ধমুখি। এক পর্যায়ে ৯০ শতাংশের মতো কোম্পানির দাম বেড়ে যায়। আর বেলা ১ টাকা ১৩ মিনিটে ৭২ পয়েন্ট বেড়ে যায়। তবে এরপর কিছুটা কমলেও শেষ পর্যন্ত আগের দিনের চেয়ে ৫৬ পয়েন্ট যোগ হয়ে সূচক দাঁড়ায় ৬ হাজার ১২৫ পয়েন্ট যা ২০১৮ সালের ৩০ জানুয়ারির পর সর্বোচ্চ অবস্থান। প্রায় সাড়ে তিন বছর আগের ওই দিনটিতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক উঠেছিল ৬ হাজার ১২৭ পয়েন্টে।

আজ ব্যাংক খাতের শেয়ারে বেশি উত্থান হয়েছে। বস্ত্র, ওষুধ ও রসায়ন, আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের শেয়ার দরও বেড়েছে। বেশিরভাগ মিউচ্যুয়াল ফান্ডের দামও বেড়েছে সামান্য।

অন্যদিকে বীমা, প্রকৌশল, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও বিবিধ খাতের জন্য বাজে দিন গেছে আজ। তবে তথ্য প্রযুক্তি খাতের লেনদেন হয়েছে মিশ্র প্রবণতায়।

বাজার পরিস্থিতি

ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৫৬ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ১২৫ পয়েন্টে। শরিয়াহভিত্তিক কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসইএস ৮.৯৭ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩০৫ পয়েন্টে। বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএস-৩০ সূচক ১৩ দশমিক ৫৯ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২২০ পয়েন্টে। লেনদেন হওয়া কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ২২৪টির, দর কমেছে ১১৯টির। দর পাল্টায়নি ২৯টির। লেনদেন হয়েছে মোট ২ হাজার ৪৩ কোটি টাকা। আগের দিন লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৮৩৫ কোটি টাকা।

চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) প্রধান সূচক সিএএসপিআই আগের দিনের তুলনায় ১৭৮.৭১ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ৭৬২ পয়েন্টে। লেনদেন হয়েছে ৭৯ কোটি টাকা।

১ টি মতামত “ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারের পরেও ইতিবাচক শেয়ারবাজার”

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.