ব্যাংক খাতে ভর করে বড় পতন থেকে রক্ষা
শেয়ারবাজার ডেস্ক: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রধান খাতগুলো যখন দাপিয়ে বেড়াচ্ছে, তখন ব্যাংকের ঘুমিয়ে থাকা নিয়ে কথার শেষ নেই। তবে ইতিহাসের পঞ্চম সর্বোচ্চ লেনদেনের পরের দিন সূচকের বড় পতন ঠেকাল এই খাতই। ব্যাংকের পাশাপাশি আর্থিক খাতের শেয়ারের দর বৃদ্ধিও ভূমিকা রেখেছে এতে।
তবে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের উত্থানেও ঠেকানো গেল না সূচকের পতন। একের পর এক আকর্ষণীয় মুনাফা ঘোষণার পরেও মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলো দর হারানোর বৃত্তে। গত কয়েক দিন ধরে ব্যাপক চাঙা প্রকৌশল এবং ওষুধ ও রসায়ন খাত আলো ছড়াতে পারেনি। বস্ত্র খাতেও দেখা গেছে মিশ্র প্রবণতা। আর বিমা খাতের পতনের বৃত্ত থেকে বের হওয়ার কোনো লক্ষণ নেই।
সব মিলিয়ে পুঁজিবাজারে সপ্তাহের দ্বিতীয় কর্মদিবসে পুঁজিবাজারে দর হারিয়ছে দুইশরও বেশি কোম্পানি। আর বেড়েছে দেড়শর মতো।
কিছুটা কমেছে সূচকও। তবে এত কোম্পানির দরপতনের ভিড়েও মাত্র ১০ পয়েন্ট হারিয়ে সূচকের অবস্থান ধরে রাখা পুঁজিবাজারের সাম্প্রতিক শক্তিমত্তার পরিচয় হিসেবেই দেখা হচ্ছে।
এ নিয়ে টাকা ৬ কর্মদিবসে ২১১ পয়েন্ট সূচক বাড়ার পর সংশোধন দেখল বিনিয়োগকারীরা।
দর সংশোধনের দিন লেনদেন কিছুটা কমলেও তা দুই হাজার ৮০০ কোটি টাকার বেশি, যা গত এক দশকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। আগের দিনই ২০১০ সালের পর সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছিল ২ হাজার ৯৩৯ কোটি টাকা।
গত বছরের জুলাই থেকে পুঁজিবাজার চাঙা হয়ে উঠা আর সেই উত্থান টিকে যাওয়ায় বাজার নিয়ে আগ্রহী হয়ে উঠেছে ব্যক্তিশ্রেণির পাশাপাশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরাও।
করোনার বছরে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় বেশি আয় করে আকর্ষণীয় লভ্যাংশ, চলতি বছর আরও বেশি আয় করায় লভ্যাংশ বৃদ্ধির সম্ভাবনার মধ্যেও ব্যাংক খাত চাঙা হতে পারছিল না। এর মধ্যে কোনো কোনো দিন সবগুলো বা প্রায় সবগুলো দর বাড়লেও পরে সেই বাড়তি দর ধরে রাখতে পারেনি বেশিরভাগ কোম্পানি।
গত ২৭ মে ৩১টি ব্যাংকের মধ্যে সাতটির শেয়ার দর দিনের সর্বোচ্চ সীমায় আর আরও আটটির দর তার কাছাকাছি অবস্থান করছিল। ভাবা হচ্ছিল, অন্যান্য খাতের মতো বুঝি এই খাতও এগিয়ে যাবে। কিন্তু তা আর হয়নি। সেই দিনের দরের তুলনায় অন্তত ২০টি ব্যাংকের দাম এখন কম, যদিও এই কয় দিনে সূচক বেড়েছে ৬০০ পয়েন্টেরও বেশি।
আগের দিন সোমবার বাজারে লেনদেন হয়েছিল তিন হাজার কোটি টাকা ছুঁইছুঁই। এর চেয়ে বেশি লেনদেনের ইতিহাস আছে কেবল চার দিন, সেটিও ১১ বছর আগে ২০১০ সালে ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি চাঙাভাবের সময়।
সেখান থেকে পতনের পর কখনও কখনও ঘুরে দাঁড়ালেও পুঁজিবাজার স্থিতিশীল হতে পারছিল না। তবে দর সংশোধন হলে ইদানীং আর সব খাতে ঢালাওভাবে পতন হয় না। এখন দর সংশোধনের সময়ও কোনো না কোনো খাতের সাপোর্ট দেয়ার বিষয়টি নতুন অনুঘটক হিসেবে দেখা দিয়েছে। আর এই বিষয়টি নিয়েই আশাবাদী হয়ে উঠছেন বিনিয়োগকারীরা।
যেমন আগের দিন প্রধান খাতগুলোর মধ্যে প্রকৌশল, ওষুধ, খাদ্য ও আনুষঙ্গিতক, বিদ্যুৎ-জ্বালানি, বস্ত্র খাতে চাঙাভাবে ইতিহাসের রেকর্ড ছুঁইছুঁই লেনদেন হলেও ব্যাংকিং খাতে দরপতন হয় দুটি ইস্যুতে।
ব্যাংকে অলস টাকা ‘বাংলাদেশ ব্যাংক বিলে’ বিনিয়োগের সুযোগ রেখে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিলামের আয়োজন করেছে। আর বেশিরভাগ গণমাধ্যমে খবরটি এভাবে এসেছে যে, ব্যাংক থেকে অতিরিক্ত টাকা তুলে নেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এই খবরের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংক আমানতের সুদহার মূল্যস্ফীতির নিচে থাকতে পারবে না বলে একটি সার্কুলারে জানিয়ে দেয়। তবে এখন গড় সুদহার ৪ শতাংশের কিছু বেশি।
বিনিয়োগকারীরা এই দুই সংবাদে আতঙ্কিত হয় এই ভেবে যে, ব্যাংকের টাকা নিয়ে নেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক, আর আমানতের সুদহার বাড়লে ব্যাংকের মুনাফা কমবে।
কিন্তু পরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুনাফায় দেখা যায় ৭ দিনের বিলে ব্যাংকগুলো ০.৫৪ শতাংশ আর ১৪ দিনের বিলে ০.৭৫ শতাংশ সুদ পাবে। সব মিলিয়ে প্রথম দিন বিনিয়োগ হয়েছে ২ হাজার ৬০০ কোটি টাকার বেশি। এ থেকে ব্যাংকগুলোর আয় হবে ৪৭ লাখ টাকা।
এই অর্থ ব্যাংকে অলস পড়েছিল আর এর বিপরীতে আয় ছিল শূন্য। আর এই টাকাটা ব্যাংকের কোষাগার আসলে আরও স্ফীত করবে।
আবার আমানতের সুদহার কমার পাশাপাশি ঋণের সুদহার এখন বেঁধে দেয়া সর্বোচ্চ সীমা ৯ শতাংশের অনেক নিচে। এখন বড় বিনিয়োগকালীদেরকে ৬ থেকে ৭ শতাংশ সুদেও টাকা দেয়া হয়। আমানতের সুদহার যদি বাড়ে, তাহলে সেটি পুষিয়ে নিতে ঋণের সুদহার বাড়ানোরও সুযোগ আছে।