আজ: বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ইং, ১১ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৩ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

১৮ অগাস্ট ২০২১, বুধবার |

kidarkar

তালিকাভুক্ত ১০ ব্যাংকে নগদ অর্থের টান

শেয়ারবাজার ডেস্ক: সার্বিক ব্যাংক খাতে বিপুল পরিমাণ অলস অর্থ পড়ে থাকলেও শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ১০টি ব্যাংকের নগদ অর্থে টান দেখা দিয়েছে। এই ১০ ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে এবি ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, এনআরবিসি ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক এবং ইউসিবি। এ ব্যাংকগুলোতে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা তারল্য সংকট রয়েছে।

ব্যবস্থাপনা পর্ষদের অদক্ষতা এবং ঋণ বিতরণের অনিয়মের কারণে বর্তমান পরিস্থিতিতে ব্যাংকগুলোতে নগদ অর্থের টান পড়ার অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, মহামারি করোনাভাইরাসের প্রকোপে বর্তমানে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এক ধরনের স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। ফলে ব্যাংকগুলো আমানতের অর্থ ঠিকমতো বিনিয়োগ করতে পারছে না। এতে সার্বিক ব্যাংক খাতে বিপুল পরিমাণ অলস অর্থ পড়ে আছে। এ পরিস্থিতিতে কিছু ব্যাংকের তারল্য সংকট দেখা দেয়া ভালো লক্ষণ নয়।

যেখানে সার্বিক ব্যাংক খাতে বিপুল অলস অর্থ রয়েছে সেখানে কিছু ব্যাংকের তারল্য সংকট হওয়ার মানে ব্যাংকগুলোতে ম্যানেজমেন্টের ব্যর্থতা আছে। যে ব্যাংকগুলোতে তারল্য সংকট আছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের উচিত সেগুলোকে ভালো করে তদন্ত করা। কী কারণে এমনটা হচ্ছে, তা বের করা উচিত

তারা আরও বলেন, যখন সার্বিক ব্যাংক খাতে বিপুল অলস অর্থ পড়ে আছে, সে সময়ে কিছু ব্যাংক কী কারণে তারল্য সংকটে রয়েছে তা ক্ষতিয়ে দেখা উচিত। এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে পদক্ষেপ নিতে হবে। সার্বিক বিষয় ক্ষতিয়ে দেখে সমস্যা সমাধানে দ্রুত উদ্যোগ নিতে হবে। তা না হলে সামনে পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে।

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ব্যাংক খাতে উদ্বৃত্ত তারল্য ২ লাখ ৩১ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে একবারে অলস পড়ে আছে ৬২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। বিপুল এ অলস অর্থের একটা গতি করতে সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংক ‘বাংলাদেশ বিল’র মাধ্যমে নামমাত্র সুদে ব্যাংকগুলো থেকে অলস অর্থ তুলে নেয়ার পদক্ষেপ নিয়েছে। এরই মধ্যে কিছু অলস অর্থ তুলেও নেয়া হয়েছে।

সার্বিক ব্যাংক খাতে এমন অলস টাকা পড়ে থাকলেও এবি ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, এনআরবিসি ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক এবং ইউসিবি’র অপারেটিং ক্যাশ ফ্লো ঋণাত্মক হয়ে পড়েছে। ব্যাংকগুলোতে ঋণাত্মক ক্যাশ ফ্লো আছে ৪৯৮৩ কোটি ৮৮ লাখ ৫ হাজার টাকা। ব্যাংকগুলোর চলতি বছরের জানুয়ারি-জুন এই ছয় মাসের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

এর মধ্যে এনআরবিসি ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক এবং ট্রাস্ট ব্যাংকের ক্যাশ ফ্লো গত বছরের প্রথম ছয় মাসে পজেটিভ ছিল। বাকি সাতটি ব্যাংকের ক্যাশ ফ্লো গত বছরও ঋণাত্মক ছিল। অপারেটিং ক্যাশ ফ্লো ঋণাত্মক হওয়ার অর্থ তারল্য সংকট দেখা দেয়া। যে প্রতিষ্ঠানের ক্যাশ ফ্লো যত বেশি ঋণাত্মক, ওই প্রতিষ্ঠানের তারল্য সংকট ততো বেশি। একটি প্রতিষ্ঠানের অপারেটিং ক্যাশ ফ্লো ঋণাত্মক হয়ে পড়লে ওই প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা পরিচালনায় নানামুখী সমস্যা দেখা দেয়। সময়মতো পাওনাদারের পাওনা পরিশোধ করা কষ্টকর হয়ে পড়ে।

ক্যাশ ফ্লো ঋণাত্মক অবস্থায় থাকা ব্যাংকগুলোর মধ্যে সব থেকে খারাপ অবস্থায় রয়েছে ইস্টার্ন ব্যাংক। চলতি বছরের জানুয়ারি-জুন সময়ে ব্যাংকটির শেয়ারপ্রতি অপারেটিং ক্যাশ ফ্লো দাঁড়িয়েছে ঋণাত্মক ৯ টাকা ২৫ পয়সা। এতে প্রতিষ্ঠানটিতে মোট অপারেটিং ক্যাশ ফ্লো রয়েছে ঋণাত্মক ৮৮২ কোটি ৩২ লাখ ৪৬ টাকা। গত বছরের প্রথম ছয় মাসেও ব্যাংকটির ক্যাশ ফ্লো মোটা অঙ্কে ঋণাত্মক ছিল। ২০২০ সালের জানুয়ারি-জুন সময়ে ব্যাংকটির শেয়ারপ্রতি ক্যাশ ফ্লো ছিল ঋণাত্মক ১২ টাকা ১০ পয়সা।

দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে এবি ব্যাংক। প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারপ্রতি ক্যাশ ফ্লো ঋণাত্মক ৮ টাকা ৭৩ পয়সা। এতে মোট ঋণাত্মক ক্যাশ ফ্লো হয়েছে ৬৯৪ কোটি ৯৪ লাখ এক হাজার টাকা। গত বছর ব্যাংকটির শেয়ারপ্রতি ঋণাত্মক ক্যাশ ফ্লো ছিল ৩৩ টাকা ৩৮ পয়সা। এ হিসেবে প্রতিষ্ঠানটির ঋণাত্মক ক্যাশ ফ্লো কমে চার ভাগের এক ভাগে নেমে এসেছে।

অপারেটিং ক্যাশ ফ্লোর এমন উন্নতি হওয়ার কারণ হিসেবে ব্যাংকটির কর্তৃপক্ষ গ্রাহকদের কাছ থেকে বড় অঙ্কের আমানত পাওয়ার কথা জানিয়েছে। ব্যাংকটির দেয়া তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) গ্রাহকের আমানত ১ হাজার ৭৭০ কোটি টাকা বেড়েছে।

শেয়ারপ্রতি ৮ টাকা ১৫ পয়সা ক্যাশ ফ্লো ঋণাত্মক হওয়ার মাধ্যমে পরের স্থানে রয়েছে ইউসিবি। প্রতিষ্ঠানটির ক্যাশ ফ্লো মোট ঋণাত্মক হওয়ার পরিমাণ ১ হাজার ৪১ কোটি ৮৯ লাখ ৩৫ হাজার টাকা।

অবশ্য শেয়ার সংখ্যা বেশি হওয়ায় সব থেকে বেশি ঋণাত্মক ক্যাশ ফ্লো রয়েছে এক্সিম ব্যাংকের। শেয়ারপ্রতি ৭ টাকা ৪৬ পয়সা হিসেবে ব্যাংকটির মোট ঋণাত্মক ক্যাশ ফ্লো দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৫৩ কোটি ৫৩ লাখ ৯২ হাজার টাকা। গত বছরের প্রথম ছয় মাসেও ব্যাংকটির ক্যাশ ফ্লো বড় অঙ্কে ঋণাত্মক ছিল। ২০২০ সালের জানুয়ারি-জুন সময়ে ব্যাংকটির শেয়ারপ্রতি ঋণাত্মক ক্যাশ ফ্লো ছিল ১৪ টাকা ৫২ পয়সা।

এছাড়া ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ১৭৯ কোটি ৩১ লাখ ৫৬ হাজার টাকা, মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ৪৪ কোটি ৩১ লাখ ৭৯ হাজার টাকা, এনআরবিসি ব্যাংকের ৫৪ কোটি ৭৯ লাখ ৬৩ হাজার টাকা, প্রিমিয়ার ব্যাংকের ৫৭১ কোটি ৬০ লাখ ২৭ হাজার টাকা, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের ২৭৩ কোটি ৬২ লাখ ৯৪ হাজার টাকা এবং ট্রাস্ট ব্যাংকের ১৮৭ কোটি ৫২ লাখ ৭ হাজার টাকা ক্যাশ ফ্লো ঋণাত্মক রয়েছে।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, সার্বিকভাবে ব্যাংক খাতে অতি তারল্য আছে। যে কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক অতি তারল্য তুলে নেয়ার চেষ্টা করছে। এখন বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধিও খুব কম। সে কারণে ব্যাংকগুলোর আয়-উপার্জন কম। সুতরাং বাংলাদেশ ব্যাংক কম সুদ হারেও অতিরিক্ত তারল্য তুলে নিলে ব্যাংকগুলোর সুবিধা হবে।

তিনি বলেন, যেখানে সার্বিক ব্যাংক খাতে বিপুল অলস অর্থ রয়েছে সেখানে কিছু ব্যাংকের তারল্য সংকট হওয়ার মানে ব্যাংকগুলোতে ম্যানেজমেন্টের (ব্যবস্থাপনা) ব্যর্থতা আছে। যে ব্যাংকগুলোতে তারল্য সংকট আছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের উচিত সেগুলোকে ভালো করে তদন্ত করা। কী কারণে এমনটা হচ্ছে, তা বের করা উচিত।

তিনি আরও বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে তারল্য সংকটে পড়ার সব থেকে বড় কারণ হতে পারে তারা আগে যে ঋণ দিয়েছে সেগুলো খেলাপি হয়ে গেছে বা বিতরণ করা ঋণ ঠিকমতো আদায় হচ্ছে না। আবার পুনঃতফসিল করা ঋণও ঠিকমতো পরিশোধ হচ্ছে না। এ সব সমস্যা হচ্ছে। এ সমস্যাগুলো কীভাবে দূর করা যায়, তা বাংলাদেশ ব্যাংকের দেখা উচিত।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই) অব বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ও ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, যে ব্যাংকগুলো এখন তারল্য সংকটে আছে তারা ঠিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে না। তাদের ওপর মানুষের আস্থা কম। এই বাজারে তারল্য সংকট থাকার কথা নয়। এটি ব্যাংকগুলোর এক ধরনের সংকটেরও ইঙ্গিত দিচ্ছে। এবি ব্যাংক সংকটের মধ্যে পড়ে আছে। স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক বিভিন্ন কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত।

অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সভাপতি ও ইবিএল’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আলী রেজা ইফতেখার বলেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর আমাদের ১৭৭ কোটি টাকা বেশি কালেকশন হয়েছে। আমাদের ব্যাংকের ক্যাশ ফ্লো ঋণাত্মক হওয়ার কারণ আমাদের ঋণের যে গ্রোথ হয়েছে তার থেকে আমানতের গ্রোথ কম হয়েছে। সূত্র: জাগো নিউজ

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.