রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হতে চায় পদ্মা ব্যাংক
শেয়ারবাজার রিপোট: আর্থিক কেলেঙ্কারির জন্য বিতর্কিত ফারমার্স ব্যাংক থেকে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে নতুন নামে গড়ে ওঠা নতুন প্রজন্মের পদ্মা ব্যাংক এখন রাষ্ট্রায়ত্ব যেকোনো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হতে চাইছে।
পদ্মা ব্যাংক কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে (এফআইডি) একীভূতকরণের জন্য একটি প্রস্তাব জমা দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
প্রস্তাবে পদ্মা ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সাবেক ফারমার্স ব্যাংকের বেশ কিছু আর্থিক কেলেঙ্কারির সংকট কাটিয়ে ওঠার পর পদ্মা ব্যাংক এখন ভালো ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে।
এতে আরও উল্লেখ করা হয়, এটি এখন আর্থিকভাবে শক্তিশালী ব্যাংক। যদি এ ব্যাংক অন্য কোনো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হয়, তাহলে এটি আরও শক্তিশালী ব্যাংক হয়ে উঠতে পারে।
যদি পদ্মা ব্যাংক অন্য কোনো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হয়, তাহলে এটি হবে এ ধরনের দ্বিতীয় ঘটনা। প্রায় এক দশক আগে বাংলাদেশ শিল্প ঋণ সংস্থাকে বিডিবিএল-এর সঙ্গে একীভূত করা হয়েছিল। এ ছাড়া, সমস্যা জর্জরিত বেসিক ব্যাংক বিডিবিএল-এর সঙ্গে একীভূত হতে পারে বলেও শোনা যাচ্ছে।
পদ্মা ব্যাংকের চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ সরাফাতও বিষয়টি স্বীকার করেছেন।
তিনি বলেন, এটি (একীভূতকরণ) করতে সময় যাবে। কারণ এ সংক্রান্ত প্রাসঙ্গিক আইন এখনো প্রণয়ন করা হয়নি।
তিনি বলেন, তৎকালীন ফারমার্স ব্যাংককে উদ্ধারের জন্য যে রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংক অংশীদার হিসেবে ১ হাজার ২১৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছিল সেই যেকোনো ব্যাংকের সঙ্গে পদ্মা ব্যাংক একীভূত হোক। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান বিডিবিএলও পদ্মা ব্যাংকের পছন্দের তালিকায় রয়েছে।
চারটি রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংক— সোনালী, জনতা, অগ্রণী এবং রূপালী এবং একটি নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ তৎকালীন ফারমার্স ব্যাংককে উদ্ধারের জন্য প্রয়োজনীয় ইক্যুইটি ফান্ড বিনিয়োগ করেছিল। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এই পাঁচ প্রতিষ্ঠান এখন পদ্মা ব্যাংকের দুই-তৃতীয়াংশ অংশীদার।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকে একীভূতকরণের প্রস্তাব পাঠানোর আগে আমরা অর্থমন্ত্রীর সম্মতি নেব।
ওই কর্মকর্তা বলেন, সাধারণত সরকার বা কেন্দ্রীয় ব্যাংক আর্থিকভাবে দুর্বল ব্যাংককে এর অবস্থার মূল্যায়ন করার পর আর্থিকভাবে শক্তিশালী ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হতে বলে। কিন্তু পদ্মা ব্যাংক নিজেই একীভূত হওয়ার প্রস্তাব নিয়ে আসায় ‘বিষয়টি এখানে ভিন্ন’ বলে তিনি উল্লেখ করেন।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা আরও বলেছেন, নতুন ব্যাংকিং কোম্পানি আইন ২০২১-এ একটি ব্যাংকের একীভূতকরণ এবং অধিগ্রহণের বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ আইন এখন সংসদের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
২০০৭ সালে জারি করা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের একীভূতকরণ সংক্রান্ত খসড়া নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, একীভূত হতে ইচ্ছুক দুটি ব্যাংক তাদের সম্পদের মূল্য এবং দায়, লেনদেনের মূল্য এবং অন্যান্য বৈধ নথির মূল্যায়নসহ বাংলাদেশ ব্যাংকে তাদের একীভূতকরণের প্রস্তাব জমা দেবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদনের পর, দুই ব্যাংককে তাদের একীভূতকরণের জন্য হাইকোর্টে একটি আবেদন জমা দিতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ২০২০ সাল পর্যন্ত, পদ্মা ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ (এনপিএল) ছিল ৩ হাজার ৪৫৫ কোটি টাকা, যা এর মোট ঋণের ৬১ দশমিক ৬০ শতাংশ। এক বছর আগে এর পরিমাণ ছিল ৭২ দশমিক ৩ শতাংশ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিষেধাজ্ঞার কারণে পদ্মা ব্যাংক ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে সাড়ে তিন বছরের জন্য ঋণ দিতে পারেনি। এরপরেও পদ্মা ব্যাংক ২০২০ সালে ১৫১ কোটি টাকা ক্ষতি কমিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১-এর প্রথম প্রান্তিকের শেষে, পদ্মা ব্যাংক ৩৮২ কোটি টাকার মূলধন ঘাটতির সম্মুখীন হয়েছিল, যা আগের প্রান্তিকে এর পরিমাণ ছিল ৩১০ কোটি টাকা।