মোনার্ক হোল্ডিংসকে দেশসেরা ট্রেকে পরিণত করতে চান সাদিয়া হাসান

শেয়ারবাজার ডেস্ক: কাজী সাদিয়া হাসান আইন বিষয়ে অধ্যয়নকালেই যুক্ত হন শেয়ার ব্যবসায়। এরই মধ্যে শেয়ারবাজারে পার করেছেন নয় বছর। সম্প্রতি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) যে ৫২টি ট্রেডিং রাইট এনটাইটেলমেন্ট সার্টিফিকেট (ট্রেক) দিয়েছে, তার একটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এই নারী উদ্যোক্তা। এর মাধ্যমে ইতিহাসেরও অংশ হয়ে গেছেন সাদিয়া। দেশের মধ্যে কোনো ট্রেকের এমডি হওয়া তিনিই প্রথম নারী।
ট্রেক হলো শেয়ারবাজারে লেনদেনের মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠান। যার মাধ্যমে বিনিয়োগকারীরা শেয়ারের লেনদেন করেন। এ হিসেবে ট্রাক অনেকটাই ব্রোকার হাউজের মতো। তবে ট্রেকের মালিকরা ব্রোকারেজ হাউজের মতো ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের শেয়ার পাবেন না।
কাজী সাদিয়া হাসান যে ট্রেকের এমডি হিসেবে রয়েছেন তার নাম মোনার্ক হোল্ডিংস। এই নারী উদ্যোক্তার পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে জড়িত বিশ্বসেরা ক্রিকেট অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। প্রথম নারী হিসেবে কোনো ট্রেকের এমডি হওয়ার গৌরব অর্জন করা সাদিয়ার স্বপ্ন এখন মোনার্ক হোল্ডিংসকে দেশসেরা ট্রেকে পরিণত করা।
সম্প্রতি সংবাদকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে এমন স্বপ্নের কথা জানিয়েছেন সাদিয়া। পাশাপাশি শেয়ার ব্যবসার সঙ্গে জড়ানোর পেছনের কাহিনি ও বর্তমান বাজার পরিস্থিতি নিয়েও কথা বলেছেন।
২০১১ সালে বাণিজ্য বিভাগ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে আইন বিষয়ে স্নাতকে ভর্তি হন সাদিয়া। ভর্তি হওয়ার পর ২০১৩ সালে জড়িয়ে পড়েন শেয়ার ব্যবসায়। একদিকে ব্যবসা অন্যদিকে পড়াশোনা- দুটিই সামলেছেন সমানতালে। স্নাতক সম্পন্ন করার পর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিও অর্জন করেন তিনি।
অপরদিকে সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে শেয়ার ব্যবসার মাধ্যমে বড় করেছেন নিজের পোর্টফোলিও। নিজের পোর্টফোলিও বড় করেই থেমে থাকেননি এই সাহসী নারী। যার ফলস্বরূপ একজন সাধারণ বিনিয়োগকারী থেকে এখন তিনি উদ্যোক্তায় পরিণত হয়েছেন। ডিএসইর পাশাপাশি চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) থেকেও ট্রেকের সনদ পেয়েছে সাদিয়ার প্রতিষ্ঠান মোনার্ক হোল্ডিংস।
অন্যের প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে শেয়ার লেনদেন করা এই নারী উদ্যোক্তা এখন স্বপ্ন দেখছেন ভবিষ্যতে তার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে হাজার হাজার বিনিয়োগকারী শেয়ার লেনদেন করবেন। এজন্য ট্রেকের কার্যক্রমে শুরু করতে সব প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
এ বিষয়ে সাদিয়া বলেন, আমরা ডিএসই ও সিএসই থেকে ট্রেকের সনদ পেয়েছি। এখন আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করা বাকি। এ লক্ষ্য নিয়েই কাজ করে যাচ্ছি। ইচ্ছা আছে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে ট্রেকের কার্যক্রম শুরু করা।
শেয়ার ব্যবসায় কীভাবে জড়ালেন- জানতে চাইলে সাদিয়া বলেন, আমি শেয়ার ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়েছি ২০১৩ সালে। সেসময় আমি স্নাতকের ছাত্রী। আমার স্বামী মো. আবুল খায়ের হিরো বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের সমবায় ক্যাডারের সদস্য। তিনি নিয়মিত শেয়ারবাজারের খবর রাখতেন। তার কাছ থেকেই মূলত শেয়ার ব্যবসার অনুপ্রেরণা পেয়েছি। তার পরামর্শ ও দুজনের বিশ্লেষণের মাধ্যমে ব্যবসা করে সফলতা পেয়েছি।
তিনি বলেন, শেয়ার ব্যবসায় জড়ানোর পর নিজের একটা ব্রোকারেজ হাউস করার স্বপ্ন দেখতাম। তাই ডিএসইর ট্রেক ইস্যু করার সংবাদ পেয়েই লাইসেন্সের জন্য আবেদন করি। ডিএসই যাচাই-বাছাই করে যোগ্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে আমাদের লাইসেন্স দিয়েছে। আমরা সিএসই থেকেও লাইসেন্স পেয়েছি।
সাদিয়া বলেন, আমি সৌভাগ্যবান, কারণ আমাদের ট্রেকের সঙ্গে বিশ্বসেরা ক্রিকেট অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান আছেন। এখন আমাদের একটাই লক্ষ্য, মোনার্ক হোল্ডিংসকে সাফল্যের চূড়ায় নিয়ে যাওয়া।
দেশে আপনিই প্রথম নারী যিনি কোনো ট্রেকের এমডি হয়েছেন। এ বিষয়টিকে আপনি কীভাবে দেখছেন? জবাবে সাদিয়া বলেন, এটি অবশ্যই গৌরবের ও আনন্দের বিষয়। এখন আমার একটাই স্বপ্ন, মোনার্ক হোল্ডিংসকে দেশসেরা ট্রেকে পরিণত করা। তাহলেই আমার পরিশ্রম সফল হবে।
বর্তমান শেয়ারবাজার পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে সাদিয়া বলেন, গত কয়েক বছরের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি বর্তমান শেয়ারবাজার বিনিয়োগের জন্য যথেষ্ট উপযুক্ত এবং আগের থেকে শেয়ারবাজারের ভিত অনেক শক্তিশালী। এই বাজারে বুদ্ধি করে বিনিয়োগ করতে পারলে ভালো মুনাফা করা সম্ভাব।
‘বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) বর্তমান নেতৃত্ব শেয়ারবাজারকে গতিশীল করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। যার সুফলও পাওয়া যাচ্ছে। একসময় ডিএসইতে দৈনিক ২০০ থেকে ৩০০ কোটি টাকার লেনদেন হতো, এখন নিয়মিতই দুই হাজার কোটি টাকার ওপরে লেনদেন হচ্ছে। এর মাধ্যমে সহজেই বোঝা যায় শেয়ারবাজারের ওপর এখন বিনিয়োগকারীদের আস্থা বেড়ে গেছে। বিএসইসি বর্তমান নেতৃত্ব বন্ড মার্কেট শক্তিশালী করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। আমি মনে করি শেয়ারবাজারের মাধ্যমে বন্ডের লেনদেন শুরু করা গেলে এই বাজার আরও অনেক বড় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’
এই উদ্যোক্তা আরও বলেন, বর্তমান শেয়ারবাজার সবদিকে থেকেই বিনিয়োগের জন্য উপযুক্ত। এখন ব্যাংকের সুদের হার বেশ কম। সরকার সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হারও কমিয়েছে। ব্যাংকে টাকা রেখে এখন যে মুনাফা পাওয়া যায়, একটু বুদ্ধি খাটিয়ে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করতে পারলে তার চেয়ে ভালো মুনাফা পাওয়া সম্ভব। তবে বিনিয়োগকারীদের মনে রাখতে হবে শেয়ারবাজার ঝুঁকিপূর্ণ। তাই গুজবে বিনিয়োগ না করে, তথ্যনির্ভর বিনিয়োগ করতে হবে।
নারী হিসেবে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করতে গিয়ে কী ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছেন- জানতে চাইলে সাদিয়া বলেন, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করতে গিয়ে আমি কোনো ধরনের সমস্যার মধ্যে পড়িনি। সবার কাছ থেকে সহযোগিতা পেয়েছি। আমার কাছে মনে হয়েছে আমাদের শেয়ারবাজারে নারীরা সহজেই বিনিয়োগ করতে পারেন। তবে বারবার একটা কথাই বলবো- শেয়ার ব্যবসায় সফল হতে বুদ্ধি খাটাতে হবে এবং তথ্যনির্ভর বিনিয়োগ করতে হবে।
নারীরা পারে না এমন কিছু নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমি মনে করি দৃঢ় ইচ্ছাশক্তি ও ধৈর্য থাকলে যে কোনো কাজে সফলতা পাওয়া সম্ভব। দেখেন, আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী নারী, জাতীয় সংসদের স্পিকার নারী, সংসদ উপনেতা নারী, বিরোধীদলের প্রধান নারী। এখন অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পদ সামলাচ্ছেন নারীরা। সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিমান বাহিনী, মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন অনেক নারী এবং তারা সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন। সুতরাং, আমাদের দেশের নারীরা এখন পিছিয়ে আছেন, একথা বলা যাবে না।
তিনি আরও বলেন, আমার লাভা ইলেকট্রোড ইন্ডাস্ট্রিজ লি. নামে ওয়্যার ও অক্সিজেন তৈরির কারখানা রয়েছে। মানিকগঞ্জের সিংগাইরে অবস্থিত এ কারখানায় অনেক লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়াও মোনার্ক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট নামে একটি অত্যাধুনিক হোটেল কাম রিসোর্ট তৈরির কাজে হাত দিয়েছি। দেশ আইডিয়াল ট্রাস্ট কো-অপারেটিভ সোসাইটি নামে সমবায় প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছি। আমি এটির ট্রেজারারের দায়িত্ব পালন করছি। আমাদের সমবায় প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেও শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করেছি এবং লাভবান হয়েছি।