স্টাইল ক্রাফটের কারখানা ও অফিস বন্ধ; বকেয়া বেতন আদায়ের দাবিতে শ্রমিকদের বিক্ষোভ
শেয়ারবাজার রিপোর্ট: শ্রমিকদের বেতন-ভাতা দিতে না পেরে কারখানা ও অফিস বন্ধ করে রেখেছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বস্ত্রখাতের স্টাইলক্রাফট লিমিটেড। গেল ঈদ-উল-আযহার আগ থেকে কোম্পানির উৎপাদন বন্ধ থাকলেও এ বিষয়ে স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের কোন তথ্য জানায়নি স্টাইলক্রাফট। এদিকে বেতন-ভাতা না পেয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন দপ্তর দপ্তরে ঘুরেও কোন সুরাহা পাচ্ছেন না কোম্পানির শ্রমিক-কর্মচারীরা।
যে কারণে বৃহস্পতিবার (৪ নভেম্বর) দুপুরে বিজয়নগর শ্রমভবনের সামনে থেকে একটি মিছিল নিয়ে পল্টন মোর ঘুরে প্রেস ক্লাবের সামনের রাস্তা হয়ে গণভবনের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন শ্রমিকরা। এসময় পুলিশ বাধা দিলে প্রেস ক্লাবের সামনে একটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন তারা। সেখানে মিছিলের সমাপ্তি ঘোষণা করে আবার শ্রমভবনের সামনে অবস্থান নেন শ্রমিকরা। পরে একটি প্রতিনিধি দল স্মারকলিপি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যায়।
কোম্পানির শ্রমিকরা জানান, ১০ মাস ধরে স্টাফরা বেতন পান না। শ্রমিকদের ৫ বছরের ছুটির টাকা দেয়নি। স্টাফদের ৩ ঈদের বোনাস ও শ্রমিকদের ২ ঈদের বোনাস দেন নাই। মাতৃকালীন ভাতা দেয় না ২০১৭ সাল থেকে। যারা চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন তাদের ভাতা দেয়া বন্ধ।
স্মারকলিপিতে স্বাক্ষরকারী স্টাইল ক্রাফট লিমিটেডের শ্রমিক নেতা জানান, আমরা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে স্মারকলিপি দিয়েছি। আমাদের দাবি-দাওয়া আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেই যাবো। আমরা খালি হাতে ফেরত যাবো না। কোনো আশ্বাস নয়, আমরা বকেয়া বেতন চাই।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, আমরা গাজীপুরে অবস্থিত স্টাইল ক্রাফট লিমিটেড এবং ইয়াং ওয়ান লিমিটেড কারখানার শ্রমিক। আমরা কারখানার ৪ হাজার ২৪৩ জন শ্রমিক-কর্মচারী প্রাপ্য মজুরি বঞ্চিত হয়ে অনাহারে-অর্ধাহারে মানবেতর জীবনযাপন করছি। বর্তমানে নিরুপায় হয়ে গত দশ দিন ধরে ঢাকার শ্রম ভবনের সামনে লাগাতার অবস্থান করতে বাধ্য হচ্ছি।
স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়, মালিকপক্ষ গত ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে নানাভাবে বেতন-ভাতা এবং ঈদ বোনাস না দিয়ে আমাদের বঞ্চিত করেছে। বর্তমানে কারখানার শ্রমিকদের ছয় মাসের এবং কর্মচারীদের নয় মাসের বেতন বকেয়া আছে। মালিকপক্ষ বেআইনিভাবে কারখানা বন্ধ করে দিয়ে শ্রমিক ও কর্মচারীদের বিপুল অঙ্কের আইনগত পাওনা পরিশোধ করছে না। গত ছয় মাসের বেশি সময় ধরে আমরা বিভিন্ন পর্যায়ের সরকারি দপ্তর এবং মালিক সমিতির দ্বারে দ্বারে ঘুরেও আমাদের সংকটের সুরাহা হয়নি। এ সময়কালে রাষ্ট্রের উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গের উদ্যোগে কয়েকবার শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধের বিষয়ে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। কিন্তু মালিক কখনোই আমাদের কোনো দাবি মেনে নেয়নি। এমনকি গত ৫ সেপ্টেম্বর শ্রম প্রতিমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় সম্পাদিত ত্রিপক্ষীয় চুক্তিও বাস্তবায়ন করেনি।
স্মারকলিপিতে বকেয়া বেতন আদায়ের দাবি জানিয়ে বলা হয়েছে, চুক্তি অবিলম্বে বাস্তবায়নের মাধ্যমে শ্রমিকদের সব পাওনা পরিশোধ করতে হবে। একইসঙ্গে বারবার চুক্তি ভঙ্গ করে শ্রমিকদের সীমাহীন হয়রানি করায় মালিক এবং দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। প্রয়োজনে কোম্পানির সব সম্পত্তি অধিগ্রহণ করে শ্রমিক-কর্মচারীদের ছয় মাসের বকেয়া বেতন এবং আইনানুগ সব পাওনা নিষ্পত্তি করতে হবে। উপরোক্ত অবস্থা বিবেচনায়, শ্রমিকদের সব পাওনা পরিশোধের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চান তারা।
এদিকে এ ব্যাপারে স্টাইলক্রাফটের ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাইলে কাউকে পাওয়া যায়নি।