আজ: শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ইং, ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৮ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

১৫ নভেম্বর ২০২১, সোমবার |

kidarkar

ফের খেলাপিতেই ঝুঁকছে সোনালী ব্যাংক: মোট খেলাপির ৩৮ শতাংশই ১০ শাখাতে

এ জেড ভূঁইয়া আনাস: দেশের সবচেয়ে বড় রাষ্ট্রায়ত্ত্ব বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান সোনালী ব্যাংক বেপরোয়া খেলাপি ঋণের কারণে বারবারই বিতর্কিত। বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য ও দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নেয়ার কথা থাকলেও ব্যাংকটির সেবার পরিসীমা শহরের মধ্যেই সীমিত হয়ে পড়ছে। এতে ফের বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে ব্যাংকটির ঋণ বিতরণ ব্যবস্থাপনা। ব্যাংকটির মোট খেলাপির ৩৮ শতাংশই মাত্র ১০টি শাখার ‘অবদান’। বিশ্লেষকরা বলছেন, সুশাসনের অভাবেই ব্যাংকের কর্মকর্তারা এসব অনিয়মে সহযোগিতা করছেন।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, সোনালী ব্যাংকের শীর্ষ ২০ খেলাপির সবাই আলোচিত শাখাগুলোর গ্রাহক, যাদের সমন্বিত খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৪ হাজার ৮৩ কোটি টাকা। সুতরাং সোনালী ব্যাংকের মোট খেলাপির ৩৮ শতাংশ মাত্র ১০টি শাখার ‘অবদান’।

এই শাখাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে আছে রমনা কর্পোরেট শাখা, যার বিতরণকৃত ৯২৪ কোটি ৬৯ লাখ টাকার মধ্যে খেলাপি হয়ে পড়েছে ৬৬৯ কোটি ৬৬ লাখ। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সোনালী ব্যাংকের শীর্ষ ২০ ঋণ খেলাপির তালিকায় থাকা মেসার্স ফেয়ার ট্রেড ফেব্রিক্স, মেসার্স ফেয়ার এক্সপো এবং মেসার্স সুমি’স সোয়েটার লি. রমনা কর্পোরেট শাখারই গ্রাহক।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ব্যবস্থাপক (ম্যানেজার) বলেন, এসব ঋণ ২০০৩ সালে বিতরণ করা হয়েছে। অনেক আগের বোঝা এখনও বয়ে বেড়াচ্ছে এই শাখা। খেলাপি ঋণ বেশি হওয়ার কারণে রমনা শাখার অনেক বদনাম রয়েছে। তবে ওই সময়ের পরে আর কোনো খারাপ ঋণ বিতরণ হয়নি। ঋণগুলো আদায়ে মামলা করা হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্নভাবে খেলাপি আদায়ের চেষ্টা চলছে। ভবিষ্যতে শাখার উন্নতিতে আমরা আশাবাদী।

ঋণ খেলাপির দিক দিয়ে রমনা কর্পোরেট শাখার পরের অবস্থান চট্টগ্রাম জিএম অফিসের। শাখাটির মোট ঋণ ৩২৫ কোটি ৪২ টাকার মধ্যে ১১৩৬ কোটি ৬৩ লাখ টাকা খেলাপি হয়ে পড়েছে, যা মোট ঋণের ৩৭.৫৭ শতাংশ।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম জিএম অফিসের ব্যবস্থাপক (ম্যানেজার) শেয়ারবাজার নিউজকে বলেন, এই ঋণগুলো ২০১২ সালে দেওয়া হয়েছে। নতুন করে কোন খারাপ ঋণ আমরা বিতরণ করিনি। আর এখন আমরা চেষ্টা করছি যেন খারাপ ঋণগুলো দ্রুত আদায় হয়। ইতোমধ্যে মর্ডান স্টীল কথা দিয়েছে যে, তারা রেগুলার করে দিবে। তারা রেগুলার করলেই খেলাপি ঋণ কমে যাবে।

ঋণ খেলাপির তৃতীয় অবস্থা অবস্থানে রয়েছে সোনালি ব্যাংকের ঢাকা-১ জিএম অফিস। শাখাটির বিতরণকৃত মোট ঋণ চার হাজার ৯২৭ কোটি টাকার মধ্যে এক হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা খেলাপি, যা বিতরণের ৩৫ দশমিক ৮৩ শতাংশ।

ঢাকা জিএম-১ শাখার ব্যবস্থাপক আব্দুল কুদ্দুস বলেন, আমাদের শাখার বেশিরভাগ লোন হলমার্কের। সেই লোন বাদ দিলে খেলাপি বেশি নেই। হলমার্কের ৯৭ একর জায়গা বিক্রি করার প্রস্তুতি চলছে।

ঋণ খেলাপির পরের অবস্থানে রয়েছে খুলনা জিএম অফিস। শাখাটির মোট বিতরণকৃত ঋণ ৪৮৯২ কোটি ৩২ লাখ টাকার মধ্যে খেলাপি হয়ে পড়েছে ১৭৪৯ কোটি ৯১ লাখ টাকা, যার খেলাপির হার ৩৫.৭৭ শতাংশ।

এ বিষয়ে শাখাটি ব্যবস্থাপক (ম্যানেজার)এর কাছে জানতে চাইলে তিনি শেয়ারবাজার নিউজকে খেলাপির হার আরও কম বলে জানান। তবে কত শতাংশ খেলাপি তা জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।

এছাড়া সোনালী ব্যাংকের দুর্নীতিগ্রস্ত অন্য শাখাগুলোর মধ্যে রয়েছে স্থানীয় কার্যালয়, হলমার্ক কেলেঙ্কারিতে আলোচিত হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল করপোরেট শাখা, দিলকুশা করপোরেট, লালদীঘি শাখা, নারায়ণগঞ্জ করপোরেট, দৌলতপুর করপোরেট, খুলনা করপোরেট, আগ্রাবাদ করপোরেট ও ফরিদপুর করপোরেট শাখা।

সোনালী ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চলতি বছরের আগস্ট শেষে ব্যাংকটির মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১০ হাজার ৭২১ কোটি ১৩ লাখ টাকা। যা মোট বিতরণ করা ঋণের ২০ দশমিক ৪৮ শতাংশ। এর মধ্যে শীর্ষ ২০ খেলাপির কাছেই পাওনা চার হাজার ৮৩ কোটি ৩৪ লাখ টাকা।

এ বিষয়ে সোনালী ব্যাংকের কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বেশিরভাগ বড় খেলাপি ঋণ আদায় আদালতে মামলা করা হয়েছে। তবে একদিকে মামলার দীর্ঘসূত্রতা, অন্যদিকে খেলাপিরা বিভিন্ন প্রভাবশালী মহলের মাধ্যমে চাপ সৃষ্টি করে রাখে। ফলে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও খেলাপি ঋণ আদায় করা যাচ্ছে না।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, শুধু সোনালী নয়, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোয় নানা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা চলছে। এখানে প্রভাবশালীদের চাপ ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপে ঋণ কেলেঙ্কারি হচ্ছে। ব্যাংকের কর্মকর্তারা এসব অনিয়মে সহযোগিতা করছেন। সুশাসনের অভাব, তেমন জবাবদিহিও করতে হয় না। প্রভাবশালীরা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ফেরত দেন না, আবার বিভিন্ন চাপে ব্যাংকের কিছু করারও থাকে না। এখন যে কোনো উপায়ে ঋণ আদায় বাড়াতে হবে বলে পরামর্শ দিয়ে সাবেক এ গভর্নর বলেন, এজন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংককে চাপ দিতে হবে। পাশাপাশি সরকারের সহযোগিতা লাগবে। একই সঙ্গে সুশাসন নিশ্চিত ও পর্ষদকে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপমুক্ত করতে হবে।

 

 

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.