আজ: বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ইং, ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৫ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

০৯ ডিসেম্বর ২০২১, বৃহস্পতিবার |

kidarkar

আইএমএফকে প্রণোদনা ও খেলাপির তথ্য দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক 

নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রণোদনা প্যাকেজ এবং রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর উচ্চ খেলাপি নিয়ে ইন্টারন্যাশনাল মনিটারি ফান্ড (আইএমএফ) কর্তৃক নানামুখি প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বৃহস্পতিবার (৯ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে ইন্টারন্যাশনাল মনিটারি ফান্ডের (আইএমএফ) পূর্বনির্ধারিত এক বৈঠক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, করোনা মহামারিতে অর্থনৈতিক প্রভাব মোকাবিলায় গত বছর ঋণ গ্রহীতারা কোনো টাকা পরিশোধ না করলেও খেলাপি দেখাতে পারেনি কোন ব্যাংক। এছাড়া আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত ঋণ পরিশোধে একরকম ছাড় দিয়ে রেখেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবুও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে কেন খেলাপি ঋণ বাড়ছে এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে জানতে চেয়েছে আইএমএফ।

সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর একজন গ্রাহকের যে পরিমাণ ঋণ পরিশোধ করার কথা, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে তার ২৫ শতাংশ পরিশোধ করলেও তাকে আর খেলাপি করা যাবে না। এরপরও চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাস শেষে ব্যাংকিং খাতের মোট ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১২ লাখ ৪৫ হাজার ৩৯১ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে এক লাখ এক হাজার ১৫০ কোটি টাকা খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। যা মোট ঋণের ৮ দশমিক ১২ শতাংশ। করোনার শুরুর বছর ২০২০-এর ডিসেম্বরে খেলাপি ঋণ ছিল ৮৮ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৭ দশমিক ৬৬ শতাংশ। সে হিসাবে চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১২ হাজার ৪১৬ কোটি টাকা।

সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের খেলাপির পরিমাণ সাত হাজার ৮৭২ কোটি টাকা। বিডিবিএলের ৫৬০ কোটি, বেসিক ব্যাংকের সাত হাজার ৬১৯ কোটি, জনতা ব্যাংকের ১৩ হাজার ৮৭৩ কোটি, রূপালী ব্যাংকের তিন হাজার ৮৩৪ কোটি এবং সোনালী ব্যাংকের খেলাপি ছিল ১০ হাজার ২৯৪ কোটি টাকা।

সূত্র বলছে, কোভিড-১৯ এ ব্যাংকিং সেক্টরের ক্ষতি ও গৃহীত পদক্ষেপ সম্পর্কে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে জানতে চেয়েছে আইএমএফ। এতে করে ব্যাংকের ক্যামেলস রেটিং-এর কোনো পরিবর্তন এসেছে কিনা সে বিষয়েও জানতে চায় তারা। এছাড়া বৈঠকে করোনাকালীন সময়ে সরকারি ব্যাংকগুলোর বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তর পর্যালোচনা হয়েছে।

বিশেষ করে, আলোচনায় আসে প্রণোদনা প্যাকেজ এবং রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ হার বৃদ্ধি। আর স্বল্প এবং মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনার মাধ্যমে খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনা এবং ব্যাংকগুলোর সার্বিক পারফরম্যান্স বৃদ্ধিতে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বাংলাদেশ ব্যাংককে পরামর্শও দেওয়া হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর ১ জুলাই থেকে দ্বিতীয় মেয়াদের ঋণ বিতরণ শুরু হলেও কোনো অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। তবে প্রথম মেয়াদে সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ প্রায় ৮০ শতাংশ বাস্তবায়নে সক্ষম হয় ব্যাংক খাত। এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তথ্য বলছে, তিন মাস পার হয়ে গেলেও দ্বিতীয় মেয়াদে ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নের হার ১ থেকে ৭ শতাংশের মধ্যে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য বলছে, ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প সার্ভিস সেক্টরের প্রতিষ্ঠানের জন্য ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল হিসেবে প্রথম মেয়াদে ৪০ হাজার কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছিল। এর বাস্তবায়ন হার ছিল ৮১ দশমিক ৭৫ শতাংশ। তবে ১ জুলাই থেকে দ্বিতীয় মেয়াদের প্যাকেজ বাস্তবায়ন শুরু হলেও সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ খাতে বিতরণ হয়েছে মাত্র ৫১৯ কোটি টাকা, যা দ্বিতীয় মেয়াদে এ খাতে নির্ধারিত প্যাকেজের ১ দশমিক ৫৭ শতাংশ।

ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্য ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল হিসেবে ২০ হাজার কোটি টাকার ঋণ সুবিধা দেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু দ্বিতীয় মেয়াদে এখন পর্যন্ত বিতরণ হয়েছে মাত্র ৪৭৭ কোটি টাকা, যা নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার ২ দশমিক ৩৮ শতাংশ।

প্রি-শিপমেন্ট ক্রেডিট রিফাইন্যান্স স্কিমের ঘোষণা করা হয়েছে ৫ হাজার কোটি টাকা। এ প্যাকেজের আওতায় এখন পর্যন্ত সুবিধাভোগীর সংখ্যা ৬৫টি প্রতিষ্ঠান। এখন পর্যন্ত ৩৭৫ কোটি টাকার ঋণ সুবিধা পেয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলো, যা নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার ৭ দশমিক ৫১ শতাংশ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঋণ বিতরণ করে তা আদায় হবে কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটছে না। তাই দ্বিতীয় মেয়াদে নতুন ঋণ দিতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না ব্যাংক।

করোনার ক্ষতি মোকাবিলায় প্রথম মেয়াদে সরকার মোট ২৮টি প্যাকেজ ঘোষণা করে। সবমিলিয়ে এসব প্যাকেজের অর্থের পরিমাণ ১ লাখ ৩১ হাজার ৬৪৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১ লাখ ৩ হাজার ২৫০ কোটি টাকার নয়টি প্যাকেজ বাস্তবায়ন হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে। বছর শেষে এসব প্যাকেজের সার্বিক বাস্তবায়নের হার ছিল প্রায় ৮০ শতাংশ।

ব্যাংকের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ঝুঁকি অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক কে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের পরামর্শ দেয় আইএমএফ।এছাড়াও নতুন ব্যাংকের লাইসেন্স দেওয়া বিষয়ে বিস্তর আলোচনা করে দুই পক্ষ।

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.