এনআরবি ব্যাংকের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বিএসইসির নির্দেশ
নিজস্ব প্রতিবেদক: অনৈতিকভাবে শেয়ার ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকায় এনআরবি ব্যাংকের বিনিয়োগ ব্যাংকিং ইউনিটের সকল সদস্যসহ প্রধান অর্থ কর্মকর্তার (সিএফও) বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। একইসঙ্গে গোপনীয় নথিপত্র সংরক্ষণে ব্যর্থতার জন্য এনআরবি ব্যাংকের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে কমিশন।
সম্প্রতি এনআরবি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে এসব নির্দেশনা দিয়েছে বিএসইসি।
শেয়ারবাজারে বিনিয়োগে অসঙ্গতি এবং অন্যান্য অনিয়ম খতিয়ে দেখতে গঠিত তদন্ত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে বিএসইসি’র পক্ষ থেকে এনআরবি ব্যাংককে এমন নির্দেশনাসহ বেশ কিছু পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আর আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ওই পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে বিএসইসিকে অবহিত করার জন্য এনআরবি ব্যাংককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এনআরবি ব্যাংকের বিরুদ্ধে গঠিত বিএসইসি’র তদন্ত কমিটির পর্যবেক্ষণ ও সুপারিশে উল্লেখ রয়েছে, এনআরবি ব্যাংকের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) কামরুল হাসান বহিরাগতদের সঙ্গে সহযোগিতায় অনৈতিক ব্যবসায়িক কার্যকলাপে জড়িত থাকার জন্য দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। তার অনৈতিক কার্যক্রমের ফলে এনআরবি ব্যাংক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং তিনি ও তার বহিরাগত সহযোগীরা লাভবান হয়েছেন। ফলে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ সাপেক্ষে ব্যাংকটি কমিশনকে অবহিত করতে পারে।
আর এনআরবি ব্যাংকের বিনিয়োগ ব্যাংকিং ইউনিটের সকল সদস্য এবং অন্যান্য কর্মকর্তারাও অনৈতিক শেয়ার ব্যবসায়িক কার্যকলাপের জন্য দায়ী। কারণ তারা এই ক্ষেত্রে যথাযথ ভূমিকা পালন করতে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থাও নেবে।
এছাড়া এনআরবি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ, ব্যবস্থাপনা এবং বিনিয়োগ কমিটি তাদের অভ্যন্তরীণ অডিট রিপোর্ট ও পরিচালনা পর্ষদের সভার কার্যবিবরণী সংরক্ষণের গোপনীয়তা নিশ্চিতে ব্যর্থ হয়েছেন। নথিগুলি কীভাবে বহিরাগতদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে তা খুঁজে বের করতে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ একটি অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তদন্ত কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী, এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ারও সুপারিশ করা হচ্ছে। একইসঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ নথি সংরক্ষণের গোপনীয়তা নিশ্চিত করতে এনআরবি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতেও বলা হয়েছে বিএসইসির নির্দেশনায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনআরবি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মামুন মাহমুদ শাহ শেয়ারবাজার নিউজকে বলেন, এই বিষয়টি সম্পর্কে আগেই আমরা অবহিত ছিলাম। যে কারণে বিএসইসি নির্দেশনা দেওয়ার আগেই আমরা সিএফওকে সাময়িক বরখাস্ত করে রেখেছিলাম। এখনো বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। বিএসইসিও আমাদেরকে এই নির্দেশনাই দিয়েছে যে, ওনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করে তাদেরকে জানানোর জন্য। আমাদের যেভাবে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে আমরা সেটি প্রতিপালন করছি।
বিএসইসি’র গঠিত তদন্ত কমিটি বলছে, যেহেতু অভ্যন্তরীণ অডিট কমিটি বিষয়টি সঠিকভাবে অডিট করেছে। একইসঙ্গে প্রকৃত পরিস্থিতি খুঁজে বের করে ব্যাংকটিকে বিশাল আর্থিক ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করেছে, সে জন্য এনআরবি ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ অডিট কমিটি প্রশংসার দাবিদার।
এর আগে গত বছরের ১ নভেম্বর শেয়ারবাজারে বিনিয়োগে অসঙ্গতি এবং বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে এনআরবি ব্যাংকের বিরুদ্ধে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করার নির্দেশ দেয় বিএসইসি। এ আদেশ জারি করার ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত কমিটিকে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন বিএসইসিতে দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন- বিএসইসি’র অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ গোলাম কিবরিয়া, উপ-পরিচালক সিরাজুল ইসলাম ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের মনিটরিং অ্যান্ড কমপ্লায়েন্স বিভাগের উপ-ব্যবস্থাপক গিয়াস উদ্দিন।
গত ১৬ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিনিয়োগের সীমার বাইরে গিয়ে শেয়ার কিনে আইন লঙ্ঘন করার জন্য এনআরবি ব্যাংককে ৪৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এনআরবি ব্যাংকের বিরুদ্ধে ওঠা বিভিন্ন অভিযোগের সত্যতা খতিয়ে দেখবে বিএসইসি’র গঠিত তদন্ত কমিটি।