আজ: বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ইং, ১১ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৪ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

০৯ ফেব্রুয়ারী ২০২২, বুধবার |

kidarkar

১০৮ কোটি টাকার মালিক খুঁজে পাচ্ছে না ব্যাংকগুলো!

এ জেড ভূঁইয়া আনাস: গত পাঁচ বছরে সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের অনেক অ্যাকাউন্টে পড়ে থাকা প্রায় ১০৮ কোটিরও বেশি টাকার মালিক খুঁজে পাওয়া যায়নি। যে কারণে অদাবিকৃত এসব অর্থ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা পড়েছে। অ্যাকাউন্টগুলোতে ১০ টাকা থেকে লাখ টাকা পর্যন্ত আমানত জমা রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ইসলামী ব্যাংকের বিয়ানীবাজার শাখায় শোয়েবুর রহমান নামে একজন ব্যক্তির সঞ্চয়ী হিসেবে পড়ে আছে ৫৯ হাজার ১১০ টাকা। সর্বশেষ তিনি সেই অ্যাকাউন্টে লেনদেন করেছিলেন ২০০৮ সালের অক্টোবর মাসে। এরপর তিনি বা তার পরিবারের কেউ এই অর্থের খোঁজ নিতে আসেননি। পরে ব্যাংকের পক্ষ থেকে উল্লেখিত ঠিকানা বরাবর নোটিশ পাঠিয়েও কোনো সাড়া পায়নি।

শুধু শোয়েবুর নয়, এই ব্যাংকের বিশ্বনাথ শাখার জাহেদ মিয়ার একাউন্টে ৬৩ হাজার ৬০০ টাকা, বাসার উদ্দিনের অ্যাকাউন্টে ২০ হাজার টাকা, গোয়ালা বাজার শাখায় ময়না মিয়ার অ্যাকাউন্টে ৪০ হাজার ৮৮০ টাকাসহ পড়ে আছে অদাবিকৃত কয়েক কোটি টাকা।

এছাড়া ২০১০ সালে সর্বশেষ লেনদেন হওয়া প্রাইম ব্যাংকের বরিশাল শাখায় নাসির উদ্দিনের অ্যাকাউন্টে ৫০ হাজার টাকা, ব্যাংক এশিয়ার মিডফোর্ট শাখায় সৈয়দ ইকরাম হোসাইনের ২৬ হাজার ৪৯৭ টাকাসহ সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে পড়ে আছে শত কোটি টাকা।

ব্যাংক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, গত পাঁচ বছরে দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে অদাবিকৃত ১০৮ কোটি ১৮ লাখ ২২ হাজার ৫০২ টাকা এসেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা দিয়েছে।

‘ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১ (২০১৮ পর্যন্ত সংশোধিত)’-এর ৩৫ ধারা অনুযায়ী, ১০ বছর যাবৎ কোনো ব্যাংক হিসাবে লেনদেন না হলে এবং ওই আমানতের গ্রাহককে খুঁজে না পাওয়া গেলে, সে অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে জমা করতে হয় ব্যাংকগুলোকে।

তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০১৭ সালে ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা দিয়েছিলো ১৫ কোটি ২১ লাখ ৩০ হাজার টাকার অদাবিকৃত অর্থ। যথাক্রমে ২০১৮ সালে ১০ কোটি ৬৪ লাখ ৩৮ হাজার, ২০১৯ সালে ১০ কোটি ৪৮ লাখ ৭১ হাজার, ২০২০ সালে ৩৪ কোটি ৪৫ লাখ ৩৩ হাজার এবং ২০২১ সালে এসেছিলো ৩৭ কোটি ৩৮ লাখ ৫০ হাজার ২২৮ টাকার অদাবিকৃত অর্থ জমা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক পুরো অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা দিয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তার মতে, সঞ্চয়ী হিসাবের মতো মেয়াদি আমানতের ক্ষেত্রেও ১০ বছর সময় দেয়া হয়। তবে এক্ষেত্রে মেয়াদি আমানতের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার ১০ বছর পর গ্রাহককে খোঁজা হয়। খোঁজ পাওয়া না গেলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল শাখায় ওই টাকা জমা দেয়। এমনি করে ব্যাংকের লকারে থাকা মূল্যবান দ্রব্যসামগ্রীও অদাবিকৃত হলে তা জমা নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ব্যাংকগুলোর বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে যদি গ্রাহক ১০ বছর কোন লেনদেন না করেন এবং কোন ধরণের যোগাযোগ না রাখেন, তখন ওই অ্যাকউন্টে জমা থাকা অর্থকেই অদাবিকৃত আমানত হিসেবে ধরা হয়। ব্যাংকগুলো এসব অ্যাকাউন্টের মালিকদের দেওয়া ঠিকানায় যোগাযোগ করেও যদি ১০ বছরে তাদের খোঁজ না পায় তখন ওই অদাবিকৃত অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দেয়। এরপর ওই অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংকে আরও দুই বছর জমা থাকে। যদি এই সময়ের মধ্যেও কেউ এই অর্থের খোঁজ করেন এবং যথাযথ দলিল দিতে পারেন তবে তাকে তা হস্তান্তর করা হয়। অন্যথায়, এই অর্থ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেওয়া হয়। অর্থাৎ গ্রাহকের অর্থ ফেরত দিতে ব্যাংকগুলো ও বাংলাদেশ ব্যাংক সব মিলিয়ে ১২ বছর অপেক্ষার পরও মালিক খুঁজে না পেলে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেওয়া হয় বলেও জানান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই নির্বাহী পরিচালক।

অদাবিকৃত সম্পত্তির বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী, গ্রাহক ১০ বছর পর্যন্তে লেনদেন বা যোগাযোগ না করলে ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১-এর ৩৫(১) ধারা অনুযায়ী, তাদের পরিশোধযোগ্য অর্থ, পরিশোধযোগ্য চেক, ড্রাফট বা বিনিময় দলিল এবং ব্যাংকের জিম্মায় রক্ষিত মূল্যবান সামগ্রী অদাবিকৃত অর্থ ও মূল্যবান সামগ্রী হিসেবে বিবেচিত হবে। তবে সরকার, নাবালক বা আদালতের অর্থ এ নিয়মের আওতায় পড়বে না।

গণনাকৃত অর্থ ও চেক, ড্রাফট বা বিনিময় দলিলের পাওনাদারদের পক্ষে কোনো ব্যক্তি এবং মূল্যবান সামগ্রীর আমানতকারীকে তার দেয়া ঠিকানায় রেজিস্ট্রিকৃত ডাকযোগে তিন মাসের লিখিত নোটিশ পাঠাতে হবে। ড্রাফট বা বিনিময় দলিলে পাওনাদারের ঠিকানা পাওয়া না গেলে আবেদনকারীর ঠিকানায় অনুরূপ নোটিশ পাঠাতে হবে। এক্ষেত্রে আইনের ৩৫(৩) ধারা অনুসরণ করতে হবে।

নোটিশ পাঠানোর তিন মাস পেরিয়ে যাওয়ার পরও যদি কোনো প্রাপ্তি স্বীকারপত্র বা উত্তর না আসে, তবে আইনের ৩৫(২) অনুযায়ী, অদাবিকৃত আমানত ও মূল্যবান সামগ্রী প্রতি বছরের এপ্রিলে বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দিতে হবে। এক্ষেত্রে অদাবিকৃত আমানতের অর্থ সুদসহ চেক/পে-অর্ডারের মাধ্যমে জমা দিতে হবে এবং দেশী ও বৈদেশিক মুদ্রার আমানতের অর্থ পৃথকভাবে হিসাবায়ন করতে হবে।

২ উত্তর “১০৮ কোটি টাকার মালিক খুঁজে পাচ্ছে না ব্যাংকগুলো!”

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.