আজ: মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪ইং, ১০ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১২ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

১০ ফেব্রুয়ারী ২০২২, বৃহস্পতিবার |

kidarkar

আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিতরণকৃত ঋণের ১৭ শতাংশই খেলাপি

এ জেড ভূঁইয়া আনাস: দেশের বিদ্যমান ৩৪টি নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মোট ঋণের পরিমাণ ৬৬ হাজার ৭৩৯ কোটি ২১ লাখ টাকা। যার ১৭ দশমিক ৬২ শতাংশই খেলাপি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ব্যাংক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, কঠোর নজরদারী না থাকায় আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো জনগণের টাকা নিয়ে প্রতারণার সুযোগ পাচ্ছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, সবগুলো আর্থিক প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে মোট মন্দ ঋণের পরিমাণ ১১ হাজার ৭৫৭ কোটি সাত লাখ টাকা। যার মোট ঋণের ১৭ দশমিক ৬২ শতাংশ।

জানা গেছে, ২০২০-এর সেপ্টেম্বর আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতের মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিলো ১০ হাজার ২৪৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা। যা ২০২১-এর সেপ্টেম্বরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ৭৫৭ কোটি টাকা। ওই সময়ে মোট খেলাপি ঋণের হার ১৫ দশমিক ৪৭ থেকে বেড়ে হয়েছে ১৭ দশমিক ৬২ শতাংশ

উল্লেখ্য, দেশে বর্তমানে ৩৪টি নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর শ্রেণীকৃত ঋণের তথ্যানুযায়ী, ৩৪টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১০০ কোটিরও বেশি খেলাপি ঋণ রয়েছে মোট ১৯টি প্রতিষ্ঠানের। আর ১০০ কোটির নিচে রয়েছে বাকি প্রতিষ্ঠানগুলোর।

আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর খেলাপি ঋণ বাড়ায় উদ্বেগ জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রথম থেকেই দক্ষ জনবল নিয়োগ দেয়া হয়নি।দেশের প্রচলিত রাজনৈতিক ধারা অনুযায়ী সম্পূর্ণ রাজনৈতিক নতুন নতুন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ব্যাংকগুলোকে যেভাবে নজরদারী করা হয় আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সেই ভাবে নজরদারী করা হয়নি। সেই সুযোগে জনগণের টাকা নিয়ে তা আত্মসাৎ করায় বর্তমান পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে। সঠিক সুপারভিশন করা হলে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণের বোঝা কমানো সম্ভব হতো।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, শেয়ারবাজারের তালিকাভুক্ত ফাস ফাইন্যান্স লিমিটেডের খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ফাস ফাইন্যান্স ১ হাজার ৭৪৩ কোটি ১৪ লাখ টাকা। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ ২০২১ এর জুনে নতুন করে গঠন করা হয়েছে। বিপুল অংকের টাকা বিদেশে পাচারের প্রমাণ পাওয়ায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কোম্পানিটির সাবেক পর্ষদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে।

ডিএসইর হালনাগাদ তথ্যে দেখা যায়, পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত এই আর্থিক প্রতিষ্ঠানটির প্রতিটি ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের শেয়ারের দাম বর্তমানে ছয় টাকার কাছাকাছি। কোম্পানিটি ২০১৮-এর সবশেষ বিনিয়োগকারীদের ৫ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড দিয়েছে। কোম্পানিটিতে বিনিয়োগকারীদের শেয়ার রয়েছে ৭৭ শতাংশ। এছাড়া উদ্যোক্ত পরিচালকদের শেয়ার মাত্র ১৩.২০ শতাংশ।

আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত আরেকটি প্রতিষ্ঠান ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড। এই প্রতিষ্ঠানটি ২০১৭-এর থেকে শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদেরও কোনো লভ্যাংশ দিতে পারছে না। সব বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম ৫.৮০ পয়সায় এসে ঠেকেছে। ২০১৬-এ কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) ছিলো ১৯ টাকা ৫২ পয়সা।

দেশে বিদ্যমান আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর খেলাপি ঋণের তথ্য হালনাগাদে দেখা যায়- আভিভা ফাইন্যান্স ৭৩৪ কোটি ৬৭ লাখ টাকা, বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কর্পোরেশন (বিআইএফসি) ৭৭৫ কোটি টাকা, ফারইস্ট ফাইন্যান্স ৪৭৫ কোটি ৪৮ টাকা, ফাস ফাইন্যান্স ১ হাজার ৭৪৩ কোটি ১৪ লাখ টাকা, ফাস্ট ফাইন্যান্স ৬৪৬ কোটি ২২ লাখ টাকা, জিএসপি ফাইন্যান্স ১১৮ কোটি ৪৪ লাখ টাকা, আইডিএলসি ফাইন্যান্স ৩৩৬ কোটি ৫২ লাখ টাকা, ইন্ডাষ্ট্রিয়াল এন্ড ইনফ্রাষ্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট ফাইন্যান্স কোম্পানি (আইআইডিএফসি) ৩৬০ কোটি ৯২ লাখ, ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড (আইডিসিওএল) ১৫৩ কোটি ৭৯ লাখ টাকা, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং ৩ হাজার ৩৭৯ কোটি ২৯ লাখ টাকা, আইপিডিসি ফাইন্যান্স ১০০ কোটি ৬৩ লাখ টাকা, লংকাবাংলা ফাইন্যান্স ৩৬৫ কোটি ৮৮ লাখ টাকা, মাইডাস ফাইন্যান্স ২০৫ কোটি ৩০ লাখ টাকা, ন্যাশনাল ফাইন্যান্স ১২৮ কোটি ৯৬ লাখ টাকা, ফনিক্স ফাইন্যান্স ১৭৮ কোটি ৬০ লাখ টাকা, প্রিমিয়ার লিজিং ৭৬০ কোটি ৭৭ লাখ টাকা, প্রাইম ফাইন্যান্স ১০৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা, ইউনিয়ন ক্যাপিটাল ১৪৬ কোটি ২৫ লাখ টাকা, উত্তরা ফাইন্যান্স ৬৩১ কোটি ৪৪ লাখ টাকা।

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.