আজ: বৃহস্পতিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩ইং, ২২শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ২২শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

০৩ মার্চ ২০২২, বৃহস্পতিবার |

kidarkar

ব্যাংক খাতে প্রভিশন ঘাটতি ১৪ হাজার কোটি টাকা

এ জেড ভূঁইয়া আনাস: করোনাকালীন নানান সুবিধা দিয়েও আটকানো যায়নি খেলাপি বৃদ্ধির হার। দুই বছর বিশেষ সুবিধা দেয়ার পরও গত বছর শেষে বেড়েছে খেলাপি ঋণের পরিমাণ। এর সাথে সাথে বেড়েছে ব্যাংকগুলোর প্রভিশন বা নিরাপত্তা সঞ্চিতির ঘাটতি। গেল বছর শেষে ব্যাংক খাতে প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৭ কোটি ২৪ লাখ টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকসূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গেল বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে ৯টি ব্যাংক প্রয়োজনীয় প্রভিশন সংরক্ষণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। এ ৯টি ব্যাংকের মোট প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২২ হাজার ৫৭৩ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। প্রভিশন ঘাটতিতে বরাবরের মতো এগিয়ে আছে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাংকগুলো। একক ভাবে সবচেয়ে বেশি ঘাটতি রয়েছে জনতা ব্যাংকের। রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাংকটির প্রভিশন ঘাটতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৪৯১ কোটি টাকা। তবে কিছু ব্যাংক প্রয়োজনের অতিরিক্ত অর্থ নিরাপত্তা সঞ্চিতি হিসাবে রেখে দেওয়ায় সার্বিকভাবে পুরো ব্যাংক খাতে ঘাটতির পরিমাণ কিছুটা কমেছে। সম্মিলিতভাবে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ ১৪ হাজার ৭ কোটি ২৪ লাখ টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদকৃত তথ্যমতে, সদ্য সমাপ্ত বছরের শেষ মাস ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকিং খাতের মোট ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৩ লাখ ১ হাজার ৭৯৭ কোটি ২৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে ১ লাখ ৩ হাজার ২৭৪ কোটি টাকা খেলাপিতে পরিণত হয়েছে, যা মোট ঋণের ৭ দশমিক ৯৩ শতাংশ। করোনার শুরুর বছর ২০২০-এর ডিসেম্বরে খেলাপি ঋণ ছিল ৮৮ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৭ দশমিক ৬৬ শতাংশ। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১৪ হাজার ৫৪০ কোটি টাকা।

এ সময়ের মধ্যে ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণ করেছে মোট ২ লাখ ৩৩ হাজার ২৯৭ কোটি টাকা। মোট খেলাপির মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর অবদান ৪৪ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা। অপরদিকে, একই সময়ে বেসরকারি ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণ করে ৯ লাখ ৭০ হাজার ৪০৫ কোটি টাকা যার মধ্যে ৫১ হাজার ৫২১ কোটি টাকা খেলাপি। বিদেশি ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণ করে ৬৪ হাজার ৮৯৯ কোটি টাকা। এরমধ্যে ২ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা খেলাপি হয়েছে। এছাড়াও রাষ্ট্রের বিষেশায়িত ৩ ব্যাংক মিলে ঋণ বিতরণ করে ৩৩ হাজার ১৯৬ কোটি টাকা। বিতরণকৃত এ পরিমাণ ঋণের মধ্যে ৩ হাজার ৯৯১ কোটি টাকা খেলাপি হয়ে পড়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিধি মোতাবেক, দেশে কার্যরত সকল তফসিলি ব্যাংকের নিয়মিত ঋণের বিপরীতে দশমিক ২৫ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশ হারে প্রভিশন রাখতে হয়। এরমধ্যে এসএমই ঋণের বিপরীতে দশমিক ২৫ শতাংশ আর ক্রেডিট কার্ডে রাখতে হয় সর্বোচ্চ পাঁচ শতাংশ। তাছাড়া নিম্নমান (সাব স্ট্যান্ডার্ড) ঋণের বিপরীতে ২০ শতাংশ প্রভিশন বা নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণ করতে হয়, সন্দেহজনক ঋণের বিপরীতে ৫০ শতাংশ এবং মন্দ (বাজে ঋণ) ঋণের বিপরীতে ব্যাংকগুলোকে ১০০ শতাংশ প্রভিশন রাখতে হয়।

গেল এক বছরের মধ্যে ৯ ব্যাংকের রাষ্ট্রায়ত্ত ৪ ব্যাংকের ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৪২৮ কোটি টাকা। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মধ্যে ডিসেম্বর শেষে জনতা ব্যাংকের ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৪৯১ কোটি টাকা, বেসিক ব্যাংকের ৪ হাজার ১১৫ কোটি ৩৪ লাখ টাকা, অগ্রণী ব্যাংকের ২ হাজার ৬১৮ কোটি ৩২ লাখ টাকা এবং রূপালী ব্যাংকের এক হাজার ৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা ঘাটতি রয়েছে।

এছাড়া, বেসরকারি খাতের ৫ ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ১৪৫ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। ঘাটতিতে এগিয়ে আছে দূর্বলভাবে পরিচালিত সমালোচিত ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে জুন শেষে ন্যাশনাল ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ২৬২ কোটি ৬২ লাখ টাকা, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের ৩১৬ কোটি ১৮ লাখ, আইএফআইসি ব্যাংকের ২১২ কোটি ৪৭ লাখ টাকা, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ২০৫ কোটি ১০ টাকা, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক ১৪৯ কোটি টাকা প্রভিশন ঘাটতি রয়েছে। আর বিশেষায়িত বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২১ কোটি ৬ লাখ টাকা।

আলোচ্য সময়ে ব্যাংকিং খাতে প্রভিশন সংরক্ষণের প্রয়োজন ছিল ৮০ হাজার ৬৫৪ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। কিন্তু সংরক্ষণ করা হয়েছে ৬৬ হাজার ৬৪৭ কোটি ২২ লাখ টাকা। ফলে সার্বিকভাবে পুরো ব্যাংকে নিরাপত্তা সঞ্চিতির ঘাটতি ১৪ হাজার ৭ কোটি কোটি ২৪ লাখ টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, গত পাঁচ বছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২৮ হাজার ৯৭১ কোটি টাকা। ২০১৭ সালে খেলাপি ঋণ ছিল ৭৪ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা। এর পরের বছর ২০১৮ সালে খেলাপি ছিল ৯৩ হাজার ৯১১ কোটি টাকা। ২০১৯ সালে ছিল ৯৪ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা এবং ২০২০ সালে খেলাপি ঋণ ছিল ৮৮ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা।

এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন শেয়ারবাজার নিউজকে বলেন, ‘সুবিধা দিয়েও ঋণ খেলাপি কমানো যাচ্ছে না। এদিকে জানুয়ারি থেকে সব ধরনের সুযোগ তুলে নেওয়া হয়েছে। এর ফলে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে যাবে মার্চ প্রান্তিকে। এখন সময় এসেছে ইচ্ছাকৃত খেলাপিকে চিহ্নিত করার। এরপর তাদের বিরুদ্ধে ব্যাংক কোম্পানি আইনের প্রয়োগ করা। তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন সবার বিরুদ্ধে সমানভাবেই এ আইন ব্যবহার হয়। কারও বিরুদ্ধে হবে আবার কারও বিরুদ্ধে হবে না এমনটি যেন না হয়। শোনা যাচ্ছে, দীর্ঘদিন ধরে ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন করার জন্য খসড়া তৈরি হচ্ছে। এ খসড়া আইনের ফাঁকফোকরগুলো বের করে সেসব বন্ধ করতে হবে।’

২ উত্তর “ব্যাংক খাতে প্রভিশন ঘাটতি ১৪ হাজার কোটি টাকা”

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.