আজ: শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ইং, ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

২৪ এপ্রিল ২০২২, রবিবার |

kidarkar

পাঠ্য বইতে যুক্ত হচ্ছে স্কুল ব্যাংকিং

এ জেড ভূঁইয়া আনাস: দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সকল মানুষকে ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য আর্থিক সাক্ষরতা নীতিমালা প্রণয়ন, ফাইন্যান্সিয়াল লিটারেসি ওয়েবপোর্টাল নির্মাণ, ফাইন্যান্সিয়াল লিটারেসি ভিডিও নির্মাণসহ নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এক্ষেত্রে অনেকগুলো প্রকল্প বাস্তবায়নও হয়েছে। এছাড়া স্কুল শিক্ষার্থীদের ব্যাংকিং কার্যক্রমে যুক্ত করতে মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের পাঠ্যবইয়ে স্কুল ব্যাংকিং বিষয়টি যুক্ত করতে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

ইতোমধ্যে প্রাথমিক জীবন থেকেই ব্যাংকিং সেবার প্রতি সচেতন করতে শিক্ষার্থীদের পাঠ্যবইয়ে স্কুল ব্যাংকিংয়ের বিষয়টি যুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড। ২০২৩ সালের নতুন সিলেবাসে শিক্ষার্থীদের জন্য স্কুল ব্যাংকিংয়ের বিষয়টি যুক্ত হবে বলে জানিয়েছে সূত্র। ইতোমধ্যে দেশের ৬২ টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরুও হয়েছে।

এনসিটিবি থেকে প্রাপ্ত তথ্য বলছে, ২০২১ সালের প্রথমদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে স্কুল ব্যাংকিংয়ের বিষয়টি যুক্ত করার জন্য প্রস্তাবনা দেওয়া হয়। এ প্রস্তাবের বিষয়টি আলোচনা এবং গবেষণার পর জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড চলতি শিক্ষাবর্ষে মোট ৬২ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরীক্ষামূলকভাবে ‘জীবন ও জীবিকা’বইয়ে ‘সঞ্চয়ের গুরুত্ব’ শিরোনামে স্কুল ব্যাংকিংয়ের বিষয়টি যুক্ত করে।

জানা যায়, বাংলাদেশ ব্যাংক প্রাথমিকভাবে ৩য় বা ৪র্থ শ্রেণির সমমান এবং ৬ষ্ঠ বা ৭ম শ্রেণির সমমানের পাঠ্য বইয়ে স্কুল ব্যাংকিংয়ের বিষয়টি সংযোজনের জন্য প্রচেষ্টা চালায়। পরবর্তীতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড কর্তৃক পর্যালোচনা করে প্রাথমিকভাবে ৬ষ্ঠ শ্রেণির ‘জীবন ও জীবিকা’ বইয়ে ‘সঞ্চয়ের গুরুত্ব’ নামে অধ্যায় সংযোজন করার উদ্যোগ নেয়। যেখানে স্কুল ব্যাংকিং অন্তর্ভূক্ত থাকবে। এ কারিকুলাম আগামী মে পরবর্তী পাইলটিং এ সংযুক্ত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

সূত্র বলছে, পরীক্ষামূলক ৬২ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্কুল ব্যাংকিংয়ের অধ্যায় যুক্ত করার পর জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে চিঠি দিয়ে অবহিত করে। এই চিঠিতে পরীক্ষামূলক কার্যক্রম বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর নিকস্থ এলাকায় ব্যাংকের শাখা বা বুথ খোলার অনুরোধ জানানো হয়। পরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

কয়েকটি ব্যাংকের সাথে কথা বলে জানা যায়, সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ৬২ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সবচেয়ে কাছে ব্যাংকগুলোর কোন কোন শাখা রয়েছে তা জানতে চেয়েছে চিঠি দেওয়া হয়। পরে ব্যাংকের পক্ষ থেকে তা অবহিত করলে প্রতিষ্ঠানগুলোর সবচেয়ে নিকটে যেসব ব্যাংক রয়েছে সেই ব্যাংকে লিডিং ব্যাংক হিসেবে চিহ্নিত করে ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বুথ খোলার নির্দেশনা দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, পরীক্ষামূলক যেসকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রম যুক্ত করা হয়েছে ওই প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার্থীদের ব্যাংকিং কার্যক্রমে যুক্ত করার নির্দেশনা বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে। মূলত, শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে তাদের ব্যাংকিং কার্যক্রমে যুক্ত করতে স্কুলে ব্যাংকের বুথ স্থাপন করা হতে পারে বলেও জানান তিনি।

এ বিষয়ে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মশিউজ্জামান বলেন, জীবন জীবিকা বিষয়টিতে স্কুল ব্যাংকিং বা সঞ্চয়ের সম্বন্ধে শিক্ষা দেয়া হবে। যাতে ছোট থেকেই সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে উঠে শিক্ষার্থীদের। ২০২৩ সালে সারা দেশের ষষ্ঠ ও সপ্তম শেণীতে এবং ২০২৪ সাল থেকে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত সব ক্লাসেই এই অধ্যায়টি যুক্ত করা হবে।

তিনি আরও বলেন, সামনের দিনগুলোতে ব্যাংক ছাড়া চলা যাবে না। কারণ সব ধরনের লেনদেন একাউন্ট নির্ভর হয়ে যাচ্ছে। কার্ডের মাধ্যমে কেনাকাটা ও বিভিন্ন বিল পরিশোধ এখন অপরিহার্য। ছোট থেকে ব্যাংকিং সম্পর্কে ধারনা থাকলে পরবর্তীতে জীবন পরিচালনা সহজ হবে। সে কারণেই এই উদ্দ্যোগ।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সূত্র বলছে, চলতি শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিকভাবে ৬২ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্কুল ব্যাংকিংয়ের বিষয়টি যুক্ত করা হলেও ২০২৩ সাল থেকে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে এটি বাস্তবায়ন করা হবে। বর্তমানে যেসকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই কার্যক্রম যুক্ত করা হয়েছে সেগুলোর মধ্যে ৫১ টি স্কুল ও ৯টি মাদ্রাসা রয়েছে বলেও সূত্র নিশ্চিত করেছে।

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.