আজ: শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ইং, ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

০৩ জুলাই ২০২২, রবিবার |

kidarkar

এক বছরে রেমিট্যান্স কমেছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা

এ জেড ভূঁইয়া আনাস: করোনাকালে দেশে রেমিট্যান্সে রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু পরিস্থিতি তুলনামূলক সহনীয় হওয়ায় রেমিট্যান্স কমতে থাকে। রেমিট্যান্স বাড়াতে প্রবাসী আয়ে প্রণোদনা বৃদ্ধি করা হয়। বিভিন্ন দেশে অবস্থিত দূতাবাস ও মিশনেও রেমিট্যান্স বৃদ্ধির জন্য তাগাদা দেয় সরকার। জনসংখ্যা বিদেশি পাঠানো বৃদ্ধি পায়। এভাবে নানা উদ্যোগ নেওয়া সত্ত্বেও অর্থবছর শেষে রেমিট্যান্স সংগ্রহ কমেছে। সদ্য বিদায়ী ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে ২ হাজার ১০৩ কোটি ১৭ লাখ (২১ দশমিক ৩ বিলিয়ন) মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছেন, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৫ দশমিক ১১ শতাংশ কম। ২০২০-২১ অর্থবছরে দুই হাজার ৪৭৭ কোটি ৭৭ লাখ (২৪ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন) ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

রেমিট্যান্স কমার বিষয়ে বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘প্রবাসী আয় দেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। করোনায় প্রবাসী আয় অস্বাবাবিক বেড়েছিল। সেই তুলনায় এ বছর রেমিট্যান্স কমেছে। কিন্তু এটি করোনার আগের বছরের তুলনায় বেশি। আর প্রবাসীদের আয় কম পাঠিয়েছেন তা আমি মনে করি না। তবে, ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসী আয় কম আসার কারণ হিসেবে হুন্ডি মাধ্যম সচল হওয়াটাই দায়ী। এছাড়া, ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স আসলে তার সাথে নগদ প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। এরপরও রেমিট্যান্স আশানুরূপ না আসার কারণ হলো হুন্ডির মাধ্যমে ডলারের রেট বেশি পাওয়া যাচ্ছে। কোন কোন সময় ব্যাংকিং চ্যানেলের চেয়ে ১০ টাকা বেশি পান। তাহলে কেন্ ব্যাংকিং চ্যানেলে পাঠাবেন।

তিনি আরো বলেন, ‘প্রবাসী রপ্তানি বছরের এক লাখ ছাড়িয়েছে। আর তারা যে দেশে থাকেন সেসব দেশে শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি পাওয়ার কথা। এজন্য বৈধ ও অবৈধ মিলে রেমিট্যান্স কমছে বলে মনে হয় না। বর্তমানে মুদ্রা বিনিময় হারে এক প্রকার অরাজকতা বিরাজ করছে। এটা পরিস্কার না হলে সামনে বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স আসবে না। মুদ্রা বিনিময় নিয়ে অব্যবস্থাপনা দূর না হলে রেমিট্যান্স বাড়বে না।’

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের (জুলাই-জুন) দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ২ হাজার ১০৩ কোটি ১৭ লাখ ডলার, বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ১ লাখ ৯৬ হাজার কোটি টাকা (প্রতি ডলার ৯৩ দশমিক ৪৫ টাকা ধরে)। ২০২০-২১ অর্থবছরে এসেছিল ২ হাজার ৪৭৭ কোটি ৭৭ লাখ ডলার। এ হিসাবে গেল অর্থবছরে তার আগের বছরের চেয়ে রেমিট্যান্স কমেছে ৩৭৪ কোটি ৬০ লাখ ডলার অর্থাৎ দেশীয় মুদ্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকার বেশি।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, ২০২০-২১ অর্থবছরে রেমিট্যান্সে হঠাৎ যে উল্লম্ফন হয়েছিল, তার একটি ভিন্ন পেক্ষাপট ছিল। ওই বছরের পুরোটা সময় করোনার কারণে সমস্ত পৃথিবীতে অর্থনীথি প্রায় থমকে গিয়েছিল। সেই কারণে হুন্ডির মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠানোও বন্ধ ছিল। প্রবাসীরা সব টাকা পাঠিয়েছিলেন ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে। সে কারণেই রেমিট্যান্স বেড়েছিল। আর করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসায় এবং কার্ব মার্কেটে ডলারের দাম বেশি থাকায় এখন আগের মতো অবৈধ হুন্ডির মাধ্যমে দেশে টাকা পাঠাচ্ছেন প্রবাসীরা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম মাস অর্থাৎ জুলাইতে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৮৭ কোটি ১৫ লাখ, আগস্টে ১৮১ কোটি, সেপ্টেম্বরে ১৭২ কোটি ৬৭ লাখ, অক্টোবরে ১৬৪ কোটি ৬৮ লাখ, নভেম্বর ১৫৫ কোটি ৩৭ লাখ, ডিসেম্বরে ১৬৩ কোটি এবং জানুয়ারিতে এসেছে ১৭০ কোটি ৪৫ লাখ ডলার। ফেব্রুয়ারিতে আসে ১৪৯ কোটি ৪৪ লাখ, মার্চে পাঠিয়েছিল ১৮৫ কোটি ৯৭ লাখ, এপ্রিলে ২০১ কোটি ৮ লাখ, মে মাসে ১৮৮ কোটি ৫৪ লাখ ডলার এসেছে এবং সবশেষ জুন মাসে এসেছে ১৮৩ কো‌টি ৭২ লাখ ডলার।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘অর্থবছরের শুরু থেকেই রেমিট্যান্স কম আসছিল। এ ধারা অব্যাহত ছিল বছরের শেষ মাস পর্যন্ত। এমনকি মাঝে দুটি ঈদের সময়েও আশানুরূপ রেমিট্যান্স আসেনি। এ বছর প্রচুর শ্রমিক প্রবাসী হয়েছে। কয়েক মাসের মধ্যেই তারা আয় পাঠানো শুরু করবে। এতে আমরা আশাবাদী যে রেমিট্যান্স সামনে বাড়বে।

জানা গেছে, রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক। এরই মধ্যে চলতি বছরের জানুয়ারি মাস থেকে রেমিট্যান্সে প্রণোদনার হার ২ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে আড়াই শতাংশ করা হয়েছে। দেশে বড় অংকের রেমিট্যান্স পাঠানোর শর্তও শিথিল করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আগে ৫ লাখ টাকার বেশি রেমিট্যান্স পাঠালে তার বিপরীতে প্রণোদনা পেতে হলে আয়ের উৎস দেখিয়ে নথিপত্র ব্যাংকে জমা দিতে হতো। পরে শর্তও শিথিল করা হয়েছে। এছাড়া সম্প্রতি সরকারের তরফ থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রেমিট্যান্স প্রবাহ ঠিক রাখতে বিদেশে অবস্থিত ৮১টি মিশনে চিঠি পাঠিয়েছে। তারপরও দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহ না বেড়ে উল্টো কমেছে।

একটি বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাম না প্রকাশ করার শর্তে জানান, বিভিন্ন দেশে বস্থানরত প্রবাসীরা হুন্ডিতে বেশি টাকা পাঠাচ্ছেন। দেশের একাধিক বড় শিল্পগ্রুপ এ হুন্ডির সাথে জড়িত। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে এসব শিল্পগ্রুপের নিজস্ব প্রতিনিধিও রয়েছে। এসব প্রতিনিধিরা প্রবাসীদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে দেশে থাকা তাদের প্রতিনিধিদের ফোনে নিশ্চিত করতো। দেশের প্রতিনিধিরা প্রবাসীদের বাড়িতে গিয়ে টাকা পৌঁছে দেওয়ার কাজ করে। এতে করে দেশের স্বজনদের ভোগান্তি কমে ওবং ব্যাংকিং চ্যানেলের ছেতে বেশি টাকা পায়।
উল্লেখ্য, জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০১১-২২ অর্থবছরের জুলাই-মে সময়ের মধ্যে ৮ লাখ ৭৭ হাজার কর্মী বিদেশে কর্মসংস্থানের জন্য গিয়েছেন। আগের বছর একই সময়ে বিদেশে গিয়েছিলেন ২ লাখ ৩১ হাজার জন।

 

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.