আজ: বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ইং, ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৪ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

১৬ জুলাই ২০২২, শনিবার |

kidarkar

পুঁজিবাজারে শক্ত অবস্থানে এসএমই খাত, দূর্বল বড় কোম্পানির অবস্থান

 

শাহ আলম নূর : দেশের পুঁজিবাজারে এসএমই খাতে প্রতিষ্ঠানের শেয়াওরর দাম অব্যাহত ভাবে বাড়লেও দূর্বল অবস্থানে রয়েছে দেশের সুনামধন্য বড় প্রতিষ্ঠনগুলো।

গত এক মাসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ছোট পুঁজি-ভিত্তিক কোম্পানির শেয়ার দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। অপর দিকে দেশের পুঁজিবাজারে বড় কোম্পানিগুলোর সুচক এবং ব্লু-চিপ প্রতিষ্ঠন ছিল নিম্নমুখি।

বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারনে সরবরাহ ব্যবস্থায় বিশৃংখল অবস্থা, মূল্যস্ফীতি, এবং করোনাভাইরাস সংক্রমণ পুনরায় বৃদ্ধির কারণে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা গভীর হচ্ছে। খুব শীর্ঘ্যই এসব সমস্যার সমাধান হবে তার কোন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।

তবে এত সমস্যার মধ্যেও এসএমই খাতের শেয়ারের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে বিশ্লেষকরা মনে করছেন গুজবের কারন এমন হচ্ছে।
ডিএসই’র মূল সূচক ডিএসইএক্স গত এক মাসে ১.৮৩ শতাংশ বা ১১৯ পয়েন্ট কমেছে। ডিএসই-৩০, স্বনামধন্য কোম্পানিগুলির প্রতিনিধিত্বকারী ব্লু-চিপ সূচক ২.৫৪ শতাংশ বা ৬০ পয়েন্ট কমেছে।

তবে একই সময়ে এসএমই সূচক ৫১ শতাংশ বা ৬৯৬ পয়েন্ট বেড়েছে। প্রকৃতপক্ষে, ১২টি স্বল্প-পরিচিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত সূচকটি গত এক বছরে ৩৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

২০১৯ সালের ৩০ এপ্রিল ডিএসই-এসএমই খাতের ছোট প্রতিষ্ঠনগুলোর বোর্ড গঠন করা হয়। এখানে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা (এসএমই) যাতের পরিশোধিত মুলধন ৫ কোটি থেকে ৩০ কোটি টাকার মধ্যে তারা এখান থেকে তহবিল সংগ্রহের অনুমতি নিতে পারবে।

বাজার সংশ্লিষ্ঠরা এমন পদক্ষেপকে সাধুবাদ জানিয়েছে। কারণ দেশের বেশিরভাগ এসএমই উদ্যোক্তাদের অর্থের যোগানের জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ নেই। যদিও দেশে এসইমই খাতে ৭৮ লাখ উদ্যোক্তা রয়েছে। এসব উদ্যোক্তারা সম্মিলিতভাবে মোট দেশজ উৎপাদনে প্রায় ২৫ শতাংশ অবদান রাখাছে।

এসএমই বোর্ড গঠনের পর থেকে বেঙ্গল বিস্কুট, স্টার অ্যাডেসিভস, নিয়াল্কো অ্যালয়, ওয়ান্ডারল্যান্ড টয়স, বিডি পেইন্টস, এপেক্স উইভিং অ্যান্ড ফিনিশিং মিলস, কৃষিবিদ সিড, মোস্তফা মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজ, কৃষিবিদ ফিড, মামুন এগ্রো প্রোডাক্ট, ওরিজা এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ, মাস্টার ফিড এগ্রোটেক এবং হিমাদ্রি লিমিটেড এ বোর্ডে তালিকাভুক্ত হয়েছে।

এসএমই খাতে বেশ কিছু ঝুঁকি রয়েচে। এসব ঝুঁকির কথা বিেেবচনা করে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) সাধারণ বিনিয়োগকারীদের এখানে লেনদেনের অনুমোতি না দেয়ার নিদ্ধান্ত গ্রহন করে। এখানে বিনিয়োগের জন্য পূর্বে অনুমোতি গ্রহন করতে হবে। এবং এসএমই খাতে শেয়ার ক্রয় বিক্রয়ের জন্য কমপক্ষে ৫০ লাখ টাকার বিনিয়োগ থাকতে হবে।
তবে এমন নিয়মের কারনে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের উপস্থিতি ছিল বেশ কম।

এতে এখাতের শেয়ারের দাম ছিল বেশ কম। বেশিরভাগ শেয়ার প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ছিল। যা ডিএসই’র শেয়ার মালিকানা কাঠামোর বিপরীত।
দেশের প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী, সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি, ব্রোকারেজ হাউস, মার্চেন্ট ব্যাঙ্ক, মিউচুয়াল ফান্ড, পেনশন এবং বীমা কোম্পানিগুলি সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ক্রয়-বিক্রয়ে অংশ নেওয়ার পথ প্রশস্ত করার জন্য এসএমই বোর্ডের নিয়ম শিথিল করার জন্য বিএসইসিকে অনুরোধ জানায়।

পরবর্তীকালে, নিয়ন্ত্রক সংস্থা চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে একটি সার্কুলার জারির মাধ্যমে জানায় যে কোনও বিনিয়োগকারীর যদি বাজারে ২০ লাখ টাকা বিনিয়োগ থাকে তবে তিনি এসএমই খাতের শেয়ার ক্রয় বিক্রিয় করতে পারবে। এজন্য পূর্বানুমোতির প্রয়োজন হবে না।

বিএসইসি’র এমন নির্দেশনার কারনে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি করার সুযোগ পায়। এতে অনেক সাধারণ বিনিয়োগকারী গুজব এবং অনুমানে মনোযোগ দিয়ে এসইমই খাতের শেয়ার পিছনে ছুটতে থাকে।
পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞরা বলছেন তালিকাভুক্ত এসএমই খাতের কোম্পানিগুলো অল্প সংখ্যক শেয়ার অফলোড করেছে, সেহেতু প্রায়শই অনুমান করা হয় যে তাদের শেয়ারের দাম আরও বাড়বে। যা এখাতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করছে।

উদাহরণস্বরূপ তারা বলছেন হিমাদ্রি লিমিটেড। এটি এজাব গ্রুপের একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠনটি দেশের উত্তরাঞ্চলে ছয়টি আলু কোল্ড স্টোরেজ ইউনিট পরিচালনা করে। শেয়ার বাজারে প্রতিষ্ঠনটি ১১,৭৭৫টি শেয়ার অফলোড করেছে, যা তালিকাভুক্ত এসএমইগুলির মধ্যে সর্বনিম্ন। বিডি পেইন্টস, একটি পেইন্ট প্রস্তুতকারক, প্রায় ৪.২৪ কোটিতে সর্বাধিক সংখ্যক শেয়ার বিক্রি করেছে, ডিএসই ওয়েবসাইটের তথ্য দেখায়।

ডিএসইর তথ্যে দেখা যায়, ১২টি এসএমই-এর মধ্যে, ঈদের ছুটির আগের শেষ কর্মদিবসে ৭ জুলাই ছয়টি কোম্পানির দাম ৯ শতাংশের বেশি বেড়েছে। কোম্পানিগুলো হলো বেঙ্গল বিস্কুট, বিডি পেইন্টস, মোস্তফা মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজ, মাস্টার ফিড অ্যাগ্রোটেক, নিয়াল্কো অ্যালয়স এবং মামুন অ্যাগ্রো প্রোডাক্টস।
আরও চমকপ্রদ বিষয় হল বেশিরভাগ এসএমই খাতের শেয়ার কিছু ব্লু-চিপ কোম্পানির তুলনায় বেশি লেনদেন করছে, যে প্রতিষ্ঠনগুলো ভাল কোম্পানি হিসেবে সুপরিচিত।

উদাহরণস্বরূপ, বেঙ্গল বিস্কুট, বিডি পেইন্টস, নিয়াল্কো অ্যালয়স, ওয়ান্ডারল্যান্ড টয়স, এবং স্টার অ্যাডেসিভ সবই ৫০ টাকার উপরে ট্রেড করছে যেখানে ব্র্যাক ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইডিএলসি, লঙ্কাবাংলা, মোবাইল ফোন অপারেটর রবি, বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী সামিট পাওয়ার এবং গ্যাস ইউটিলিটি কোম্পানি তিতাস গ্যাস ৫০ টাকার নিচে লেনদেন করছে।

বিএসইসির কর্তা ব্যাক্তিরা বলছেন ব্রোকারেজ হাউজগুলোর অনুরোধে নিয়ন্ত্রক সংস্থা শর্ত শিথিল করেছে। তারা বলছেন যেহেতু তালিকাভুক্ত এসএমইর খাতের প্রতিষ্ঠনগুলোর শেয়ারের সংখ্যা কম, তাই তাদের দাম অন্য যে কোন প্রতিষ্ঠানের তুলনার বেশি বেড়েছে। তবে বেশি পরিমান এসএমই কোম্পানি পুঁজিবাজারে আসলে এসব সমস্যা অনেকাংশ কেটে যাবে। তবে কেউ বেআইনিভাবে কিছু করছে কিনা তা খুঁজে বের করার জন্য বিএসইসি নজরদারি করছে বলে তারা জানান।

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.