আজ: শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪ইং, ২৮শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

০৪ অগাস্ট ২০২২, বৃহস্পতিবার |

kidarkar

ঘুরে দাঁড়িয়েছে পুঁজিবাজার, আশান্বিত বিনিয়োগকারীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক : টানা উত্থানে আশান্বিত বিনিয়োগকারীরা. তারা আশা করছেন বাজার ইতিবাচক থাকলে হারানো বিনিয়োগ ফিরে আসবে।আসবে নতুন বিনিয়োগ।

আলতাফ হোসেন পেশায় শিক্ষক। প্রায় দেড় যুগ ধরে ঢাকার একটি বেসরকারি কলেজে পড়িয়ে আসছেন। চাকরি জীবনের শুরু থেকেই সঞ্চয়ের একটি অংশ তিনি শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করেন।

দীর্ঘদিন পর ছোট্ট বিনিয়োগগুলো জমে বেশ স্বাস্থ্যবান হয়েছিলো। তবে শেয়ারবাজারে করোনা ও ইউক্রেন-রাশিয়া সঙ্কটের প্রভাব পড়লে বিনিয়োগ হারাতে শুরু করেন তিনি। সেই প্রভাব এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেননি। এরপরও বাজারের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি দেখে তিনি বেশ আশাবাদী।

তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) যে পদক্ষেপগুলো নিয়েছে তা বেশ ইতিবাচক। বিশেষ করে এক্সপোজার লিমিট ক্রয় মূল্যে নির্ধারণের যে দাবি বিনিয়োগকারীদের ছিলো তা পূরণ হয়েছে। এখন বাজার ধারাবাহিকভাবে ভালো থাকবে। বাজার ইতিবাচক থাকলে আশা করি হারানো বিনিয়োগ ফিরে আসবে।

প্রায় একই কথা বলেন নাসরিন জাহান নামের অন্য এক বিনিয়োগকারী। পেশায় গৃহিণী নাসরিন প্রাইমারি মার্কেটে বিনিয়োগের মাধ্যমে শেয়ার ব্যবসা শুরু করেন। তবে প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিও’র নিয়ম পরিবর্তনের পর সেকেন্ডারি মার্কেটে বিনিয়োগ বাড়ান। কিন্তু বাজারের সাম্প্রতিক পতনে পুঁজি হারাতে বসেন তিনি বলেন, বাজার স্থিতিশীল করতে সম্প্রতি যে পদক্ষেপগুলো কমিশন নিয়েছে তা বাস্তবায়ন হলে বাজার ফের চাঙা হবে। এতে দাম সমন্বয় করা সহজ হবে।

ব্যাংকার গিয়াস আহমেদ বিভিন্ন গুজবে কান দিয়ে মাস ছয়েক আগে লেনদেন বন্ধ করে দিয়েছিলেন। তবে এক্সপোজার লিমিট ইস্যুর সমাধানের পর ফের তিনি বাজারে সক্রিয় হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেছেন। তিনি বলেন, চলতি সপ্তাহে বাজার যেভাবে পারফর্ম করছে; অবস্থা এমন থাকলে ফের বিনিয়োগ করবো।
শুধু আলতাফ, নাসরিন বা গিয়াস সাহেব নয়, চলতি সপ্তাহের বাজার পরিস্থিতি ও এক্সপোজার লিমিট সংক্রান্ত বিষয়ের ইতিবাচক সমাধান হওয়ায় নতুন আশায় বুক বাধছেন অনেক বিনিয়োগকারী।

বুধবারের লেনদেনের চিত্র
জানা গেছে, শেয়ারবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ সীমা (এক্সপোজার লিমিট) বাজারমূল্যে নয় বরং ক্রয়মূল্যের ভিত্তিতে নির্ধারিত হবে- বাংলাদেশ ব্যাংকের এমন এক দাবিতে মঙ্গলবার (২ আগস্ট) রাতে অর্থ মন্ত্রণালয় সম্মতি দিয়েছে। বিষয়টিকে বেশ ইতিবাচকভাবে দেখছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

আর্থিক বিভাগের উপসচিব মো. জেহাদ উদ্দিন স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে বলা হয়, ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯৯ এর ২৬ক ধারায় ব্যাংক কোম্পানি কর্তৃক অন্য কোন কোম্পানির শেয়ার ধারণের হিসাবায়নে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের ঊর্দ্ধসীমা (Exposure Limit) নির্ধারণের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্তৃক ক্রয়কৃত মূল্যকেই ‘বাজারমূল্য’ হিসাবে বিবেচনা করা যেতে পারে।
এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংক কস্ট প্রাইজে ব্যাংকের বিনিয়োগ সীমা গণনায় অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মতি চেয়ে একটি চিঠি প্রেরণ করে। সেই চিঠির জবাবে অর্থ মন্ত্রণালয় এই সম্মতিপত্র প্রেরণ করে। এর ফলে শেয়ারবাজারে দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত এই ইস্যুর সমাধান হলো।
ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী, কোনো ব্যাংক তার মূলধনের ২৫ শতাংশ পর্যন্ত শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করতে পারে। বর্তমানে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগসীমা গণনা করা হয় ক্রয়মূল্য অথবা বাজারমূল্যের মধ্যে যেটি বেশি, সেটি ধরে। এই পদ্ধতিকে ব্যাংকের দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাধা হিসেবে দেখা হয়।
কোনো ব্যাংক তার বিনিয়োগসীমার মধ্যে শেয়ার কিনলে সেটির দর বেড়ে গিয়ে সীমা অতিক্রম করলেই তা বিক্রি করে দিতে হয়। এতে বাজারে বিক্রির চাপ তৈরি হয়। আর ব্যাংক যেহেতু বড় অঙ্কের বিনিয়োগ করে তাই বিক্রির চাপটাও বেশি থাকে।

দেশের শেয়ারবাজারে ব্যক্তিশ্রেণির বিনিয়োগকারীর প্রাধান্য বেশি। ব্যাংকের বিক্রয় চাপ তারা সামাল দিতে পারে না বলেই দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যমান নিয়মটি পরিবর্তনের দাবি জানিয়ে আসছিলেন বিনিয়োগকরীরা।
এদিকে পতনমুখি বাজারকে ইতিবাচক ধারায় আনতে ফের ফ্লোর প্রাইস ব্যবস্থা চালু করে কমিশন। একই সাথে বড় বিনিয়োগকারীদের আরও বিনিয়োগের আহ্বান জানায় বিএসইসি।
শুধু তাই নয়, শেয়ারবাজারকে গতিশীল করতে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স এসোসিয়েশনের সাথে বৈঠক করে কমিশন।

বিএমবিএ-ও বিনিয়োগ বাড়ানোর আশ্বাস দেয়।বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব পাবলিকলি লিস্টেড কোম্পানিজের (বিএপিএলসি) প্রতিনিধিরাও বিএসইসির সাথে বৈঠক করে। কমিশন তাদের নিজ কোম্পানির শেয়ার কেনার অনুরোধ করে।

এসব পদক্ষেপের পর বাজারে সুবাতাস বইছে। ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে সূচক ও লেনদেন। ফলে আশাহত বিনিয়োগকারীরা ফের আশান্বিত হচ্ছেন।

এদিকে দ্রুতই বন্ড ইস্যুর সমাধান হবে বলে জানিয়েছেন বিএসইসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। বুধবার গণমাধ্যমে তিনি বলেন, বন্ডের বিনিয়োগ শেয়ারবাজার বিনিয়োগসীমার বাইরে থাকবে। খুব শিগগিরই এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসবে।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব পদক্ষেপে দীর্ঘমেয়াদে না হলেও শেয়ারবাজার চলমান সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে পারবে।

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.