তাইওয়ানের চারপাশে চীনের সামরিক মহড়া
আন্তর্জাতিক ডেস্ক:মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির সফরের একদিন পরই তাইওয়ানের চারদিকে সামরিক মহড়া শুরু করেছে চীন। বৃহস্পতিবার (৪ আগস্ট) চীনা সামরিক বাহিনী লাইভ-ফায়ার (তাজা গোলাবর্ষণ)-সহ এই মহড়া শুরু করে।
বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনা সামরিক বাহিনী স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার দুপুরে (বাংলাদেশ সময় সকাল ১০টায়) তাইওয়ানের আশেপাশের সাগরে লাইভ-ফায়ারসহ সামরিক মহড়া শুরু করেছে বলে জানিয়েছে চীনের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধম সিসিটিভি।
বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া এই মহড়া চলবে আগামী রোববার পর্যন্ত। নিজেদের সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে তাইওয়ানের একটি মানচিত্র অন্তর্ভুক্ত করে সিসিটিভি বলেছে, ‘আজ দুপুর ১২ টা থেকে আগামী ৭ আগস্ট পর্যন্ত পিপলস লিবারেশন আর্মির একটি গুরুত্বপূর্ণ সামরিক মহড়া হচ্ছে।’
এদিকে তাইওয়ানের সামরিক বাহিনী বৃহস্পতিবার বলেছে, তাদের বাহিনী দ্বীপের আশপাশের জলসীমায় অভূতপূর্ব চীনা এই সামরিক মহড়া ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং সংঘাতের জন্য প্রস্তুত রয়েছে। যদিও সংঘাত হোক তারা তা চাইবে না।
তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘জাতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় যুদ্ধ না করে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার নীতি বজায় রাখবে এবং (চীনের সঙ্গে) বিরোধ না বাড়াতে ও বিরোধ সৃষ্টি না করার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে যাবে।’
মার্কিন হাউসের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির স্ব-শাসিত ওই দ্বীপে যাওয়ার পর গুরুত্বপূর্ণ এই আন্তর্জাতিক জাহাজ চলাচলের রুটটিতে চীন শক্তি প্রদর্শন করার সুযোগ পেয়েছে। মূলত ন্যান্সি পেলোসির সফরের প্রধান প্রতিক্রিয়া হিসেবে তাইওয়ানের চারপাশের অবস্থানগুলোতে সামরিক মহড়া চালানোর পরিকল্পনা নেয় বেইজিং। বড় মাপের এই মহড়ায় সরাসরি গোলাবর্ষণের ঘটনাও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
বুধবার চীনের এই পরিকল্পনার তীব্র নিন্দা করে ভূখণ্ডটির সরকার। তাইওয়ানের সামরিক বাহিনী বলছে, এই ধরনের মহড়া ‘তাইওয়ানের আঞ্চলিক স্থান আক্রমণ’ এবং ‘তাইওয়ানের আকাশ ও সমুদ্র অবরোধের সমান।’
পেলোসির সফরের শাস্তি হিসেবে তাইওয়ানকে পুরোপুরি ঘিরে ধরে এই সামরিক মহড়া চালাচ্ছে চীন। তাইওয়ানের দাবি, চীনের মহড়ার কারণে ১৮টি আন্তর্জাতিক রুট বন্ধ করে দিতে হবে।
সংবাদমাধ্যম বলছে, মার্কিন হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির তাইওয়ান সফর নিয়ে তীব্র আপত্তি জানিয়েছিল চীন। তা সত্ত্বেও পেলোসি তাইওয়ান গেছেন। চীন এখন তাদের সামরিক শক্তির কিছুটা আভাস যুক্তরাষ্ট্রকে দেখিয়ে প্রতিবাদ জানাতে চাইছে।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার রাতে তাইওয়ানের রাজধানী তাইপে পৌঁছান ন্যান্সি পেলাসি। ১৯৯৭ সালের পর এটি কোনো মার্কিন শীর্ষ রাজনীতিকের তাইওয়ান সফর। এই সফরকে কেন্দ্র করে চীন-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে উত্তেজনা তুঙ্গে উঠেছে।
দফায় দফায় হুঁশিয়ারি দেওয়া সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রের হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের এই স্পিকারের তাইওয়ান সফরকে মোটেই সহজভাবে নেয়নি চীন। আর তাই ন্যান্সির সফরের প্রতিক্রিয়ায় রাতেই তাইওয়ানে সামরিক পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে ঘোষণা দেয় চীনা প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।
মঙ্গলবার রাতে মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র উইউ কিয়ান সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। উইউ কিয়ান বলেন, ‘চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি অত্যন্ত সতর্ক অবস্থায় রয়েছে এবং তারা সামরিক অভিযানের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত। আমরা তাইওয়ানের বিভিন্ন স্থাপনা লক্ষ্য করে অভিযান চালাব।’
এছাড়া বেইজিংয়ে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিকোলাস বার্নসকে মঙ্গলবার গভীর রাতে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তলব করে। এসময় চীনা এই মন্ত্রণালয় সতর্ক করে বলে, ওয়াশিংটনকে ‘মূল্য চুকাতে হবে’।
অবশ্য তাইওয়ানে পৌঁছানোর ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে বুধবার ভূখণ্ডটি ত্যাগ করেন ন্যান্সি পেলোসি।
শেয়ারবাজার নিউজ/খা.হা.