আন্তঃব্যাংক ডলার বেচাকেনার নির্দেশ
নিজস্ব প্রতিবেদক: ডলার বাজার স্থিতিশীল করতে ব্যাংক থেকে ব্যাংকে বা আন্তব্যাংক ডলার বেচাকেনার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পাশাপাশি বিদেশে আটকে থাকা রপ্তানি মূল্য বা এক্সপোর্ট প্রসিডস দ্রুত দেশে আনার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
রোববার (১৪ আগস্ট) বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে এবিবি ও বাফেদার বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র ও নিবার্হী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম। এতে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার।
বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর কাজী ছাইদুর রহমান,আহমেদ জামাল, একেএম সাজেদুর রহমান খান, আবু ফরাহ মো. নাছের, বিএফআইইউ প্রধান মাসুদ বিশ্বাস ও সংশ্লিষ্ট বিভাগের পরিচালকেরা। এসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ওই সাভায় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির চেয়ারম্যান সেলিম আরএফ হোসাইন, বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার এসোসিয়েশনের (বাফেদা) চেয়ারম্যান আতাউর রহামান প্রধানসহ বিভিন্ন ব্যাংকের এমডিরাও সভায় অংশগ্রহণ করেন।
মুখপাত্র জানান, ডলারের যে সংকট তা কাটিয়ে উঠার জন্যই এবিবি ও বাফেদার সঙ্গে বৈঠক করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাজার স্থিতিশীল করতে তাদের থেকে কিছু পরামর্শ নেয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে কিছু নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তারা আমাদের কথা দিয়েছে দ্রুত সময়ের মধ্যে মার্কেট স্থিতিশীল হয়ে যাবে। নির্দেশনার মধ্যে একাটি হলো ব্যাংকগুলোকে তাদের রপ্তানি বিল দ্রুত দেশে এনে নগদায়ন করা। পাশাপাশি নিজেদের মধ্যে আন্তঃব্যাংক লেনদেন কার্যকর করার ব্যাপারেও নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমদানি কমানোর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক যে সব নির্দেশনা দিয়েছে এটা কার্যকর হতে শুরু করেছে। অলরেডি ৩১ শতাংশ আমদানি কমে এসেছে। আশাকরি আগামী দুই-এক মাসের মধ্যে ডলার বাজার পরিস্থিতি স্থিতিশীল হয়ে যাবে।
ব্যাংক ও খোলাবাজরে ডলার নিয়ে অনিয়ম হচ্ছে- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ডলার মার্কেট কেন্দ্রীয় ব্যাংক সবসময় পর্যবেক্ষণ করছে। এমন কোনো অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এখন আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলারে কিনতে খরচ করতে হচ্ছে ৯৫ টাকা। অর্থাৎ বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারি আমদানি বিল মেটাতে এই দরে ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করছে। নিয়ম অনুযায়ী এটাই ডলারের আনুষ্ঠানিক দর। চলতি বছরের মে মাসের শুরুর দিকে এ দর ছিল ৮৬ টাকা ৪৫ পয়সা। এ হিসাবে দেড় মাসের ব্যবধানে টাকার মান কমেছে ৮ টাকা ৫৫ পয়সা।
তবে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতেও এখন ১০৬ থেকে ১০৮ টাকায় নগদ ডলার বিক্রি হচ্ছে। আর খোলা বাজারে ডলারের দাম ১১৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। এর আগে দেশে খোলা বাজারে ডলারের দাম প্রথমবারের মতো ১০০ টাকার ঘর পেরিয়ে যায় গত ১৭ মে। এরপর আবার কমে আসে। পরে গত ১৭ জুলাই ফের ১০০ টাকা অতিক্রম করে। গত ১০ ও ১১ আগস্ট নগদ ডলার ১২০ টাকায় উঠেছিল।
এদিকে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ডলার সংরক্ষণ করে দাম বাড়িয়ে বিক্রি করার প্রমাণ পাওয়ায় গত ৮ আগস্ট দেশি-বিদেশি ৬টি ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের প্রধানকে অপসারণ করতে নির্দেশ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংকগুলো হলো-বেসরকারি খাতের ব্র্যাক ব্যাংক, ডাচ-বাংলা ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক ও সাউথইস্ট ব্যাংক এবং বিদেশি খাতের স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক।
এছাড়া ডলারের কারসাজি রোধে খোলা বাজার ও এক্সচেঞ্জ হাউজগুলোতে ধারাবাহিক অভিযান পরিচালনা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত সপ্তাহ পর্যন্ত কারসাজির অপরাধে পাঁচ মানি চেঞ্জারের লাইসেন্স স্থগিত করা হয়েছে। পাশাপাশি ৪২টিকে শোকজ করা হয়েছে। এছাড়া লাইসেন্স ছাড়া ব্যবসা করায় বেশকিছু প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বলা হয়েছে।
চলতি মাসের প্রথম ১০ দিনে ৮১ কোটি ৩০ লাখ (৮১৩ মিলিয়ন) মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে বাংলাদেশে। দেশীয় মুদ্রায় (প্রতি ডলার ৯৬ টাকা ধরে) এর পরিমাণ ৭ হাজার ৮০৪ কোটি টাকা। চলমান ধারা অব্যাহত থাকলে মাস শেষে প্রবাসী আয়ের পরিমাণ ২৪৩ কোটি ডলার পর্যন্ত হতে পারে।