৯ ব্যাংকের নিরাপত্তা সঞ্চিতি ঘাটতি ১৮৯৩২ হাজার কোটি টাকা
এ জেড ভূঁইয়া আনাস: খেলাপি ঋণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঝুঁকিপূর্ণ এসব ঋণের বিপরীতে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা সঞ্চিতি (প্রভিশন) সংরক্ষণে ব্যর্থ হয়েছে নয়টি ব্যাংক। এ নয় ব্যাংকের তালিকায় চারটি সরকারি ও বেসরকারি পাঁচটি ব্যাংক রয়েছে।
চলতি বছরের জুন শেষে এই ৯ ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৯৩২ হাজার কোটি টাকা। যেসব ব্যাংক ঘাটতি রয়েছে সেখানে আমাতের নিরাপত্তা কম বলে মত সংশ্লিষ্টদের। তাদের মতে খেলাপি ঋণ, পুনতফসিল, প্রভিশন ঘাটতি সমস্যা সমাধানে একটি ব্যাংকিং কমিশন গঠন করা উচিৎ। ব্যাংকিং কমিশনের মাধ্যমে এর আগেও বিভিন্ন সমস্যার সমাধান হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, অগ্রণী, বেসিক, জনতা, রূপালী, বাংলাদেশ কমার্স, মিউচ্যুলয়াল ট্রাষ্ট, ন্যাশনাল, সাউথইস্ট ও স্ট্যানডার্ড ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ ১৮ হাজার ৯৩১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা ছাড়িয়েছে। কিছু কিছু ব্যাং প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত প্রভিশন সংরক্ষণ করায় পুরো ব্যাংকিং খাতের ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ১২০ কোটি টাকা। গত মার্চ প্রান্তিকে ব্যাংকগুলোর প্রভিশন ঘাটতি ছিলো ২০ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা।
৯টি ব্যাংকের মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক রয়েছে চারটি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঘাটতি রয়েছে বেসিক ব্যাংকের। জুন শেষে ব্যাংকটির প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে চার হাজার ৪৪১ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। এর পরেই রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংক। অগ্রণীর ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি দুই হাজার ৯৭৩ কোটি ২২ লাখ টাকা। তালিকায় তৃতীয় স্থানে রয়েছে রূপালী ব্যাংক লিমিটেড। দুই হাজার ৯৬২ কোটি ১০ লাখ টাকা প্রভিশন ঘাটতিতে পড়েছে ব্যাংকটি। আর জনতা ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৬৪০ কোটি ৫০ লাখ টাকা।
রাষ্ট্রায়ত্ত এ চার ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতিই ১১ হাজার ১৭ কোটি টাকা। তবে ব্যতিক্রম রয়েছে রাষ্ট্রমালিকানাধীন দুই ব্যাংক। যারা অতিরিক্ত প্রভিশন রাখতে সমর্থ হয়েছে। এর মধ্যে সর্ববৃহৎ ব্যাংক সোনালী ব্যাংকের প্রভিশন বা নিরাপত্তা সঞ্চিতি অতিরিক্ত রয়েছে ৩৮০ কোটি ২৭ লাখ টাকা এবং বাংলাদেশ ডেভলপমেন্ট ব্যাংকের অতিরিক্ত রয়েছে ১৯ কোটি ৪৯ লাখ টাকা।
এছাড়া বেসরকারি ৫টি ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি রয়েছে সাত হাজার ৯১৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে নানা সমস্যায় জর্জরিত ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেডের ঘাটতি সবচেয়ে বেশি। বেসরকারি খাতের এ ব্যাংকটির প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ সাত হাজার ১১৫ কোটি ৯০ লাখ টাকা। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড (২১৩ কোটি ৯৪ লাখ টাকা), স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক (১৩৮ কোটি ৩৭ লাখ টাকা) এবং সাউথইস্ট ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি রয়েছে ১০২ কোটি ৯৬ লাখ টাকা।
তবে অতিরিক্ত প্রভিশন রেখে নজির স্থাপন করেছে বেসরকারি মালিকানাধীন ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড। ব্যাংকটি এককভাবে সবচেয়ে বেশি প্রভিশন সংরক্ষণ করেছে। এ ব্যাংকটি একাই প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত দুই হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা প্রভিশন রেখেছে। এর পরেই রয়েছে বেসরকারি খাতের অপর ব্যাংক প্রাইম ব্যাংক লিমিটেড। এই ব্যাংকটি অতিরিক্ত ৫৮৬ কোটি এবং পূবালী ব্যাংক রেখেছে ৫১০ কোটি টাকার অতিরিক্ত প্রভিশন রেখেছে। ব্যাংকগুলোর অতিরিক্ত সঞ্চিতি রাখায় সার্বিকভাবে পুরো ব্যাংকিং খাতে প্রভিশন ঘাটতি কম হয়েছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ও অর্থনীতিবিদ ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রভিশন ঘাটতি থাকলে ওই ব্যাংক লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পারে না। ব্যাংক যদি প্রয়োজনীয় প্রভিশন সংরক্ষণে ব্যর্থ হয়, তবে তাদের মূলধন ঘাটতিতে পড়ার শঙ্কা থাকে। এতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে ব্যাংকের উপর। ঝুকিপুর্ন হয়ে যায় আমানত।
প্রসঙ্গত, চলতি ২০২২ সালের জুন প্রান্তিক শেষে ব্যাংকিং খাতের মোট বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৩ লাখ ৯৮ হাজার ৫৯২ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ ১ লাখ ২৫ হাজার ২৫৭ কোটি টাকা। যা মোট বিতরণ করা ঋণের ৮.৯৬ শতাংশ। তিন মাস আগে মার্চ শেষে খেলাপি ঋণ ছিলো ১ লাখ ১৩ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা। সে হিসাবে ৩ মাসে খেলাপি বেড়েছে ১১ হাজার ৮১৭ কোটি টাকা। ২০২১ সালের জুন প্রান্তিক শেষে খেলাপি ছিলো ৯৯ হাজার ২০৫ কোটি টাকা। সে হিসাবে এক বছরের তুলনায় তুলনায় খেলাপি বেড়েছে ২৬ হাজার ৫২ কোটি টাকা। দেশের ইতিহাসে এটি সর্বোচ্চ খেলাপি ঋণ।