আজ: সোমবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৪ইং, ২২শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৩রা রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

২২ অগাস্ট ২০২২, সোমবার |

kidarkar

ওয়ালমার্টের অর্ডার বাতিল, বড় লোকসানের মুখে দেশের পোশাকশিল্প

নিজস্ব প্রতিবেদক : চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী জ্বালানি নিয়ে তৈরি হয়েছে সংকট। এমন অবস্থায় বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অর্ডার (ক্রয়াদেশ) বাতিল করেছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় খুচরা পোশাক বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান ওয়ালমার্ট।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটির অর্ডার বাতিলে বড়সড় লোকসানের শঙ্কায় বাংলাদেশের তৈরি পোশাক (আরএমজি) প্রতিষ্ঠানের মালিকরা। এর অন্যতম কারণ বাংলাদেশে তৈরি পোশাক খাতের অন্যতম প্রধান ক্রেতা ওয়ালমার্ট।
রোববার (২১ আগস্ট) এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম।
তিনি বলেন, ওয়ালমার্ট থেকে আমাদের অর্ডার ৩০ শতাংশ কমে গেছে। অনেকগুলো অর্ডার যেগুলো অলরেডি দেওয়া আছে, তারা বলছে পরবর্তীতে নেবে। অর্থাৎ, হেল্ড আপ (স্থগিত) করে দিয়েছে।
শহীদুল্লাহ আজিম বলেন, যেহেতু ওয়ালমার্ট একটা ভালো কোম্পানি এবং আমাদের থেকে অনেক পোশাক নেয়, অবশ্যই এর একটা প্রভাব পড়বে। এমনিতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আমরা ব্যাকফুটে আছি, তার মধ্যে এই ঘটনা উদ্বেগের বিষয়। অনেকগুলো ক্রেতা ইতোমধ্যে তাদের অর্ডার বাতিল করেছে।
বিজিএমইএ’র তরফ থেকে সংকট নিরসনে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা আসলে সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। আমরা আমাদের উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের মালিকদের সঙ্গে কথা বলেছি। যাদের অর্ডার বাতিল হয়েছে, আমরা তাদের লিস্ট করে ওয়ালমার্টের সাথে এটা নিয়ে বসব।
টেক্সটাইল সম্পর্কিত নিউজপোর্টাল অ্যাপারালরিসোর্সেস.কমের এক প্রতিবেদনে ওয়ালমার্টের সিইও জন ফার্নারের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, ইউরোপ-আমেরিকার ক্রেতারা পোশাক কেনা কমিয়ে দিয়েছেন। এতে করে ওয়ালমার্টের স্টক বেড়ে গেছে। এতে অনেক অর্ডার বাতিল করতে হচ্ছে। ওয়ালমার্ট তাদের বেশির ভাগ গ্রীষ্মকালীন সংগ্রহ বিক্রি করে দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি তাদের ইনভেনটরি নতুন করে ঠিক করছে। চলমান পরিস্থিতি ঠিক হতে ছয় মাস লেগে যেতে পারে। তবে, প্রতিষ্ঠানটি আশা করছে তারা এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম খুচরা বিক্রেতা হওয়ায় ওয়ালমার্টের ফলাফল সামগ্রিকভাবে মার্কিন অর্থনীতির শক্তির পরিমাপ হিসেবেও দেখা হয়। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ফলাফলগুলির আরেকটি লক্ষণ যে, সামনের মাসগুলিতে সম্ভাব্য মন্দার উদ্বেগজনক সূচক থাকা সত্ত্বেও, ভোক্তাদের ব্যয় শক্তিশালী রয়েছে।
অন্যদিকে, দেশে জ্বালানি তেলের দাম হঠাৎ অস্বাভাবিক হারে বাড়ায় পোশাক উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে অন্তত ২০ শতাংশ। বাড়তি খরচ সামাল দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন পোশাক কারখানার মালিকরা।
কারখানার মালিকরা বলছেন, বর্তমানে উৎপাদন পর্যায়ে রয়েছে এমন পোশাকের দাম অন্তত দুই মাস আগে নির্ধারণ করা হয়েছে। তখনকার পরিস্থিতি অনুযায়ী চুক্তি হয়েছে। এর মধ্যে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় খরচ বেড়ে গেছে। অন্যদিকে, চুক্তি অনুযায়ী এ পর্যায়ে এসে নতুন করে দাম নির্ধারণ করতে পারছেন না তারা। ফলে লোকসান গুনতে হচ্ছে পোশাক কারখানার মালিকদের।
অর্থনীতি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন পরিস্থিতিতে বাজার স্থিতিশীল না হলে, শিগগিরই ঠিক হবে না পোশাকের বাজার। এতে, হুমকির মুখে পড়তে পারে পোশাকশিল্প। ভর্তুকি না দেওয়া গেলেও সরকারের তরফ থেকে জ্বালানির মূল্য বিশ্ববাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে কমানো গেলে কিছুটা উপশম হতে পারে। তবে দীর্ঘস্থায়ী সমাধানের জন্য আপাতত তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে ইউরোপ-আমেরিকার বাজারের দিকেই

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.