আজ: রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪ইং, ৩০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

২৩ অগাস্ট ২০২২, মঙ্গলবার |

kidarkar

অর্থপাচার ও হুণ্ডি: বিএফআইইউ’র নজরদারিতে ২৮ মানিচেঞ্জার

এ জেড ভূঁইয়া আনাস: অর্থ পাচার বা হুন্ডিতে কোনো মানিচেঞ্জারের সম্পৃক্ততা আছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে তদন্তে নেমেছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট-বিএফআইইউ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শনে বিভিন্ন অনিয়মের তথ্য উঠে আসার পর এখন উদ্যোগ নিয়েছে সংস্থাটি। ইতোমধ্যে সন্দেহভাজন ২৮টি প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্য তলব করেছে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে কাজ করা এ ইউনিট। বিএফআইইউ সরেজমিন পাওয়া বিভিন্ন ডকুমেন্টের সঙ্গে এসব প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবের লেনদেন যাচাই করবে। এদিকে, ডিজিটাল হুন্ডিতে জড়িত সন্দেহে বিভিন্ন এমএফএস প্রতিষ্ঠানের কয়েকশ এজেন্টের তথ্য চেয়েও বিএফআইইউ চিঠি দিয়েছে।

সংশ্নিষ্টরা জানান, বিভিন্ন মানিচেঞ্জারের ব্যাংক হিসাবে অস্বাভাবিক কোনো লেনদেন হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ডলার কেনাবেচায় কোনো কোনো মানিচেঞ্জার অস্বাভাবিক মুনাফা করেছে, তাও দেখা হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে আমদানি, রপ্তানি ও রেমিট্যান্সের পাশাপাশি নগদ ডলারের দর অনেক বেড়েছে। গত ১০ আগস্ট খোলাবাজারে ডলারের দর সর্বোচ্চ ১১৯ টাকায় ওঠে। এখন দর কিছুটা কমেছে। গতকাল খোলাবাজারে ১০৮ থেকে ১১০ টাকায় ডলার বেচাকেনা হয়।

যেসব প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব তলব: বিএফআইইউ থেকে ব্যাংক হিসাব চাওয়া হয়েছে এমন প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- নিবেদিতা মানি এক্সচেঞ্জ, বিজয় মানি এক্সচেঞ্জ, বিজয় ইন্টারচেঞ্জ, সিটি মনিটারি এক্সচেঞ্জ, বকাউল মানি এক্সচেঞ্জ, মনডিয়াল মানি এক্সচেঞ্জ, নবিলস মানিচেঞ্জার, হিমালয় ডলার মানিচেঞ্জার, ক্যাপিটাল মানিচেঞ্জার, মেট্রো মানি এক্সচেঞ্জ, ডিপেনডেন্ট মানিচেঞ্জার, ঢাকা মানিচেঞ্জার, লর্ডস মানিচেঞ্জার, গ্লোরি মানি এক্সচেঞ্জ, ডিএন মানিচেঞ্জার, অংকন মানি এক্সচেঞ্জ, বিনিময় মানি এক্সচেঞ্জ, বুড়িগঙ্গা মানি এক্সচেঞ্জ, কুমিল্লা মানি এক্সচেঞ্জ, এএসএন মানিচেঞ্জার, বিকেবি মানি এক্সচেঞ্জ, কেয়া মানি চেঞ্জার, আলফা মানি এক্সচেঞ্জ, ক্রিস্টাল মানি এক্সচেঞ্জ, দি লিঁয়াজো মানি এক্সচেঞ্জ ও উত্তরা মানিচেঞ্জার।

বাংলাদেশ ব্যাংক এ পর্যন্ত ৬০২টি মানিচেঞ্জারের লাইসেন্স দিলেও বর্তমানে ২৩৫টি প্রতিষ্ঠানের বৈধতা রয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স স্থগিত করেছে। লাইসেন্স ছাড়াই ব্যবসা করায় ৯টি প্রতিষ্ঠানের তালিকা দেওয়া হয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে এবং ৪২টি প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্ট তলব করা হয়েছে।

মানিচেঞ্জার প্রতিষ্ঠানের লেনদেন পরিচালনার নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। বিশেষ করে দিন শেষে কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছে ২৫ হাজার ডলারের বেশি থাকলে তা ব্যাংক হিসাবে জমা দিতে হয়। নির্দিষ্ট ফরম পূরণ করে ডলার বেচাকেনা করতে হয়। কত ডলার বেচাকেনা হচ্ছে, তার তথ্য নিয়মিতভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে দিতে হয়। তবে ব্যাংকের মতো এসব প্রতিষ্ঠানে জোর তদারকি না থাকায় অনেক মানি চেঞ্জার নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়েছে বলে মনে করছেন বিআইএফইউর কর্মকর্তারা।

এদিকে, সন্দেহভাজন লেনদেন ও হুণ্ডির সাথে যুক্ত থাকার সন্দেহে কিছু এমএফএস এজেন্টের লেনদেন খতিয়ে দেখা হচ্ছে: বিএফআইইউ কোনো কোনো মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের (এমএফএস) এজেন্ট পয়েন্টে অস্বাভাবিক লেনদেনের তথ্য পেয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা গেছে, একটি এজেন্টের মাধ্যমে রাত ১২টার পর ৩০ জন ব্যক্তির এমএফএস হিসাবে ক্যাশ ইন করা হয়েছে। ভিন্ন ভিন্ন এলাকার যেসব অ্যাকাউন্টে টাকা স্থানান্তর করা হয়েছে, তাদের সুবিধাভোগীদের আত্মীয়স্বজন বিদেশে থাকেন। এরকম কয়েকশ এজেন্টের লেনদেনের তথ্য চেয়ে এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোতে চিঠি দেয় বিএফআইইউ। এসব তথ্য চাওয়ার পর একটি এমএফএস প্রতিষ্ঠান প্রায় চারশ এজেন্টশিপ স্থগিত করে বিএফআইইউকে জানিয়েছে।

সংশ্নিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, সরকারি কর্মকর্তা ও ব্যাংকারদের বিদেশ ভ্রমণ সীমিত করার নির্দেশনার পরও খোলাবাজারে নগদ ডলারের দর অনেক বেড়েছে। এর একটি কারণ হলো মানিচেঞ্জার প্রতিষ্ঠানগুলো ডলারের বাড়তি চাহিদার সুযোগ নিয়ে অস্বাভাবিক মুনাফা করেছে।

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.