‘শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিত করেই কাজ শুরু করবে বিআরটি’
নিজস্ব প্রতিবেদক : শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিত হলেই ফের বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের কাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছেন এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শফিকুল ইসলাম। শুক্রবার (২৬ আগস্ট) রাজধানীর বলাকা ভবনে থেকে বাস র্যাপিড ট্রানজিটের পরিচালনা পরিষদের সদস্যদের নিয়ে প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানান তিনি।
এ প্রকল্পে কাজের নিরাপত্তা দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো আপস করা হবে না জানিয়ে এসময় তিনি বলেন, আমাদের পরামর্শকরা যখন বলবে নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়েছে, তখনই ফের কাজ শুরু হবে। সেটা আজকে নাগাদ হতে পারে, কালকেও হতে পারে। সম্পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত হলেই কাজ শুরু করবো। সেটা যদি ১০ দিনও লাগে, ১৫ দিন লাগে বলে যোগ করেন তিনি।
এসময় শফিকুল ইসলাম জানান, ঠিকাদার কর্তৃপক্ষের দুটি দল চীন থেকে এসেছে। তাদের সঙ্গে আমরা মিটিং করেছি, তারা আশ্বস্ত করেছেন। তাদের কাছে আমাদের মূল তিনটা চাওয়া। ফান্ডের যে ঘাটতি এটা পূরণ করতে হবে। লোকবলের ঘাটতি পূরণ করতে হবে। শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। তারা সব বিষয়ে একমত হয়েছেন।
বিআরটি প্রকল্পের বর্তমান কাজ নিয়ে এ কর্মকর্তা বলেন, আমরা অফিসিয়ালি বলি সাসপেন্ডেট আছে। যে যে পয়েন্টে নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়ে যাবে। সেটা যদি আমাদের পরামর্শকরা সন্তুষ্ট হয়ে যায় তাহলে কাজ শুরু হয়ে যাবে।
নিরাপত্তা নিশ্চিত ছাড়াই কীভাবে কাজ চলছিল জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভাবা যাক আর না যাক ৮০ শতাংশ কাজ শেষ হয়ে গেছে। এতো ঘাটতির পরও ৮০ শতাংশ কাজ হয়ে গেছে। যদি এ ঘাটতি না থাকত কোথাও কোথাও শতভাগ কাজ শেষ হয়ে যেত। তাদের ঘাটতির জন্যই আমরা পিছিয়ে আছি।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কী অবহেলা থেকে ছাড় পেতে পারে-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, টোটাল কাজ স্টপ করে রেখেছি। নিরাপত্তার ক্ষেত্রে যদি শতভাগ নিশ্চিত না হই, তাহলে কোনোভাবেই তাদের কাজ করার অনুমতি দিচ্ছি না। দেবোও না।
আগে আগে কেন নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেননি প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, এ বিষয়ে তিনি আগে বলেছেন। তবুও কেন তাকে বিব্রত করা হয় সে বিষয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। তিনি বলেন, আমাদের উপায় নেই। তাদের নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে।
তদারকি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতি আছে কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, গাফিলতির বিষয়ে তদন্ত কমিটি কাজ করছে। তাদের প্রতিবেদন না পাওয়া পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলতে পারছি না। বাস্তব ব্যাপারটা হলো ঠিকাদারদের ওপরে দোষ চাপালেই হয়। পরামর্শ দাতাদের যারা তদারকি করছেন তাদেরও দায় কিছুটা রয়েছে। তবে মূল দায় ঠিকাদারের।
ক্রেন দুর্ঘটনায় পাঁচজনের মৃত্যুর পর নতুন করে আলোচনায় রয়েছে এ বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্প। রাজধানী ঢাকার সঙ্গে গাজীপুরের যোগাযোগ সহজ-সময় সাশ্রয়ী করতে প্রকল্পটির কাজ শুরু হয় ২০১২ সালের ডিসেম্বরে। চার বছর মেয়াদান্তে কাজ পুরোপুরি শেষ হওয়ার কথা। তারপর কেটে গেছে আরও ছয় বছর। খরচ বেড়েছে দুই হাজার কোটি টাকার বেশি। এই দশ বছরে একাধিক দুর্ঘটনায় এই প্রকল্প কেড়েছে ছয় প্রাণ। চীনা নাগরিকসহ আহত হন আরও ৯ জন। আর ২০ কিলোমিটার (নিচ ও উড়ালসহ) রাস্তা তৈরি করতে ধুলাবালি, যানজটে সীমাহীন দুর্ভোগ তো নিত্যসঙ্গী।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, এ প্রকল্পে সড়ক হবে ২০ দশমিক ২০ কিলোমিটার। এর মধ্যে ভূমিতে থাকবে ১৫ দশমিক ৭ কিলোমিটার এবং উড়াল সড়ক হবে সাড়ে চার কিলোমিটার, যা নির্মাণের অগ্রগতি ৫০ দশমিক ৯০ শতাংশ।
টঙ্গীতে ১০ লেন ব্রিজ তৈরি হচ্ছে, এর অগ্রগতি ৬০ দশমিক ৭০ শতাংশ। ছয়টি ফ্লাইওভার হচ্ছে, যেগুলোর মোট দৈর্ঘ্য দুই হাজার ৮১২ দশমিক ৫০ মিটার। এর মধ্যে বিমানবন্দর ফ্লাইওভার ৮১৫ মিটার, জসিমউদ্দিন ফ্লাইওভার ৫৮০ মিটার, কুনিয়া ফ্লাইওভার ৫৫০ মিটার, ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি ফ্লাইওভার ৫৫০ মিটার, ভোগড়া ফ্লাইওভার ৫৮০ মিটার ও জয়দেবপুর ফ্লাইওভার ২ হাজার ১৪ মিটার। এ ছয় ফ্লাইওভার নির্মাণকাজের অগ্রগতি ৭৩ দশমিক ৩০ শতাংশ।
গাজীপুরে একটি বাস ডিপো থাকছে, যার কাজ শতভাগ সম্পন্ন। রুটে মোট স্টেশন ২৫টি। থাকছে ৫৬ কিলোমিটার দীর্ঘ ১১৩টি অ্যাকসেস রোড। প্রকল্পের আওতায় ২৪ কিলোমিটার হাই-ক্যাপাসিটি ড্রেন নির্মাণ কাজ চলমান, যার অগ্রগতি ৯৭ দশমিক ১০ শতাংশ। রুটের মোড়গুলোতে ট্রাফিক লাইট এবং ১৫০টি ক্লোজড-সার্কিট ক্যামেরা স্থাপন করা হবে।
এ প্রকল্পের আওতায় তুরাগ নদীর ওপর ১০ লেনবিশিষ্ট টঙ্গী ব্রিজ এবং ৬টি এলিভেটেড স্টেশনসহ সাড়ে ৪ কিলোমিটার এলিভেটেড সেকশন নির্মাণ করছে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। এলজিইডির তত্ত্বাবধানে গাজীপুরে বিটিসিএলের জমিতে বিআরটি ডিপো, ১০টি কিচেন মার্কেট ও বিআরটি করিডোরের উভয়পাশে ১৪১টি অ্যাকসেস রোডের উন্নয়নকাজ চলছে।
এছাড়া গাজীপুর থেকে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত প্রস্তাবিত করিডোর বরাবর এক হাজার জ্বালানি সাশ্রয়ী সড়কবাতি স্থাপন কাজও চলমান।