আজ: রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫ইং, ৭ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২১শে শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

২৮ অগাস্ট ২০২২, রবিবার |

kidarkar

পূর্বের দুর্বল ব্যাংককে থাকছে না পর্যবেক্ষক!

এ জেড ভূঁইয়া আনাস: বিভিন্ন সময় দুর্বল হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার পর কয়েকটি ব্যাংককে বিভিন্ন মেয়াদে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দিয়েছিলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এই পর্যবেক্ষকদের তেমন কোন ক্ষমতা না থাকায় ব্যাংককের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারতেন না। এবার ওই ব্যাংকগুলো থেকে পর্যবেক্ষক তুলে নিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অর্থাৎ মেয়াদ শেষ হলে আগের চিহ্নিত দুর্বল ব্যাংকগুলোতে নতুন করে পর্যবেক্ষক দেওয়া হবে না। তবে সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে যে ১০ টি ব্যাংককে নতুন করে দুর্বল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে এই ব্যাংকগুলোতে পর্যবেক্ষক দেওয়া হবে। যাদের ক্ষমতা আগের পর্যবেক্ষকদের থেকে বেশি হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই প্রতিনিধিরা চাইলে বোর্ডের সিদ্ধান্তে মতামত দিতে পারবেন বলেও জানা গেছে।

বড় ধরনের অনিয়মের আশঙ্কায় ১৯৯৪ সালে প্রথম ওরিয়েন্টাল ব্যাংকে পর্যবেক্ষক নিয়োগ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপরও অনিয়ম ঘটায় ২০০৬ সালে পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে এবং প্রশাসক নিয়োগ দিয়ে ব্যাংকটির নিয়ন্ত্রণ নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরপর ২০০৮ সালে ব্যাংকটির নাম পরিবর্তন করে আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক করা হয়। তবে ব্যাংকটি এখনো আগের মতোই ধুঁকছে। এরপর আরও কয়েকটি ব্যাংকে পর্যবেক্ষক নিয়োগ করা হয়।

তথ্যমতে, সোনালী, জনতা, রূপালী, অগ্রণী, পদ্মা, আইসিবি ইসলামিক, বাংলাদেশ কমার্স এবং ওয়ান – এই আটটি ব্যাংকে বর্তমানে পর্যবেক্ষক রয়েছে। অন্যদিকে চারটি ব্যাংকের পর্যবেক্ষকের মেয়াদ শেষ হয়েছে।

ব্যাংকগুলো হলো- বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক এবং ন্যাশনাল ব্যাংক। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের পুনর্নিয়োগের বিষয়ে ভাবছে না । কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন উর্ধতন কর্মকর্তা জানান, এই ব্যাংকগুলোতে পর্যবেক্ষক নিয়োগ করা সত্ত্বেও তাদের আর্থিক স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়নি, বরং কিছু ক্ষেত্রে তাদের অবনতি হয়েছে।

প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন সময় দেশের ১৫টি ব্যাংকে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলোতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক পদমর্যাদার কর্মকর্তা ও অন্যান্য ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক পর্যায়ের কর্মকর্তা পর্যবেক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

এর মধ্যে ২০১৫ সালে একসঙ্গে রাষ্ট্রমালিকানাধীন সোনালী, অগ্রণী, জনতা ও রূপালী ব্যাংক এবং বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকে পর্যবেক্ষক দেওয়া হয়। আইসিবি ব্যাংকে ১৯৯৪ সালে, ন্যাশনাল ও বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকে ২০০৪ সালে , রাষ্ট্রমালিকানাধীন বেসিক ব্যাংকে ২০১৩ সালে , ইসলামী ব্যাংকে ২০১০ সালে , এনআরবি কমার্শিয়াল ও ফারমার্স ব্যাংকে (পদ্মা) ২০১৬ সালে এবং এবি ব্যাংকে ২০১৭ সালে পর্যবেক্ষক বসানো হয়।

সর্বশেষ ২০২০ সালের আগস্টে পর্যবেক্ষক বসানো হয় ওয়ান ব্যাংকে। তবে ভবিষ্যতে পর্যবেক্ষকের এই পদ আর থাকছে না ।

সূত্র জানায়, দুর্বল ব্যাংকগুলোর আর্থিক উন্নতির জন্য নতুন পদক্ষেপের অংশ হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সম্প্রতি ন্যাশনাল ব্যাংক, পদ্মা ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, এবং ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তানের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে। অন্য ছয়টি দুর্বল ব্যাংকের সঙ্গেও অনুরূপ সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হবে বলেও জানা গেছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘ব্যাংক থেকে পর্যবেক্ষকদের প্রত্যাহারের বিষয়টি নিয়ে অভ্যন্তরীণভাবে আলোচনা চলছে। নিয়ন্ত্রকের বিষয়ে এখনও কোন সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি।’

চলতি বছরের জুন শেষে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পর্যবেক্ষক থাকা আটটি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৪ হাজার ৮১৯ কোটি ৮৭ লাখ টাকা, যা দেশের ব্যাংকিং খাতের মোট খেলাপি ঋণের ৪৩ দশমিক ৭৬ শতাংশ।

তবে বিষয়টিকে ‘ভুল সিদ্ধান্ত’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন বিশ্লেষকরা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘শুধু ১০ টি ব্যাংককে নিবিড় তত্ত্বাবধানে রেখে সুশাসন ফিরিয়ে আনা যাবে না। সব ব্যাংকেই তদারকির প্রয়োজন রয়েছে।

যেসব ব্যাংকে আগে থেকেই পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেওয়া ছিল তারা কিন্তু স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেননি। শুধু ঘোষণা দিলেই হবে না, আর্থিক খাতের সংকট নিরসনে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে আরো জোরালো ভূমিকা পালন করতে হবে। যেসব আইন আছে, সেগুলো যথাযথভাবে প্রয়োগের কোন বিকল্প নেই।’

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.