আজ: বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪ইং, ২৭শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৮ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

০৩ সেপ্টেম্বর ২০২২, শনিবার |

kidarkar

আমদানি ব্যয় নিয়ন্ত্রণ ও রেমিট্যান্সের উল্লম্ফনে চাপ কমেছে ডলারে

এ জেড ভূঁইয়া আনাস: গেল অর্থবছরের শেষ দিক থেকেই দেশের বাজারে ডলারের সংকট দেখা দেয়। এতে অর্থনীতিতে প্রবল চাপের সৃষ্টি হয়েছে। সংকটের কারণে কার্ব মার্কেট থেকে শুরু করে আন্তঃব্যাংকিং লেনদেনেও ডলারের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ডলার বাজারে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যয় সংকোচন নীতি, রেমিট্যান্সের উল্লম্ফন ও কঠোর মনিটরিংয়ের কারণে এ সংকট অনেকটাই কমে এসেছে। খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে দেশের বাজারে ডলারের সংকট কমে আসবে।

কার্ব মার্কেট ও ব্যাংকগুলোর তথ্য অনুযায়ী, চলতি মাসের প্রথমদিন অর্থাৎ ১ সেপ্টেম্বর রাজধানীর মতিঝিল, ফকিরাপুল, পল্টনসহ বিভিন্ন এলাকায় খোলাবাজারে ডলার বিক্রি হচ্ছে ১০৮ থেকে ১০৯ টাকা ৫০ পয়সায়। আর ১০৬ টাকা ৬০ পয়সা থেকে ১০৭ টাকা ২০ পয়সায় এক্সচেঞ্জগুলোতে ডলার বিক্রি হচ্ছে। তবে আন্তঃব্যাংকে ৯৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে ডলার।

আন্তঃব্যাংক বলতে বোঝায়, এ দামে বিভিন্ন ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করে থাকে। ১ সেপ্টেম্বর আন্তঃব্যাংকে বাংলাদেশ ব্যাংক ৭ কোটি ৬০ লাখ ডলার (৭৬ মিলিয়ন ডলার) বিক্রি করেছে। আর বিভিন্ন ব্যাংক গ্রাহকের কাছে কেনাবেচা করছে ৯৬ টাকা ২৫ পয়সা থেকে ৯৭ টাকার মধ্যে।

বাংলাদেশ মানি এক্সচেঞ্জ অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব মো. হেলার উদ্দিন বলেন, আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম মেনেই ব্যবসা করছি। অনেকের কাছ থেকে শুনছি ডলার বিক্রি নিয়ে কারসাজি হয়েছে। তবে এতে আমরা যারা সত্যিকার ব্যবসায়ী তাদেরকে ইমেজ সংকটে পড়তে হয়েছে।কোন দালাল চক্রের সাতে কোন ব্যবসায়ী জড়িত না। আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের বেধে দেওয়া দরে ডলার বিক্রি করছি। আজ ১০৬ টাকা ৬০ পয়সা থেকে ১০৭ টাকা ২০ পয়সায় বিক্রি হয়েছে।

এর আগে সংকটের কারণে গত মাসের (আগস্ট) প্রথম সপ্তাহ থেকেই টাকার বিপরিতে ডলারের দাম হু হু করে বাড়তে থাকে। দাম বেড়ে হয়ে যায় ১১৯-১২১ টাকায়। কারসাজিতে জড়িয়ে পড়ে অনেক এক্সচেঞ্জ হাউস। এতে সংকট আরও ঘনীভূত হয়, নড়েচড়ে বসে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। শুরু হয় অভিযান।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অভিযানে দাম কমে আসে ডলারের। জরিমানা ও সিলগালা করে দেওয়া হয় অনেক এক্সচেঞ্জ হাউসকে। এতে ডলার কারসাজি কমে আসে। পাশাপাশি ডলার সরবরাহ অব্যাহত রাখে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাজার স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত ডলার সরবরাহ অব্যাহত রাখবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক, এমনটা জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম।

এ নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, অবৈধভাবে ডলার বিক্রি বন্ধে বাংলাদেশ ব্যাংক অভিযান জোরদার করেছে। পাঁচ ব্যাংকের টেজারি প্রধানকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এক্সচেঞ্জ হাউজে আমাদের টিম নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে। কোনো ধরনের অনিয়ম পেলেই কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে টীম ৪২টি প্রতিষ্ঠানকে শোকজ করেছে, একাধিক অফিস সিলগালা করেছে। এতে বাজারের অস্থিরতাভাব কেটেছে অনেকটা। তদারকি ও অভিযান অব্যাহত থাকবে।

অন্যদিকে, বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যয় সংকোচন নীতি ও রেমিট্যান্সের উল্লম্ফনে ডলারের সংকটও কেটে আসবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হিসেবে অনুযায়ী, বিগত দুই মাসে দেশের আমদানি ব্যয় কমেছে অন্তত সাড়ে তিনি বিলিয়ন ডলার। আর জুলাই ও আগস্ট মাসে প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন ৪ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি রেমিট্যান্স। যে কারণে বাজারে ডলার সংকট অনেকটাই কমে এসেছে। এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখা গেলে আগামী দুই মাসের মধ্যে দেশের অর্থনৈতিক সংকট কমে যাবে বলে সম্প্রতি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার।

গভর্নর বলেন, বিশ্ব মন্দার জেরে অভ্যন্তরীণ অর্থনীতির চাপ কমাতে বাজারে চাহিদা নিয়ন্ত্রণ, ডলারসহ টাকার সরবরাহ বৃদ্ধির মাধ্যমে শক্তিশালী অর্থনীতির ভিতটা গড়েছেন তিনি। আর এতেই আমদানিতে ঋণপত্র খোলা কমে দাঁড়িয়েছে ৬ বিলিয়নে, বিপরীতে প্রবাসী আয় ও রপ্তানি বেড়ে সব মিলিয়ে ৬ দশমিক ১ বিলিয়ন ছাড়িয়ছে। টানা কয়েক মাস টালমাটাল অবস্থার পর অবশেষে দেশের অর্থনীতি নিয়ে স্বস্তির খবর দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। জানালেন, মার্চের তুলনায় সাড়ে ২৬ শতাংশ কমেছে ঋণপত্র খোলা, বিপরীতে বেড়েছে রপ্তানি ও প্রবাসী আয়। নিম্নমুখী মূল্যস্ফীতিও। আর এতে আগামী দুই মাসের মধ্যে অর্থনৈতিক চাপ কেটে যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.