আজ: বুধবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪ইং, ২৬শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৮ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

১৩ সেপ্টেম্বর ২০২২, মঙ্গলবার |

kidarkar

আট বছরে ইউরোপ-আমেরিকায় পোশাক রপ্তানি বাড়তে পারে ৫৪ বিলিয়ন ডলার: গবেষণা

নিজস্ব প্রতিবেদক : তৈরি পোশাক খাত থেকে চীনের হিস্যা কমতে থাকা এবং নিজস্ব স্ট্রং ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ ইন্ডাস্ট্রি তৈরি হওয়ায় তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় বাজার ইউরোপ (ইউকে সহ) ও যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। আগামী ২০৩০ সাল নাগাদ এই দুই বাজারে বাড়তি ৫৪ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করার সম্ভব।

গ্লোবাল অ্যাপারেল মার্কেটের গতি প্রকৃতি, পরিসংখ্যান ও বাংলাদেশের সম্ভাব্য সক্ষমতার বিবেচনায় পোশাক রপ্তানির সম্ভাবনার এ হিসাব দাঁড় করিয়েছে গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্ট (র‍্যাপিড)।

এর মধ্যে আলোচ্য সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ২৪ বিলিয়ন ডলার ও ইউরোপের বাজারে ৬৫ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করা সম্ভব।

এক্সপোর্ট প্রমোশন ব্যুরো (ইপিবি) এর হিসাব অনুযায়ী, সর্বশেষ ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশ প্রায় ৪৩ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করে, যারমধ্যে এই বাজারগুলোতে রপ্তানির পরিমাণ ছিল প্রায় ৩৫ বিলিয়ন ডলার।
এরমধ্যে ইউরোপে রপ্তানির পরিমাণ ছিলো ২৬ বিলিয়ন ডলার আর বাকি ৯ বিলিয়ন ডলার যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে। অর্থাৎ আট বছরে উভয় বাজারে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি বাড়াতে হবে আড়াই গুণ করে।

এজন্য ইউরোপের (ইউকে সহ) দেশগুলোতে বছরে গড়ে ১২ শতাংশ ও যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ১৫ শতাংশ হারে রপ্তানি বাড়াতে হবে।

এছাড়া র‍্যাপিড বলছে, বর্তমান অবস্থায়ও ইউরোপে বাড়তি ১৮ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানির সম্ভাবনা রয়েছে বাংলাদেশের, কিন্তু তা ধরতে পারছে না দেশ। তবে, এর কার্যকারণ সম্পর্কে বিস্তারিত কোনো তথ্য দেয়নি র‍্যাপিড।

তাছাড়া, ২০৩০ সালের মধ্যে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন পরবর্তী শুল্কমুক্ত রপ্তানি সুবিধা হারানো এবং জিও পলিটিক্যাল ইস্যুর কারণে কিছু অনিশ্চয়তা ও চ্যালেঞ্জও রয়েছে বাংলাদেশের।

র‍্যাপিডের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক বলেন, “নন-কটন পণ্যে মনযোগ বাড়ানো, বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে আসা, এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড সোশ্যাল গভার্নেন্স (ইএসজি) নিশ্চিত করা, পোর্ট-কাস্টমসসহ লজিস্টিকসে আরো সক্ষমতা বাড়ানো সম্ভব হলে বাংলাদেশের পক্ষে ৮ বছরে বাড়তি ৫৪ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করা সম্ভব।”

তিনি বলেন, “গ্লোবাল পলিটিক্যাল টেনশন এবং অভ্যন্তরীণ কারণে চীনের পোশাকের শেয়ার কমতির দিকে যেতে থাকবে। অন্যদিকে বাংলাদেশের স্ট্রং ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ সাপোর্ট এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভুমিকা রাখবে।”

বাংলাদেশের মোট রপ্তানির ৮০ শতাংশের বেশি আসে তৈরি পোশাক থেকে, আর তৈরি পোশাকের ৮০ শতাংশের বেশি রপ্তানি হয় ইউরোপ (ইউকে সহ) ও যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে।

এর ভিত্তিতে র‍্যাপিড স্টাডিতে দেখিয়েছে, এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে বাংলাদেশের মূল ভরসার জায়গা ঘুরেফিরে ইউএস ও ইউরোপের বাজারই। নন-ট্র্যাডিশনাল বাজারে খুব বেশি পরিমাণে তা বাড়ার সম্ভাবনা নেই।

সর্বশেষ অর্থবছরে নন-ট্র্যাডিশনাল মার্কেটে ১৬টি অঞ্চলে পোশাক রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৬ বিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি।

আবদুর রাজ্জাক বলেন, “গত ১০ বছরে আলোচ্য বাজারগুলোতে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির এভারেজ গ্রোথ রেট বিবেচনায় নিলেও এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব।”

আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কেন্দ্র (আইটিসি) এর তথ্য অনুযায়ী, করোনা মহামারির ১০ বছর আগে ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইউকে সহ) পোশাক রপ্তানি বার্ষিক গড় ১৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পায়; মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই হার ৯ শতাংশ।

ইউএস অ্যাপারেল ইমপোর্ট এর আকার বর্তমানে ৮৭ বিলিয়ন ডলার এবং গত ১০ বছর ধরে গড়ে তা ২.৮ শতাংশ হারে বেড়েছে। আগামী ৮ বছরে তা ৩ শতাংশ হারে বাড়লে এই বাজারের আকার হবে ১১৫ বিলিয়ন ডলার।

অন্যদিকে ইউরোপের পোশাক আমদানির পরিমাণ (ইন্ট্রা ইউরোপিয়ান কান্ট্রি সহ) ২০০ বিলিয়ন ডলার। গত ১০ বছরে এটি গড়ে ২.৮২ শতাংশ হারে বেড়েছে। আগামী আট বছরে তিন শতাংশ হারে বাড়লে এর আকার হবে ২৬০ বিলিয়ন ডলার, যেখানে বাংলাদেশের শেয়ার হতে পারে ৬৫ বিলিয়ন ডলার।

সম্প্রতি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফেকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টারস অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ) ২০৩০ সাল নাগাদ পোশাক রপ্তানি ১০০ বিলিয়ন ডলার করার একটি লক্ষ্য ঠিক করেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কী ধরনের রোডম্যাপ হবে, তা নির্ধারণে কাজ করছে সংগঠনটি। চলতি বছরের শেষ নাগাদ সংগঠনটি এ রোডম্যাপ প্রকাশ করতে পারে।

বিজিএমইএর সহ-সভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম বলেন, “আমরা সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে ২০৩০ সালে ১০০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রার বিষয়টি সামনে এনেছি এবং এটি সম্ভব।”

এ জন্য ম্যান মেইড ফাইবারের এক্সপোর্ট বাড়াতে সরকারের পলিসি সাপোর্ট, ইজ অব ডুয়িং বিজনেস, অবকাঠামোসহ উন্নয়নে গুরুত্ব দেন তিনি।

অবশ্য ২০৩০ সালেই বাংলাদেশ ১০০ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করতে পারবে কিনা, বর্তমান বাস্তবতায় তা নিয়ে সংশয় রয়েছে কিছু উদ্যোক্তার।

দেশের অন্যতম নেতৃস্থানীয় নিটওয়্যার কারখানা প্লামি ফ্যাশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলুল হক বলেন, “৮ বছরে ১০০ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানির জন্য যে ধরনের মাস্টার প্ল্যান ও কার্যক্রম থাকা দরকার তা নেই। অন্যদিকে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে গ্লোবাল ডিমান্ড কমতির দিকে থাকবে।”

নাম প্রকাশ না করার শর্তে অপর একজন পোশাক খাতের উদ্যোক্তা বলেন, “বর্তমানে বাংলাদেশের যা রপ্তানি তার চেয়ে আড়াই গুণ বেশি রপ্তানি করতে হবে আট বছরে। এজন্য কারখানাগুলোর সক্ষমতা এখনো নেই। গত বছরব্যাপী বিস্তর অর্ডার ছিলো, শ্রমিকদের দিয়ে ওভারটাইম কাজ করানোর পর রপ্তানি হয়েছে ৪২ বিলিয়ন ডলার। আট বছর পর এই শ্রমিকের সংখ্যা কি এই হারে বাড়ানো সম্ভব হবে?”

অবশ্য ড. রাজ্জাক বলেন, “আড়াইগুণ বাড়তি উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ানোর প্রয়োজন হলেও কারখানাগুলোতে উচ্চ প্রযুক্তির মেশিনের ব্যবহার বাড়তে থাকায় শ্রমিকের চাহিদা সেই হারে বাড়বে না।”

গত এক দশকের বেশি সময়ের পোশাকের আমদানি রপ্তানির পরিসংখ্যান পর্যালোচনায় দেখা যায়, বড় দুই পোশাকের বাজারে চীনের শেয়ার কমতির দিকে, যার বড় অংশই পেয়েছে বাংলাদেশ ও ভিয়েতনাম।

২০১০ সালে ইউরোপে পোশাকের বাজারে চীনের অংশ ছিল ৪৫ শতাংশ, যা ২০২১ সালে ৩০ শতাংশে নেমেছে। একই সময়ে আলোচ্য বাজারে বাংলাদেশের হিস্যা ১০ শতাংশ থেকে বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। ভিয়েতনামের বেড়েছে সামান্য।

অন্যদিকে ১০ বছরের ব্যবধানে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে চীনের অংশ ৪০ শতাংশ থেকে অর্ধেকে নেমেছে, যার বেশিরভাগই গেছে ভিয়েতনামের কাছে। এই সময়ে বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়লেও ভিয়েতনামের তুলনায় কম হারে বেড়েছে।

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.