চালের বস্তায় ধানের জাত লেখা-ছাঁটাই অনুপাত নির্ধারণে আইন হচ্ছে : খাদ্যমন্ত্রী
চালের বস্তায় ধানের জাত লেখা বাধ্যতামূলক এবং চালের কতটুকু ছাঁটাই করা যাবে তা নির্ধারণ করে আইন হচ্ছে বলে জানিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার।
তিনি বলেন, মিনিকেট বলে কিছু নেই। মিনিকেটের উৎপত্তি জানলে আর এই নাম দিতো না। একসময় ভারত থেকে চিকন চালের বীজ আনতাম মিনি (ছোট) প্যাকেটে করে। এই হলো মিনিপ্যাক। এই বীজ থেকে আমরা নাম দিয়েছি মিনিকেট চাল। এটা বহুবার বলা হয়েছে। ভোক্তা অধিকার এই মিনিকেট নাম উচ্ছেদ করতে অভিযান চালাতে পারে। আমাদের সে ক্ষমতা নেই।
মঙ্গলবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে গণমাধ্যম কেন্দ্রে ‘বিএসআরএফ সংলাপে’ মন্ত্রী এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএসআরএফ) এ সংলাপের আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা একটি আইন মন্ত্রিসভায় দিয়েছি। এখন আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ে আছে। সেখানে বলা আছে ব্র্যান্ড নাম তারা যেটাই দিক, রজনীগন্ধা দিতে পারে, গোলাপফুল, জরিনা, সখিনা- নাম যাই দিক, কিন্তু ধানের জাতের নাম দিতে হবে।
তিনি বলেন, পাশাপাশি ধানের (চালের) যেটুকু ছাঁটাই করা যাবে তারও একটা রেশিও (অনুপাত) আমরা ঠিক করেছি। বেশি পোলিশের (ছাঁটাই) ফলে চালের একটা অংশ তো নষ্ট হয়। এই ক্ষয় যেটা হয় সেটা সারাদেশের মোট উৎপাদনের একটি অংশ। এ কারণে এটাও আমরা নির্ধারণ করেছি। এটা (আইন) পাশ হলে অনেকেই সোজা হয়ে যাবে।
সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, তখন আমরা সাবেক চাল খেতে পারবো। তখন প্যাকেট চালও বন্ধ হয়ে যাবে। এতো ফাইন রাইস খাওয়ার অবস্থা থাকবে না। তখন চাল খসখসে হবে। এখন তো লাল চালের দাম বেশি। সবাই যদি সেদিকে চলে যায় তাহলে তো সব সমান হয়ে গেলো।
চালের দাম ফের বাড়ছে- সরকারের পদক্ষেপ কী জানতে চাইলে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, কয়েকদিন আগে মিল মালিকদের এক সম্মেলনে আমি সতর্ক করেছি। তারা এখনও বলেন যে মিল গেটে দাম বাড়াননি। তাদের বলা হয়েছে তারা যেন মিল গেটের ওয়েবসাইট খোলেন। প্রতিদিন এখানে কোন চালের দাম কত এটা যেন তারা দেন।
তিনি বলেন, এখানে আহ্বান জানাবো পাইকারি ব্যবসায়ী যারা আছেন তারাও যেন ওয়েবসাইট খোলেন। তারা মিলগেটের সঙ্গে মিল রেখে জানাবেন পাইকারি বাজার আজ কী (কত দাম) আছে। তাহলে সামঞ্জস্য আনা যাবে। আমি মনে করি এটা অতি জরুরি। সমন্বয় করতে পারলে ভোক্তারা অনেক উপকৃত হবেন।
মন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশের প্রকৃতি যেমন অস্থির, ব্যবসায়ীরাও অস্থির। দেশে চালের পর্যাপ্ত মজুত আছে। ভারতে যখন ২০ শতাংশ রাজস্ব আরোপ করলো, সেটা সব চালে নয়, আতপ চালে। এটা দেখে দাম বাড়ানো শুরু করেছে। এ মুহূর্তে আউশের যে উৎপাদন, আমি গত ১০-২০ বছরে এমন উৎপাদন দেখিনি। সে জায়গা থেকে দাম বাড়া, আমি মনে করি অনুচিত।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় চালসহ ৯ পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করার যে উদ্যোগ নিয়েছে সে বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, আমি জানি না বাণিজ্যমন্ত্রী কীভাবে বলেছেন। আমার সঙ্গে এটা শেয়ার হয়নি। তবে এটুকু বলতে পারি, মুক্তবাজার অর্থনীতিতে দাম বেঁধে যে তিনি এটা ধরে রাখতে পারবেন… এটা তো আমাদের উৎপাদনের ওপর যেমন নির্ভর করে, তেমনি ক্রাইসিস মনে করলে আমদানিও করা হয়।
তিনি বলেন, উনি (বাণিজ্যমন্ত্রী) যেটা বলেছেন যে আমদানি করা পণ্যে দাম নির্ধারণ করে দেওয়া সম্ভব। কিন্তু যেটা আমাদের দেশে উৎপাদিত হয়, যার সঙ্গে কৃষক জড়িত, উৎপাদন-পরিবহন ব্যয়, তেলের মূল্য, কৃষককে যেমন দামটা পেতে হবে তেমনি আবার ভোক্তাদের জন্য সহনীয় হতে হবে। নিম্ন আয়ের ভোক্তা যারা তাদের জন্য সরকারের পরিকল্পনা তো আছেই।
মন্ত্রী আরও বলেন, প্রয়োজনে চাল আমদানি করে যদি সারাবছর ওএমএস চালাতে হয় আমরা অবশ্যই চালাবো। যারা খুব ভালো চাল খান, প্যাকেট, তারা কিন্তু দামাদামি করেন না। এটার পেছনে দৌড়ানো সবার জন্য কষ্টকর।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিএসআরএফ সভাপতি তপন বিশ্বাস। সঞ্চালনায় ছিলেন সাধারণ সম্পাদক মাসউদুল হক।