চূড়ান্ত রায়েও সাকা চৌধুরীর মৃত্যুদণ্ড বহাল
শেয়ারবাজার রিপোর্ট: একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেয়া মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
বুধবার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। বেঞ্চের অন্য সদস্যরা হলেন, বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
২০১৩ সালের ১ অক্টোবর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর তৎকালীন চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীরের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল সাকা চৌধুরীকে মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ড দিয়ে রায় দেয়। পরে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী পরে এ রায়ের বিরুদ্ধ আপিল করেন।
গত ৭ জুলাই যুক্তিতর্ক (আর্গুমেন্ট) উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে আপিল শুনানি শেষ হওয়ায় ২৯ জুলাই (বুধবার) রায়ের দিন ধার্য করেন আপিল বিভাগ। গত ১৬ জুন শুরু হয়ে ১৩ কার্যদিবসে এ আপিল শুনানি শেষ হয়।
গত ৫ থেকে ৭ জুলাই পর্যন্ত তিন কার্যদিবসে সাকা চৌধুরীর পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন তার আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন ও এসএম শাহজাহান।
প্রথমে আসামিপক্ষে গত ১৬ জুন শুনানি শুরু করে ৮ কার্যদিবস ট্রাইব্যুনালে দেয়া রায়, সাক্ষীদের সাক্ষ্য-জেরা এবং রায় সংক্রান্ত অন্যান্য নথিপত্র (পেপারবুক) উপস্থাপন করেন আইনজীবী এসএম শাহজাহান। এরপর গত ৩০ জুন এবং ১ ও ৭ জুলাই তিন কার্যদিবসে রাষ্ট্রপক্ষে সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম মানবতাবিরোধী অপরাধে সাকা চৌধুরীকে ট্রাইব্যুনালে দেয়া মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকা ন্যায় ও অতি প্রয়োজন দাবি করে যুক্তি পেশ করেন।
তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় সাকা চৌধুরী পাকিস্তানি বাহিনী ও নিজস্ব বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে তাণ্ডব চালিয়েছে। একই দিনে চার স্থানে পর্যন্ত তাণ্ডব চালানো হয়। ‘৭১-এর এপ্রিল থেকে জুলাই পযর্ন্ত এসব অপরাধ হয়েছে। বিশেষ করে সংখ্যালঘুদের ওপর বেশি হামলা করা হয়। যেন তারা দেশ ছেড়ে চলে যান। এসব অপরাধের চারটি অভিযোগে ট্রাইব্যুনাল এ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে রায় দিয়েছে। এ দণ্ড বহাল রাখার আর্জি পেশ করে রাষ্ট্রপক্ষ।
মৃত্যুদণ্ড রায়ের বিরুদ্ধে সাকা চৌধুরীর আপিল আবেদনটি আপিল বিভাগে মানবতাবিরোধী অপরাধের পঞ্চম আপিল মামলা। জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের চূড়ান্ত রায়ে মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখার পর গত ১৬ জুন শুরু হয় এ আপিলের শুনানি।
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড জয়নাল আবেদীন ২০১৩ সালের ২৯ অক্টোবর এ আপিল দায়ের করেন। এ রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করেনি। আপিলে আসামিপক্ষের শুনানির বিপরীতে রায় বহাল রাখার পক্ষে আর্জি পেশ করে যুক্তি উপস্থাপন করে রাষ্ট্রপক্ষ।
২০১৩ সালের ১ অক্টোবর ট্রাইব্যুনাল-১ এর রায়ে বলা হয়, সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে আনীত ২৩টি অভিযোগের মধ্যে ৯টি সন্দেহাতিতভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে প্রসিকিউশন। এর মধ্যে ৩, ৫, ৬ ও ৮ নং অভিযোগের প্রতিটিতে তাকে মৃত্যুদণ্ড এবং ২, ৪ ও ৭ নং অভিযোগের প্রতিটিতে তাকে ২০ বছর করে কারাদণ্ড এবং ১৭ ও ১৮ নং অভিযোগে তাকে ৫ বছর করে কারাদণ্ড দিয়ে রায় ঘোষণা করা হয়।
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ২০১২ সালের ৪ এপ্রিল তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট ২৩টি অভিযোগে চার্জ গঠন করা হয়। যে চারটি হত্যা-গণহত্যার দায়ে সাকা চৌধুরীকে ট্রাইব্যুনালে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে সেগুলো হলো, ৩ নম্বর অভিযোগ- অধ্যক্ষ নুূতন চন্দ্র সিংহকে হত্যা, ৫ নম্বর অভিযোগ- রাউজানের সুলতানপুর গ্রামে তিনজনকে গণহত্যা, ৬ নম্বর অভিযোগ- রাউজানের ঊনসত্তরপাড়ায় ৫০ জনেরও বেশী লোককে গণহত্যা এবং ৮ নম্বর অভিযোগ- চট্রগ্রাম আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা শেখ মোজাফফর আহম্মদ ও তার ছেলে শেখ আলমগীরকে হত্যার অভিযোগে।
এছাড়া ২ নম্বর অভিযোগ রাউজানের গহিরা গ্রামের হিন্দুপাড়ায় গণহত্যা, ৪ নম্বর অভিযোগ জগৎমল্লপাড়ায় ৩২ জনকে গণহত্যা এবং ৭ নম্বর অভিযোগে রাউজানের সতীশ চন্দ্র পালিতকে হত্যার অভিযোগে সাকা চৌধুরীকে ২০ বছর করে কারাদণ্ড দেয়া হয়।
এছাড়াও ১৭ নম্বর অভিযোগ- মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক নিজাম উদ্দিন আহম্মেদ, সিরাজ ও ওয়াহেদ ওরফে ঝুনু পাগলাকে অপহরণ করে নির্যাতন এবং ১৮ নম্বর অভিযোগে চান্দগাঁওয়ের সালেহউদ্দিনকে অপহরণ করে সাকা চৌধুরীর পারিবারিক বাসভবন গুডসহিলে নিয়ে নির্যাতনের অভিযোগে সাকা চৌধুরীকে পাঁচ বছর করে কারাদণ্ড দেয়া হয়।
উল্লেখ্য, সাকা চৌধুরীকে ২০১০ সালের ১৫ ডিসেম্বর রাতে হরতালে গাড়ি পোড়ানো ও ভাঙচুরের এক মামলায় গ্রেফতার করা হয়। তদন্তের স্বার্থে এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছরের ১৯ ডিসেম্বর মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। সেই থেকে তিনি কারাগারে রয়েছেন।
শেয়ারবাজারনিউজ/অ