আজ: বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪ইং, ২৭শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৮ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

২৯ সেপ্টেম্বর ২০২২, বৃহস্পতিবার |

kidarkar

ফেসবুককে অবশ্যই রোহিঙ্গাদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে: অ্যামনেস্টি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : অনলাইনে ব্যাপক ঘৃণামূলক বক্তব্য ও বিদ্বেষমূলক প্রচারণার কারণে মিয়ানমারে নিজেদের বাড়িঘর থেকে উচ্ছেদে বাধ্য হওয়া লাখ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে ফেসবুকের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে বলে জানিয়েছে মানবাধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।

বৃহস্পতিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে সংস্থাটি জানায়, অনলাইনে ব্যাপক ঘৃণামূলক বক্তব্য ও প্রচারণার কারণে মিয়ানমারে রোহিঙ্গারা তাদের বাড়িঘর থেকে পালাতে বাধ্য হয়েছেন এবং এ কারণে লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে ফেসবুককে। বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি।

২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর মিয়ানমার থেকে ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। রোহিঙ্গা এই শরণার্থী সংকট সাম্প্রতিক ইতিহাসে সৃষ্ট সবচেয়ে বড়, দ্রুততম সংকটগুলোর একটি।

রোহিঙ্গারা প্রধানত মুসলিম সংখ্যালঘু এবং ২০১৭ সালে মিয়ানমারের সামরিক শাসকদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছিল তারা। প্রতিবেশী বাংলাদেশে পালিয়ে আসার পর থেকে রোহিঙ্গারা সেখানে বিস্তীর্ণ শরণার্থী শিবিরে বসবাস করছে।

ভিকটিমদের অ্যাসোসিয়েশন এবং মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, ফেসবুকের মাধ্যমে (রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে) সহিংসতা বৃদ্ধি পেয়েছে। তারা বলছেন, এখানে চরমপন্থি বিভিন্ন কন্টেন্ট (ভিডিও) চালানো হয় যা ক্ষতিকারক এবং বিভ্রান্তি ও বিদ্বেষমূলক বক্তব্যকে উৎসাহিত করে।

অ্যামনেস্টি তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, ‘অনেক রোহিঙ্গা ফেসবুকের ‘রিপোর্ট’ ফাংশনের মাধ্যমে রোহিঙ্গা বিরোধী বিষয়বস্তু সম্পর্কে রিপোর্ট করার চেষ্টা করেছিল’ কিন্তু তাতে কোনো লাভ হয়নি’। এতে করে সেসব ঘৃণ্য কন্টেন্ট এবং বিদ্বেষমূলক প্রচারণা মিয়ানমারজুড়ে আরও শ্রোতাদের কাছে ছড়িয়ে পড়তে থাকে।’

এছাড়া ২০২১ সালের অক্টোবরে হুইসেল-ব্লোয়ার প্রকাশিত ‘ফেসবুক পেপারস’ থেকে পাওয়া তথ্যগুলোও উল্লেখ করেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। এতে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, কোম্পানির (ফেসবুকের) নির্বাহীরা জানতেন, তাদের এই সাইটটি জাতিগত সংখ্যালঘু এবং অন্যান্য গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বিষাক্ত বিষয়বস্তু ছড়িয়ে দিয়েছে।

এসব অভিযোগে রোহিঙ্গা প্রতিনিধিরা ইতোমধ্যেই ফেসবুকের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা দায়ের করেছেন। ফেসবুকের বিরুদ্ধে দায়িত্বশীল ব্যবসায়িক আচরণের নির্দেশনা অনুসারে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের পাশাপাশি উন্নত অর্থনীতির ওইসিডি গ্রুপে এই মামলা দায়ের করা হয়।

ফেসবুকের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে অভিযোগ দায়ের করা হয় গত ডিসেম্বরে। দেশটির ক্যালিফোর্নিয়ায় দায়ের করা ওই অভিযোগে ফেসবুকের হোম স্টেট এবং এর মূল কোম্পানি মেটা’র কাছে শরণার্থীরা ১৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতিপূরণ চান।

অ্যামনেস্টি বলেছে, ‘আজ পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের ক্ষতিপূরণ দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে এসেছে মেটা। এমনকি এই সম্প্রদায়ের বিনয়ী এই অনুরোধগুলো কোম্পানির বিশাল (আর্থিক) লাভের চেয়ে খুব অল্প। আর এটি কেবল এই উপলব্ধি সামনে আনে যে, এটি এমন একটি কোম্পানি যা মানবাধিকারের প্রভাবের বাস্তবতা থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন।’

মানবাধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক এই সংস্থাটি ফেসবুককে তার প্ল্যাটফর্মজুড়ে থাকা মানবাধিকারবিরোধী প্ররোচনামূলক বিষয়ে তদারকি বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে।

অবশ্য ফেসবুক তার কর্পোরেট মূল্যবোধ পুনর্গঠনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। একইসঙ্গে মিথ্যা তথ্যের বিরুদ্ধে বিশেষ করে রাজনীতি ও নির্বাচন বিষয়ে ভুয়া প্রচারণার বিষয়ে নজরদারির প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

এছাড়া সোশ্যাল মিডিয়ার জনপ্রিয় এই প্লাটফর্মটি বার্তাসংস্থা এএফপি-সহ বেশ কয়েকটি বার্তাসংস্থার সঙ্গে অংশীদারিত্বও তৈরি করেছে। আর এর উদ্দেশ্য হচ্ছে- অনলাইন পোস্টগুলো যাচাই করা এবং যেগুলো অসত্য তা অপসারণ করা।

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.