আজ: শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪ইং, ২৮শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

০৮ অক্টোবর ২০২২, শনিবার |

kidarkar

এফবিসিসিআই ও ইউনিলিভারের যৌথ উদ্যোগে প্লাস্টিক বর্জ্য নিয়ে সেমিনার

নিজস্ব প্রতিবেদক : ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই ও দেশের অন্যতম বৃহত্তম নিত্য-ব্যবহার্য পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ইউনিলিভার বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে ‘প্লাস্টিক বর্জ্যের টেকসই ব্যবস্থাপনার জন্য নীতি সহায়তা’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।

শনিবার সকালে রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত এই সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী তাজুল ইসলাম।

মন্ত্রী বলেন বলেন, সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনার নিশ্চিত করতে উদ্ভাবনী এবং কার্যকর সমাধান খুঁজে বের করতে হবে। বর্জ্য সংগ্রহ প্রক্রিয়াটি লাভজনক ব্যবসায়ীক উদ্যোগ হিসেবে গ্রহণ করা গেলে বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে টেকসই করা যাবে। এ ক্ষেত্রে সার্কুলার বা চক্রাকার প্রক্রিয়া অনুসরণ করাকে কার্যকর সমাধান হিসেবে মনে করেন মন্ত্রী। সার্কুলার প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে ভ্যালু চেইনের অংশীদারদের ক্ষমতায়ন ও অনানুষ্ঠানিক খাতকে সামগ্রিক সহযোগিতা প্রদান করার ব্যাপারে গুরুত্ব আরোপ করেন। ভ্যালু চেইনে অতি ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা, ভাঙ্গারি ও বর্জ্য সংগ্রাহকরা রয়েছেন। এই খাতটি অনানুষ্ঠানিক হলেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ খাত উল্লেখ করে এই খাতে সহায়তা দেয়ার আশ্বাস দেন তিনি, একই সঙ্গে পরিবেশ ও অর্থনীতির স্বার্থেই টেকসই প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য একটি উপযোগী কাঠামো তৈরির তাগিদ দেন।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন বলেন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা একটি জটিল প্রক্রিয়া। এর সাথে বহু অংশীজন ও খাত সম্পৃক্ত। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থা ও ব্র্যান্ডগুলোর সাথে সমন্বিত উদ্যোগে নীতি প্রণয়ন জরুরি বলে মনে করেন পরিবেশমন্ত্রী।

একটি সার্কুলার বা চক্রাকার প্লাস্টিক অর্থনীতি প্রতিষ্ঠার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক ও কাঠামোগত কর্মকৌশল চিহ্নিত করতে হবে। এবং কার্যকর প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য সরকারি ও বেসরকারিখাতগুলোকে যৌথভাবে কাজ করতে হবে। সঠিক পরিকল্পনা ও নীতি প্রণয়নের মাধ্যমে টেকসই প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ রোল মডেল হিসেবে পরিচিত হবে বলে আশা প্রকাশ করেন মন্ত্রী।

সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া জানান, ভিশন ২০৪১ এ টেকসই নগরায়ন লক্ষ্যের অবিচ্ছেদ্দ্য অংশ হিসেবে প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে অন্তর্ভুক্ত করেছে। উচ্চ আয়ের দেশে পরিণত হতে হলে প্লাস্টিক বর্জ্যকে টেকসই উপায়ে পুনঃব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে বলে মন্তব্য করেন মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া।

স্বাগত বক্তব্যে এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, জিডিপি বৃদ্ধির সাথে প্লাস্টিকের ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়াটা স্বাভাবিক। তবে প্লাস্টিক বর্জ্যের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাব এই খাতে মূল চ্যালেঞ্জ। এক্ষেত্রে জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি ও তাদের সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করা জরুরি। একই সাথে উন্নত দেশের মত বর্জ্যের উৎসে এগুলোকে আলাদা করার সংস্কৃতি তৈরি করতে হবে। কেননা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার টেকসই মডেল বাস্তবায়নে উৎসে পৃথকীকরণ সবচেয়ে জরুরি বিষয়। উৎসেই বিভিন্ন বর্জ্য পৃথক করা হলে পুরো ‘সংগ্রহ ও পুনঃপ্রক্রিয়াজাত প্রক্রিয়া’কে আরও সহজ করে তুলবে।

ইউনিলিভার বাংলাদেশের সিইও ও এমডি জাভেদ আখতার তার উপস্থাপনায় বলেন, আমরা প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে সিটি কর্পোরেশনগুলোর সাথে বেশকিছু পাইলট প্রকল্প হাতে নিয়েছি। এই উদ্যোগগুলো যথাযথ সুবিধা ও সহযোগীতা না পেলে, অন্যান্য প্রতিষ্ঠান এই ধরনের উদ্যোগ নিতে উৎসাহিত হবে না। তিনি বলেন, একটি বা দুটি প্রতিষ্ঠান এই সমস্যা সমাধান করতে পারবে না। এজন্য পুরো ব্যবসায়ী সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসতে হবে এবং অবদান রাখতে হবে। সবার সম্মিলিত উদ্যোগে ভ্যালু চেইনে মূল্য সংযোজন করে সামগ্রিক পরিস্থিতির উন্নয়ন সম্ভব হবে বলে মনে করেন ইউনিলিভার বাংলাদেশের সিইও ও এমডি জাভেদ আখতার।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক ও এফবিসিসিআই-এর প্যানেল বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ড. ইজাজ হোসাইন।

তিনি বলেন, সরকার নীতি পর্যায়ে বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু সিটি কর্পোরেশন বা পৌরসভাগুলোর কারিগরি ও আর্থিক সক্ষমতার অভাব মূল স্যমস্যা। এ কারণে সঠিক প্রক্রিয়ায় বাড়ি থেকে বর্জ্য সংগ্রহ ও উৎসে বর্জ্য পৃথক করা যাচ্ছেনা। যা রিসাইকেলকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলছে। স্বল্পমেয়াদে ম্যাটেরিয়াল রিকভারি ফ্যাসিলিটি (এমআরএফ) স্থাপন করে প্লাস্টিক বর্জ্য থেকে সহজে এবং কম খরচে বিকল্প জ্বালানি তেল (আরডিএফ) উৎপাদন করা সম্ভব বলে জানান ড. ইজাজ হোসাইন।

বাংলাদেশ প্লাস্টিক পণ্য প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি বিপিজিএমইএ’র সভাপতি শামীম আহমেদ বলেন, প্লাস্টিক খাত দেশের সকল শিল্পের সহযোগী চালিকা শক্তি। প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সরকারি সংস্থার আরো বিনিয়োগ ও অবকাঠামো সুবিধা বাড়ানো, বেসরকারি খাতের উদ্যোগে প্রণোদনা ও কর সুবিধা প্রদানের সুপারিশ করেন তিনি।

সেমিনারের প্যানেল আলোচনায় বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র পরিবেশ বিশেষজ্ঞ ইউ জু এলিসন এল বলেন, প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা শক্তিশালীকরণে আমরা বাংলাদেশ সরকারের পাশাপাশি ব্যবসায়িক খাতের সাথেও কাজ করতে প্রস্তুত। এজন্য কার্যক্রম প্রণয়ন ও বিনিয়োগেও আমরা সাহায্য করতে চাই।

এছাড়াও প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন এফবিসিসিআই-এর প্যানেল উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের যুগ্ম সচিব ইকবাল হাবিব, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের নগর পরিকল্পনাবিদ মো. মইনুল ইসলাম এবং বাংলাদেশ পেট্রোকেমিকেল কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সিইও খাদেম মাহমুদ ইউসুফ।

সেমিনারে আরো উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআই’র সিনিয়র সহ-সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু, সহ-সভাপতি মো. সালাহউদ্দিন আলমগীর, মো. আমিন হেলালী, হাবীব উল্ল্যাহ ডন, পরিচালকবৃন্দ ও এফবিসিসিআই’র মহাসচিব মোহাম্মদ মাহফুজুল হক।সেমিনারটি সঞ্চালনা করেন ইউনিলিভার বাংলাদেশের পরিচালক ও কর্পোরেট কমিউনিকেশন ও পার্টনারশিপ প্রধান শামীমা আক্তার।

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.