আজ: শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪ইং, ২৮শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

০৯ অক্টোবর ২০২২, রবিবার |

kidarkar

কাগজবিহীন অফিস ব্যবস্থাপনা বাতিল করছে ডিএসই

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারিক আমিন ভূঁইয়ার সময় চালু হওয়া কাগজবিহীন বা পেপারলেস অফিস ব্যবস্থাপনা থেকে সরে আসছে।

প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা মনে করছেন, কর্মীরা এ পদ্ধতিতে অভ্যস্ত হয়ে পড়লেও শুধু সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালকের আমলে চালু হওয়ার কারণে এটা বাদ দিচ্ছে বর্তমান পর্ষদ। তবে বর্তমান পর্ষদ বলছে, পদ্ধতিটি তাদের কাজের জন্য উপযোগী নয়। তা ছাড়া এতে যে সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয় তা ব্যয়বহুল।

ডিএসইর কাগজবিহীন ব্যবস্থাপনা বন্ধে এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির সব কর্মকর্তাকে ই-মেইল পাঠিয়েছে ডিএসইর মানবসম্পদ বিভাগ। এতে বলা হয়েছে, রোববারে মধ্যে সবাই যেন তাদের প্রয়োজনীয় সব নথিপত্র সার্ভার থেকে ডাউনলোড করে রাখেন।

ওই ই-মেইলের একটি অনুলিপি এসেছে হাতেও। এতে বলা হয়েছে, ১০ অক্টোবর এ প্ল্যাটফর্ম মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে যাবে। এরপর আর কেউ চাইলেও তা ব্যবহার করতে পারবে না।

সময়, ব্যয়সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব বিবেচনায় ডিএসই চলতি বছরের ২৬ জানুয়ারি কাগজবিহীন অফিস ব্যস্থাপনা চালু করে। ডিএসইর চেয়ারম্যান মো. ইউনুসুর রহমান অনলাইনে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। এরপর থেকে ডিএসইর অফিশিয়াল সব কাজই হতো কাগজ ছাড়াই। নতুন এই ব্যবস্থাপনায় কাগজপত্র সংরক্ষণের ঝুট-ঝামেলা থেকে মুক্ত হন কর্মকর্তারা।

কাগজবিহীন ব্যবস্থাপনার জন্য মানডে ডটকম নামে একটি প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করা হতো। এটি একটি ক্লাউডভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম যা ব্যবহারকারীদের নিজস্ব অ্যাপ্লিকেশন এবং প্রকল্প পরিচালনা করতে যেকোনো সফটওয়্যার তৈরি করে দেয়।

এ পদ্ধতি চালু হওয়ায় ডিএসইতে কাগুজে চিঠিপত্রের ব্যবহার প্রায় বন্ধই হয়ে যায়। এতে সময়ের সঙ্গে বাঁচে অর্থও। এতে রীতিমতো অভ্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন ডিএসইর কর্মকর্তাদের প্রায় সবাই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএসইর মহাব্যবস্থাপক পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘পেপারলেস মাধ্যম ব্যবহার করতে আমাদের যে সফটওয়্যারটি আছে, এতে আমাদের কাজ অনেক সহজ হয়ে গিয়েছে। আগের মতো আর কাগজপত্রের ঝামেলা নেই। নির্ঝঞ্ঝাট একটা মাধ্যম ব্যবহার করে আমরা আমাদের দৈনন্দিন কাজগুলো সম্পাদন করতে পারছি। ডিএসইর নেয়া খুবই ভালো একটি উদ্যোগ এটা।’

অনেকটা আক্ষেপের সুরে তিনি বলেন, ‘এত সুবিধাজনক একটি মাধ্যম হবার পরও শুধু আগের এমডি এটা চালু করেছিলেন বলেই ডিএসইর বর্তমান কর্তৃপক্ষ এটাকে বাদ দিতে চাচ্ছেন। মানবসম্পদ বিভাগ থেকে আমাদের ই-মেইলে চিঠি দিয়ে বলা হয়েছে, সব নথিপত্র যেন ডাউনলোড করে রাখি। আমরা আর এ প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করতে পারব না।’

ডিএসইর ব্যবস্থাপক পর্যায়ের এক কর্মকর্তা জানান, ‘এ প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারে নিজেদের একটি আলাদা কর্মপরিধি তৈরি হয়েছিল। যার মাধ্যমে একে অন্যের কাজগুলো খুব সহজেই বুঝতে ও করতে পারতাম। নিজেদের কাজ ভাগ করে নিতে পারতাম। কেউ কাজ না করলে তাকেও জবাবদিহির আওতায় আনা যায় এ প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারের মাধ্যমে। এত ভালো একটা কার্যক্রম বাদ দিলে আমাদের কাজের অগ্রগতি অনেকটাই কমে যাবে।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরেক কর্মকর্তা জানান, ‘কাগুজে চিঠিপত্র অনেক সময় পিয়ন না থাকলে পড়ে থাকত। বৃহস্পতিবারের চিঠি রোববার পৌঁছাত। কিন্তু সফটওয়্যারের মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে যেকোনো চিঠি বা নির্দেশনা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার কাছে পৌঁছে যায়। পুঁজিবাজারের মতো সংবেদনশীল একটা বাজারে এ তাৎক্ষণিকতা খুব জরুরি। কিন্তু সেটা আর থাকছে না। বর্তমান নেতৃত্ব আসলে আগের এমডির সবকিছু মুছে ফেলতে চান।’

তবে কর্মকর্তাদের এ বক্তব্যের সঙ্গে একমত নন ডিএসইর ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সাইফুর রহমান মজুমদার। তিনি বলেন, ‘যে সফটওয়্যারটা ব্যবহার করা হতো, তাতে মূলত যেসব অভ্যন্তরীণ ডকুমেন্টস আসত সেগুলোই রাখা হতো। এর মাধ্যমে চিঠিপত্র বণ্টন করে দেয়া হতো। কিন্তু এই পেপারলেস সফটওয়্যার দিয়ে আমাদের পারপাস সার্ভ হচ্ছে না।’

তার দাবি, ‘মানডে ডটকম খুব ব্যয়বহুল একটা সফটওয়্যার। তারপরও এটা আমরা ব্যবহার করতাম যদি এটা আমাদের জন্য উপযোগী হতো। এটা একদমই ডিএসইর কাজের উপযোগী না। আগের এমডি এই সফটওয়্যারটা নিয়েছেনই খুব কম সময়ের মধ্যে। উনি যোগদান করার কয়েক দিনের মধ্যেই এটা নিয়েছিলেন। তাতেও কোনো সমস্যা ছিল না, যদি এটা এক্সচেঞ্জের জন্য উপযোগী হতো। আর এটা পেপারলেস তো দূরের কথা, আরও পেপার সংশ্লিষ্টতা বাড়িয়েছে। এটা ব্যবহার করে যদি উপকার হতো, তাহলে বোর্ড এটাকে পায়ে ফেলে দিত না।’

আগের এমডির প্রতি হিংসাত্মক মনোভাব থেকেই এটা বাদ দেয়া হচ্ছে কি না এমন প্রশ্নে সাইফুর রহমান মজুমদার বলেন, ‘যে এমডি চলে গেছেন তাকে নিয়ে এমন ভাবার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। পরিচালনা পর্ষদ সব কিছুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাকে নিয়ে ভাবার সময় আমাদের নেই।’

কর্মকর্তাদের মধ্যে কাজের উদ্দীপনা ফেরাতে গত ২৩ আগস্ট ৯৫ জনকে পদোন্নতি দিয়েছিলেন ডিএসইর সদ্য বিদায়ী এমডি তারিক আমিন ভূঁইয়া। কিন্তু নিজেদের মনমতো না হওয়ায় শুরু থেকেই এর বিরোধিতা করে আসছিল পরিচালনা পর্ষদের একটি অংশ। এ টানাপোড়েনের শেষ হয় এমডির পদত্যাগের মধ্য দিয়ে। পরে পদোন্নতি পাওয়া সেসব কর্মকর্তার আগের পদ ব্যবহারের নির্দেশ দিয়ে ই-মেইল করে ডিএসইর বর্তমান ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে তীব্র অসন্তোষ ও ক্ষোভ রয়েছে কর্মকর্তাদের মধ্যে।

কর্মকর্তাদের ওই ক্ষোভের ভেতরেই নতুন করে সাবেক এমডির চালু করা কাগজবিহীন ব্যবস্থাপনাও বাতিল করছে ডিএসইর বর্তমান কর্তৃপক্ষ।

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.