আজ: মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪ইং, ১০ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১২ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

০৯ অক্টোবর ২০২২, রবিবার |

kidarkar

আইপিও’র টাকা ব্যবসা সম্প্রসারনের কাজে ব্যবহার করতে চায় এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ

শাহ আলম নূর : ব্যবসার প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে ব্যবসা সম্প্রসারনের কাজে আইপিও’র টাকা ব্যবসা সম্প্রসারনের কাজে ব্যবহার করতে চায় এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ লি:।
প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা বলছেন গত কয়েক বছরে লোকাল ওষুধ কোম্পানিগুলো গেম চেঞ্জার হিসেবে কাজ করছে। যার ফলে বাজারের ৯০ শতাংশ ওষুধ লোকাল কোম্পানিগুলোর দখলে রয়েছে। সাম্প্রতিককালে ফার্মাসিউটিক্যাল মার্কেটের বেশ ভালো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে এবং ধারণা করা হচ্ছে, ২০২৫ সালের মধ্যে এটি ৬ বিলিয়ন ডলারের মার্কেটে পরিণত হবে, যা ২০১৯ থেকে ১১৪ শতাংশ গ্রোথ থাকবে। যেহেতু এশিয়াটিকের তার গুণগত মানের কারণে ডাক্তারের কাছে সুনাম রয়েছে, তাই আমাদের একটি বিশাল সুযোগ রয়েছে একটি এন্টি ক্যান্সার প্ল্যান্ট স্থাপন করার, যা শুধু দেশেই সরবরাহ নয় বিদেশেও রপ্তানি করা যাবে।

এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ লিমিটেড, একটি মাঝারি আকারের ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানি, বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে প্রাথমিক গণ প্রস্তাব’র (আইপিও) মাধ্যমে ৯৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করবে।

ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানটি গাজীপুরে বিদ্যমান কারখানা প্রাঙ্গণে নতুন প্রকল্প বাস্তবায়নে আইপিও’র অর্থ ব্যয় করবে বলে জানা গেছে।

বিগত ৫০ বছরে বাংলাদেশে এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ লিমিটেড তার নিজস্ব ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠা করা প্রতিষ্ঠানটি প্রাথমিক শেয়ারের ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের উপর প্রিমিয়াম চায়।

বাংলাদেশে, যখন একটি কোম্পানি প্রিমিয়াম চায়, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা বিডিংয়ের মাধ্যমে শেয়ারের একটি রেফারেন্স মূল্য নির্ধারণ করে এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ১০% ডিসকাউন্টে প্রাথমিক শেয়ার কিনতে সক্ষম হবে।

বুক বিল্ডিং পদ্ধতির আইপিওর নিয়ম অনুসারে, প্রথমে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের জন্য সংরক্ষিত শেয়ার বিক্রি করার লক্ষ্যে নিলামের আয়োজন করা হবে। যে দামে এসে তাদের জন্য সংরক্ষিত শেয়ারের বিক্রি শেষ হবে, সেই দামের (কাট অফ প্রাইস) চেয়ে ৩০ শতাংশ অথবা ২০ টাকা এই দুইয়ের মধ্যে যেটি কম, সেই দামে আইপিওতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে শেয়ার বিক্রি করা হবে।

বুক বিল্ডিং পদ্ধতির আইপিওর শর্ত অনুযায়ী, গত বছরের ২৪ অক্টোবর রাজধানীর একটি হোটেলে রোড শোর আয়োজন করেছিল কোম্পানিটি। এতে যোগ্য বিনিয়োগকারী (এলিজিবল ইনভেস্টর) ও সংশ্লিষ্টদের আমন্ত্রণ জানানো হয়। তাদের সামনে কোম্পানির আর্থিক চিত্র, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ইত্যাদি বিষয় তুলে ধরেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনির আহমেদসহ শীর্ষ কর্মকর্তারা।

কোম্পানি সচিব ইশতিয়াক আহমেদ বলেন “এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ অনেক বছর ধরে সফলভাবে ব্যবসা পরিচালনা করে একটি সুনাম অর্জন করেছে। তাই, আমরা আমাদের বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে একটি প্রিমিয়াম চাইছি”।

“আমাদের প্রতিযোগীরা প্রতিনিয়ত নতুন নতুন পণ্য নিয়ে আসছে। তাই আমাদের অবস্থান ধরে রাখতে বাজারে নতুন ওষুধের সরবরাহ বাড়াতে হবে।”

তিনি আরও বলেন, কোম্পানি ভবিষ্যতে ভেটেরিনারি ও ইউনানি ওষুধ ব্যবসায় প্রবেশের পরিকল্পনা করছে।

২০২১ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে পুনর্মূল্যায়ন পরবর্তী কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভি) ছিল ৫৬ টাকা ৬১ পয়সা। আর পুনর্মূল্যায়ন ছাড়া এনএভিপিএস ৩৫ টাকা ৪৮ পয়সা। পাঁচ বছরের ভারিত গড় শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) ছিল ৩ টাকা ২১ পয়সা।

আইপিও অনুমোদনের ক্ষেত্রে বিএসইসির দেয়া শর্ত অনুসারে, তালিকাভুক্তির আগে কোম্পানিটি কোনো ধরনের লভ্যাংশ ঘোষণা, অনুমোদন বা বিতরণ করতে পারবে না।

শাহজালাল ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড ইতিমধ্যে ইস্যু ব্যবস্থাপনা পরিষেবা প্রদানের জন্য ওষুধ প্রস্তুতকারকের সাথে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে, যেখানে বিএমএসএল ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড ইস্যুর নিবন্ধক হিসাবে কাজ করবে।

ব্যবসায়ী মিনহাজ উদ্দিন আহমেদ ১৯৭০ সালে কোম্পানিটি শুরু করেন। কিন্তু ২৬ বছর পর তিনি মনির আহমেদ ও তাহমিনা বেগমের কাছে এটি বিক্রি করেন।

বর্তমানে এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তাহমিনা বেগম ও মনির আহমেদ।

নতুন মালিকের অধীনে, ওষুধ প্রস্তুতকারী ২০০০ সালে তার বিপণন কার্যক্রম শুরু করে এবং এটি ২০২০ সাল পর্যন্ত ৪০টি জেনেরিক অণু চালু করে।

আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, কোম্পানিটি ট্যাবলেট, সিরাপ, ইনজেকশন, ক্যাপসুলসহ ২৫৫ ধরনের ওষুধ পণ্য তৈরি করে।

কোম্পানিটি ২০০৫ সালে সিঙ্গাপুর এবং ভিয়েতনামে ওষুধ রপ্তানির মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী যাত্রা শুরু করেছে।

কোম্পানি সচিব বলেন, ১৯৮০ সালে এটি সারাদেশে একটি জনপ্রিয় ওষুধ প্রস্তুতকারক ছিল।

তিনি বলেন “কিন্তু আগের ম্যানেজমেন্ট তার শক্তিশালী ব্র্যান্ড ভ্যালু ধরে রাখতে পারেনি। এখন আমরা জনপ্রিয়তা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি”।

IQVIA, ফার্মা শিল্পে সেবা প্রদানকারী একটি আমেরিকান বহুজাতিক কোম্পানির মতে, দেশের ওষুধের বাজার ২০২০ সালে ১০% এর বেশি বার্ষিক বৃদ্ধির সাথে ২৭০০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে।

বাংলাদেশের কোম্পানিগুলোও বছরে প্রায় ১৫০০ কোটি টাকার ওষুধ রপ্তানি করে। তবে দেশের শীর্ষ ১০টি কোম্পানি দেশের মোট ওষুধের ৭১ শতাংশ বিক্রি করে।

প্রসঙ্গত, এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ কোম্পানি আইন ১৯১৩ এর অধীনে ১৯৭০ সালের ২৫ জুলাই প্রাইভেট কোম্পানি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয় এবং পরবর্তীতে তা ২০২০ সালের ১২ মার্চ প্রাইভেট থেকে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে রূপান্তরিত হয়। ২০২০ সালে কোভিড-১৯ এর সময় প্রতিষ্ঠানটি এন্টিসেপটিক সলিউশন বাজারজাত করে এবং জীবন রক্ষাকারী কিছু ওষুধ সরকারিভাবে সরবরাহ করে।

 

 

২ উত্তর “আইপিও’র টাকা ব্যবসা সম্প্রসারনের কাজে ব্যবহার করতে চায় এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ”

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.