পোশাক রপ্তানিতে চীন-ভিয়েতনামকে ছাড়িয়েছে বাংলাদেশ
নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র। মোট পোশাক রপ্তানির ২১ শতাংশই যায় এই দেশটিতে। চলতি পঞ্জিকা বছরের গত জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত এই সাত মাসে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে প্রায় ৫৫ শতাংশ। এই প্রবৃদ্ধি যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের প্রতিযোগী সব দেশের চেয়ে বেশি।
তবে সেখানে মোট রপ্তানিতে চীন ও ভিয়েতনামের প্রথম ও দ্বিতীয় অবস্থান এখনও অটুট আছে। অর্থাৎ বিশ্ববাজারে পোশাক রপ্তানিতে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকলেও যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের অবস্থান এখনও তৃতীয়।
চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ৫৭১ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে বাংলাদেশ থেকে। গত বছরের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ৩৭০ কোটি ডলার। যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্নিষ্ট সরকারি সংস্থা অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলের (ওটেক্সা) হালনাগাদ তথ্য বলছে, গত সাত মাসে বিভিন্ন দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক আমদানি বেড়েছে ৩৯ শতাংশ।
এ সময় বাংলাদেশের রপ্তানি বেড়েছে ৫৪ দশমিক ৪৩ শতাংশ হারে। পরিমাণে বাংলাদেশের চেয়ে বেশি রপ্তানি হলেও প্রবৃদ্ধির হিসাবে পিছিয়ে আছে চীন। একই সময় চীনের রপ্তানি বেড়েছে ৪০ শতাংশ হারে। রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১ হাজার ২৭৯ কোটি ডলার। পরিমাণের দিক থেকে চীনই শীর্ষে রয়েছে।
পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের প্রধান প্রতিযোগী ভিয়েতনামের অবস্থান এ ক্ষেত্রে দ্বিতীয়। গেল সাত মাসে যুক্তরাষ্ট্রে দেশটির রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৯১ কোটি ডলার। অর্থাৎ বাংলাদেশের প্রায় দ্বিগুণ। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ভিয়েতনামের রপ্তানি বেড়েছে ৩৫ শতাংশ।
ওটেক্সার তথ্য বলছে, অন্যান্য দেশের মধ্যে ভারত, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া ও কম্বোডিয়ার রপ্তানিও আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে বেড়েছে।
পোশাক উৎপাদন ও রপ্তানিকারক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএ পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, অতিমারি করোনা থেকে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরার ফলে দেশটিতে হঠাৎ চাহিদা বেড়েছে। এ চাহিদা পূরণে স্বাভাবিকের চেয়ে পরিমাণে বেশি রপ্তানি করতে পেরেছেন তারা। তবে যুক্তরাষ্ট্রে রেকর্ড মূল্যস্ফীতি, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভের নীতি সুদহার বাড়ার প্রভাবে আগামী প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধির এ ধারা অব্যাহত থাকবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। এ ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে এবার গ্রীষ্ফ্ম মৌসুম বেশ দীর্ঘায়িত ছিল। শীত আসছে দেরি করে। এ কারণে শীতের পোশাকের চাহিদা কমছে। আগামী মাসগুলোতে সেই প্রভাবও দেখা যাবে।
অটেক্সার মাসওয়ারি তথ্য বিশ্নেষণে দেখা যায়, বছরের প্রথম ছয় মাস যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি বাড়লেও জুলাই থেকে আবার কমেছে। জানুয়ারি মাসে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৭৬ কোটি ডলার। মার্চে তা ১০৩ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যায়। জুনে ছিল ৯১ কোটি ডলার। কিন্তু জুলাই মাসে তা ৬৯ কোটি ডলারে নেমে আসে। একই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে অর্থবছরের হিসাবেও।
বিজিএমইএ সূত্রে জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে চলতি অর্থবছরের জুলাই-আগস্ট- এ দুই মাসে রপ্তানি বেড়েছে ২০ শতাংশ হারে। অথচ গত অর্থবছর শেষে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি বেশি ছিল আগের বছরের চেয়ে ৫২ শতাংশ। অর্থাৎ এই দুই মাসে রপ্তানি বৃদ্ধির হার অনেক কম।