শেয়ার ক্রয়ে চেক নগদায়নের শর্ত প্রত্যাহারে বিনিয়োগকারীদের চিঠি
নিজস্ব প্রতিবেদক : সিকিউরিটিজ হাউজের গ্রাহকদের জমাকৃত চেক নগদায়ন না হওয়া পর্যন্ত শেয়ার কেনা যাবে না সংক্রান্ত নির্দেশনা প্রত্যাহারে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) চিঠি দিয়েছে বিনিয়োগকারীরা।
মঙ্গলবার (১৮ অক্টোবর) সাধারণ বিনিয়োগকারীদের পক্ষে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদ বিএসইসির চেয়ারম্যান বরাবর এ চিঠি দিয়েছে।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক কাজী আব্দুর রাজ্জাকের স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, আপনার কমিশন দায়িত্ব গ্রহণের পর বিভিন্ন সিদ্ধন্ত গ্রহণের ফলে বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরতে শুরু করেছে। ক্ষতিগ্রস্থ বিনিয়োগকারীরা কিছুটাআশার আলো দেখতে পেয়েছিল। কিন্তু বৈশিক বিভিন্ন সমস্যার কারণে বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে, তা বর্তমানে বহাল রয়েছে। বাজারে আস্থা ফিরিয়ে আনতে আমাদের দাবির মূখে বিএসইসি ফ্লোর প্রাইজ নির্ধারণ করে দিয়েছে। এতে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা চরম ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। আস্থা ফিরলেও সম্প্রতি বিএসইসির নির্দেশক্রমে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ শেয়ার ক্রয়ের ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদের দেওয়া চেক নগদায়ন না হওয়া পর্যন্ত শেয়ার ক্রয় করা যাবে না বলে ব্রোকারেজ হাউসগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছে। এই নির্দেশনার পরের দিন থেকে পরের দিন থেকে পুঁজিবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে এবং বাজারে ধারাবাহিক পতন হওয়ায় চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে।
এরই প্রেক্ষাপটে চিঠিতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ক্ষতির কথা বিবেচনা করে একটি স্থিতিশীল পুঁজিবাজার গড়ার লক্ষে উক্ত নির্দেশনা প্রত্যাহার করার অনুরোধ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ১১ অক্টোবর কার্যকারিতা স্থগিত থাকা ২০১০ সালের একটি প্রজ্ঞাপনের আলোকে ডিএসই’র পক্ষ থেকে ব্রোকার হাউজগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়, তারা যেন গ্রাহকের জমাকৃত চেক নগদায়ন না হওয়া পর্যন্ত ওই টাকার বিপরীতে কোনো শেয়ার কিনতে না দেওয়া হয়।
ওই নির্দেশনার পর পুঁজিবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। বিশেষ করে সোমবার এই ইস্যুকে কেন্দ্র বাজার চরম অস্থির হয়ে উঠে। বড় ধরনের দরপতন হয়। এর প্রেক্ষিতে চেকের ইস্যুটি নতুন করে আলোচনায় উঠে আসে।
এর আগে গতকাল সোমবার ঢাকা ব্রোকারস অ্যাসোসিয়েশন ও সিইও ফোরামের পক্ষ থেকে এ নির্দেশনা প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়ে বিএসইসি ও ডিএসইকে চিঠি দেয়া হয়েছে।
ডিবিএ’র চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে গ্রাহকের চেক নগদায়নের রিয়েল টাইম ব্যাংকিং ব্যবস্থা না থাকায়, গ্রাহক চেক জমাদানের মাধ্যমে শেয়ার ক্রয় করার প্রচলন বহু আগে থেকেই চলমান রয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় ব্রোকারেজ হাউজে চেক প্রদানের মাধ্যমে স্বাচ্ছন্দ্যে প্রয়োজন মাফিক শেয়ার ক্রয় করতে সমর্থ হয়। অন্যদিকে, এই প্রক্রিয়ার ফলে ব্রোকারেজ হাউজ এক্সচেঞ্জকে তাদের দৈনিক শেয়ার ক্রয়ের ওপর অর্থ নিষ্পত্তিতে কোনও সমস্যায় পড়তে হয় না। তাছাড়া লেনদেনে সুনাম ও স্বচ্ছতা রয়েছে এমন সুপরিচিত এবং নির্ভরযোগ্য গ্রাহকের ক্ষেত্রেই ব্রোকারেজ হাউজ কেবলমাত্র চেক গ্রহণের মাধ্যমে শেয়ার ক্রয়াদেশ বাস্তবায়ন করে থাকে। গ্রাহকের চেক নগদায়ন না হওয়ার ফলে সৃষ্ট ঝুঁকি যেহেতু ব্রোকারকেই নিতে হয়, তাই এক্ষেত্রে ব্রোকারেজ হাউজ তাদের ঝুঁকির বিষয়টি সর্বোচ্চ বিবেচনা করেই মূলত গ্রাহকভেদে চেকের মাধ্যমে শেয়ার ক্রয়ের অনুমতি দিয়ে থাকে।
তাই ট্রেকহোল্ডার গ্রাহকের জমাকৃত চেক নগদায়নের পর ক্রয় আদেশ বাস্তবায়ন করার বিষয়ে জারিকৃত নির্দেশনা পুঁজিবাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এর ফলে বাজারের দৈনিক লেনদেন কমে বাজার নিম্নমুখী ধারায় অবস্থান নেওয়া এবং বিনিয়োগকারীর একটি বড় অংশ বাজার থেকে তাদের বিনিয়োগ তুলে নিতে পারে। এ ছাড়া তারল্য সংকট সৃষ্টি হয়ে বাজার শক্তি হারিয়ে দুর্বল হয়ে পড়া এবং দীর্ঘমেয়াদে বাজারের ছন্দপতন হতে পারে বলে আশঙ্কা করা যাচ্ছে। তাই দেশে চলমান সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে দেশের অর্থনৈতিক ধারা অব্যাহত রাখতে, পুঁজিবাজারের উন্নয়ন ও অগতি সুসংগঠিত রাখাতে নির্দেশনা স্থগিত রাখার অনুরোধ জানাচ্ছি।
এদিকে সম্প্রতি জারি করা নির্দেশনা স্থগিতাদেশ চেয়ে সিইও ফোরামের প্রেসিডেন্ট মো. সায়েদুর রহমান চিঠিতে উল্লেখ করেছেন, দীর্ঘদিনের স্থগিত ইস্যুতে ডিএসইর এই ধরনের আশ্চর্যজনক নির্দেশনা বাজারে আরও আতঙ্ক ও বিপর্যয় তৈরি করতে পারে। যেখানে পুঁজিবাজার ইতোমধ্যে একটি অস্থির পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তাই বাজারের স্বার্থে জরুরি ভিত্তিতে তা প্রত্যাহার করা প্রয়োজন।
এছাড়া সিইও ফোরামের চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, যখনই কোনও ব্যক্তি বা বিনিয়োগকারী যথাযথ নথি-প্রমাণ বা সত্যতা ছাড়া ডিএসই বা বিএসইসির কাছে অভিযোগ করেন, তখনই ডিএসই বা বিএসইসি অবিলম্বে প্রক্রিয়া বা তদন্ত শুরু করে। এ ছাড়া খবর অনলাইন নিউজ পোর্টাল বা সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রকাশ হওয়ায় পুঁজিবাজার নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত হয়। পাশাপাশি পুঁজিবাজারের মধ্যস্থতাকারীদের সুনাম নষ্ট হয়। তাই বিএসইসি বা ডিএসইতে অভিযোগ দায়েরকারী ব্যক্তি বা বিনিয়োগকারীর কাছ থেকে যথাযথ সহায়ক নথি-প্রমাণ বা সত্যতা পাওয়ার পরই প্রক্রিয়া বা তদন্ত শুরু করার অনুরোধ জানাচ্ছি।
প্রসঙ্গত, ২০১০ সালের ৬ ডিসেম্বর দেওয়া সার্ক্যুলারে বলা হয়েছিলো, কোন বিনিয়োগকারী সিকিউরিটি ক্রয়ের ক্ষেত্রে স্টক ব্রোকারকে চেক প্রদান করলে তা নগদায়নের পূর্বে সিকিউরিটি ক্রয় করলে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স ১৯৯৬ এর ১৬ এর (এ) ধারা লংঘন হবে। এমন্ত অবস্থায় চেক নগদায়ন করার পূর্বে শেয়ার ক্রয় করা যাবে না।
তথ্য মতে, ২০১০ সালের ৭ ডিসেম্বর এই আদেশ জারির পরের দিনই ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাধারণ সূচক ৫৪৬ পয়েন্ট কমে গিয়েছিল। এমতাবস্থায় আদেশটি বাতিল করেছিল বিএসইসি। আদেশ বাতিল করা হলেও সে সময় দেশের পুঁজিবাজারে ব্যাপক দরপতন চলতে থাকে। পরবর্তীতে তা স্থগিত রাখা হয়। কিন্তু গত সপ্তাহে নির্দেশনাটি পুনরায় ব্রোকারদের কাছে পাঠানো হয়েছে। এতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
তাদের মতে, আগে বিনিয়োগকারীদের দেওয়া চেকের বিপরীতে শেয়ার কেনা যেত। এতে করে পুঁজিবাজারে লেনদেনের পরিমাণ বাড়তো। পাশাপাশি শেয়ারের চাহিদা ও যোগান ঠিক থাকতো। কিন্তু নতুন নির্দেশনার ফলে পুঁজিবাজারে লেনদেনের পাশাপাশি শেয়ারের চাহিদা কমেছে। যার নেতিবাচক প্রভাব পুঁজিবাজারে পড়েছে।