আজ: শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪ইং, ২৮শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

২৩ অক্টোবর ২০২২, রবিবার |

kidarkar

বাণিজ্যিক উৎপাদনে যাচ্ছে ইজেড’র ১৪ কারখানা

নিজস্ব প্রতিবেদক : অর্থনৈতিক অঞ্চলে এক সঙ্গে বাণিজ্যিক উৎপাদনে যাচ্ছে ১৪ শিল্পের কারখানা। একই সঙ্গে আরও ২৯ কারখানার নির্মাণ কাজ শুরু হচ্ছে।

আগামী বুধবার (২৬ অক্টোবর) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব ইজেডে শিল্প-কারখানা ও অবকাঠামোর উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন।

রোববার (২৩ অক্টোবর) বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) ও ইকোনমিক রিপোটর্স ফোরাম (ইআরএফ) যৌথ ভাবে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় এ ঘোষণা দেন বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন।

ইআরএফ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় বেজার কার্যক্রম ও অগ্রগতি বিষয়ক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ ফারুক।

বেজা নির্বাহী চেয়ারম্যান বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগরে এই প্রথম ৪টি শিল্পের বাণিজ্যিক কার্যক্রম উদ্বোধন হবে। এর মধ্যে রয়েছে ভারতের এশিয়ান পেইন্টস, জাপানের নিপ্পন, বাংলাদেশ ম্যাকডোনাল্ড ও টিকে গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান সামুদা কনস্ট্রাকশন লিমিটেড। শ্রীহট্ট অর্থনৈতিক অঞ্চলেও প্রথম উদ্বোধন হতে যাচ্ছে ‘ডাবল গ্লেজিংয়ের কারখানা। এছাড়া বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলের আরও ৯ টি শিল্প ইউনিটের বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হতে যাচ্ছে, এর মধ্যে রয়েছে দেশের সর্ববৃহৎ পিভিসি কারখানা। বাণিজ্যিক উৎপাদনে যেতে ১৪টি শিল্পে ইতোমধ্যে প্রায় ৯৬৭.৭৩মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করা হয়েছে এবং আগামীতে ব্যবসা সম্প্রসারণে আরও ৩৩১.২৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়েগের পরিকল্পনা জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলো।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী ২৯টি শিল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করতে যাচ্ছেন। এই শিল্পের কারখানা স্থাপনে এখন পর্যন্ত বিনিয়োগ হয়েছে প্রায় ৬১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং আরও বিনিয়োগ হবে প্রায় ১৯২২.৩৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।  এসব শিল্পে ইতোমধ্যে ৬৪০৭ জনের কর্মসংস্থান হয়েছে এবং আরও ৩৮,৬৫৮ জনের কর্মসংস্থান হবে। এছাড়াও, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগর, জামালপুর অর্থনৈতিক অঞ্চল, শ্রীহট্ট অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং সাবরাং ট্যুরিজম পার্কের প্রশাসনিক ভবন বিএসএমএসএন-এর ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ শেখ হাসিনা সরণি, ২৩০ কেভি গ্রিড লাইন এবং সাব-স্টেশনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো উদ্বোধন করবেন। একই সাথে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগরে পানি সরবরাহের জন্য ৫০ এমএলডি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টের ভিত্তিপ্রস্তরও স্থাপন করবেন প্রধানমন্ত্রী।
বেজার কার্যক্রম ও অগ্রগতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ২০১৩ সাল থেকে পরিকল্পিত শিল্পায়নের জন্য যাত্রা শুরু করেছে বেজা। ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী ১০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের উন্নয়ন কাজ শুরুর উদ্বোধন করেন। ২০১৯ সালে প্রধানমন্ত্রী অর্থনৈতিক অঞ্চলে শিল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় সব দেশের উন্নয়ন কাজ স্থবির হয়ে পড়লেও বেজা খুব অল্প সময়ের মধ্যে উন্নয়ন কার্যক্রম চালু করেছে। আর এরই ধারাবাহিকতায় আগামী ২৬ অক্টোবর (বুধবার) “স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে অর্থনৈতিক অঞ্চলের ৫০টি শিল্প ও অবকাঠামো  উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন-২০২২” অনুষ্ঠান আয়োজন করতে যাচ্ছে বেজা।

গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানি প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জাববে তিনি বলেন, অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগকারীদের অগ্রাধিকার দিয়ে বিদ্যুৎ ও গ্যাস দেওয়া হচ্ছে। বৈশি^ক কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যহত হচ্ছে। তবে আগামী দিনে রূপপুর ও মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হলে এর সমাধান হবে। এলএনজির দাম বৃদ্ধির কারণে এখন কিছুটা সমস্যা হলেও আগামী দিনে গ্যাস দেওয়া সম্ভব হবে। পানির চাহিদা পূরণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বেশ কয়েকটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে, যা দিয়ে পানির চাহিদা মেটানো যাবে।
এক প্রশ্নের উত্তরে নির্বাহী চেয়ারম্যান বলেন, অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এখন খাস জমিকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। তবে ইজেডে পরিকল্পিত শিল্পায়ন ও শতভাগ কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করেই শিল্প স্থাপন করতে হবে, এ ক্ষেত্রে কোন ছাড় নয়।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিনিয়োগকারীদের সুবিধা দিতেই অর্থনৈতিক অঞ্চল দুর্নীতি মুক্ত হবে চুক্তিতে এমন শর্ত উল্লেখ করা হয়েছে। ফলে ইজেডে দুর্নীতি রোধ করা সম্ভব হবে। তবে বেজার সঙ্গে কাজে সম্পৃক্ত অন্যান্য সংস্থাগুলো দুর্নীতি রোধ হলে সার্বিকভাবে দুর্নীতি কমবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। তিনি আরও বলেন, বেজা বিনিয়োগকারীদের যেমন নানা সুবিধা দিচ্ছে। চুক্তি অনুযায়ী কাজ না হলে বরাদ্দ বাতিল করছে। এখন পর্যন্ত দুটি প্রতিষ্ঠানের বরাদ্দ বাতিল করা হয়েছে।
বেজা চারটি জি২জি বিদেশি অর্থনৈতিক অঞ্চল বাস্তবায়ন করেছে। নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে জাপানিজ ইকোনমিক জোন উন্নয়নের পাশাপাশি সিঙ্গার শিল্পের নির্মাণ কাজ শুরু করেছে জানিয়ে শেখ ইউসুফ হারুন বলেন, এই জোনে আরও ১০টি বিদেশি ও ১টি দেশি প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগে আসছে।
সভায় প্রবন্ধ উপস্থাপনায় আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ ফারুক বলেন, বর্তমানে ৯৭টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের মধ্যে ২৮টি অর্থনৈতিক অঞ্চলে উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগর, শ্রীহট্ট অর্থনৈতিক অঞ্চল, জামালপুর অর্থনৈতিক অঞ্চল, মহেশখালী অর্থনৈতিক অঞ্চল ও সাবরাং ট্যুরিজম পার্কে এখন পর্যন্ত  প্রায় ২২.১৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে। এছাড়া ১২টি লাইসেন্সপ্রাপ্ত বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলে প্রায় ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ হয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলে ২৯টি শিল্প প্রতিষ্ঠান বাণিজ্যিক শিল্পোৎপাদন শুরু করেছে এবং আরও ৬১টি শিল্প নির্মাণাধীন রয়েছে। এই অঞ্চলগুলোতে জাপান, চীন, ভারত, অস্ট্রেলিয়া, নেদারল্যান্ডস, জার্মানি, আমেরিকা, যুক্তরাজ্য, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, নরওয়েসহ বিদেশি বিনিয়োগ হয়েছে। বেজা ঝামেলামুক্ত ব্যবসা পরিচালনার  সুযোগ দিতে ওয়ান স্টপ সার্ভিস (ওএসএস) সেন্টারের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের অনলাইনে ৪৮টিসহ ১২৫টি পরিষেবা দিচ্ছে।
ইআরএফ সভাপতি শারমীন রিনভীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বেজার মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) হাসান আরিফসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত স্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ইআরএফ সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশিদুল ইসলাম।

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.