আজ: শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ইং, ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

০৫ নভেম্বর ২০২২, শনিবার |

kidarkar

এলসির দেনা পরিশোধ করতে পারছেনা ২০ ব্যাংক

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশের অন্তত ২০টি ব্যাংকের কাছে ঋণপত্রের লেটার অব ক্যাডিট বা এলসি’র দায় পরিশোধের মতো কোনো ডলার নেই। আমদানির দায় মেটাতে গিয়েই ঘাটতিতে পড়ে যাচ্ছে এই ব্যাংকগুলো। প্রবাসীদের আয় (রেমিট্যান্স) ও রপ্তানি আয় থেকে আসা ডলার দিয়েও নিজেদের আমদানির দায় এবং গ্রাহকদের বিদেশি ঋণ পরিশোধ করতে পারছে না। এসব কারণে ওইসব ব্যাংকগুলো নতুন এলসি খোলা প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে। অনেক ব্যাংক খাদ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের এলসি খোলাও বন্ধ করেছে। ডলারের দাম যেমনই হোক, সংকট দেখা দিচ্ছে চরম আকারে। এমন সময়েও আমদানির দায় পরিশোধে বাড়তি মূল্যে কিনতে হচ্ছে ডলার। এতে একদিকে আগের খোলা এলসির (ঋণপত্র) দায় পরিশোধে হিমশিম খাচ্ছে ব্যাংকগুলো, অন্যদিকে নতুন এলসি খুলতেও নানামুখী জটিলতায় পড়তে হচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, বর্তমানে সবচেয়ে বেশি ডলার ঘাটতিতে রয়েছে অগ্রণী ব্যাংক। রাষ্ট্রায়ত্ত এ ব্যাংকের ঘাটতির পরিমাণ ২৫৬ মিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। এছাড়া এক্সিম ব্যাংক ৮৮ মিলিয়ন, ঢাকা ব্যাংক ৬৮, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক ৬৪, ইউসিবিএল ৪৯, দ্য সিটি ব্যাংক ৪৭, পূবালী ব্যাংক ৪৫, প্রাইম ব্যাংক ৪২ ও সাউথইস্ট ব্যাংক ৪১ মিলিয়ন ডলার ঘাটতিতে রয়েছে। ইস্টার্ন ব্যাংকের ঘাটতির পরিমাণ ৩৫ মিলিয়ন ডলার। মার্কেন্টাইল ব্যাংক ৩৪, ওয়ান ব্যাংক ৩২, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক ২৭, ন্যাশনাল ব্যাংক ২৪, ব্যাংক এশিয়া ১৪ ও স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ১১ মিলিয়ন ডলার ঘাটতিতে রয়েছে। ৮ মিলিয়ন ডলার করে ঘাটতিতে রয়েছে ট্রাস্ট, ব্র্যাক ও এনসিসি ব্যাংক। বিদেশি খাতের কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলনেও ৪ মিলিয়ন ডলার ঘাটতি রয়েছে।

জানা যায়, দেশের সবচেয়ে বেশি ৩০ শতাংশ রেমিট্যান্স সংগ্রহ করে ইসলামী ব্যাংক। একইভাবে রপ্তানি আয়ের দিক থেকেও এই ব্যাংকটি সবার শীর্ষে রয়েছে। এই ব্যাংকটিও আমদানি দায় পরিশোধ নিয়ে শঙ্কায়। সম্প্রতি স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড, মাশরেক, এডিসিবি, অ্যাক্সিস ব্যাংকের বেশ কিছু এলসি পরিশোধ করতে পারেনি এই ব্যাংকটি। তাদেরও এলসি মেটানোর ক্ষেত্রে ৩০ দিন পর্যন্ত অপেক্ষায় রাখতে হয়েছে বিদেশি ব্যাংকগুলোকে। যদিও ব্যাংকটিতে প্রায় ৮৮ মিলিয়ন ডলার উদ্বৃত্ত থাকছে তাদের হিসেবে।

বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘নিট এক্সচেঞ্জ পজিশনে ৮৮ মিলিয়ন ডলার উদ্বৃত্ত দেখালেও ইসলামী ব্যাংকের হাতে প্রকৃত অর্থে ডলার নেই। এ কারণে এলসি দায় পরিশোধে ব্যর্থ হচ্ছে। ব্যাংকটি তাদের অনশোর ব্যাংকিং থেকে বেশ কিছু ডলার অফশোর ব্যাংকিংয়ে স্থানান্তর করে বিনিয়োগ করে এ বিপদে পড়েছে বলে জানায় এ কর্মকর্তা।

এলসি পরিশোধে বিলম্ব হচ্ছে স্বীকার করে ইসলামী ব্যাংকের এমডি মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা জানান, দেশের কোনো ব্যাংকই চাহিদা অনুযায়ী ডলার পাচ্ছে না। এ কারণে সব ব্যাংকেই কম-বেশি সংকট দেখা দিয়েছে। পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতেই আমরা কিছু এলসির দায় পরিশোধে বিলম্ব করেছি। তবে কিছুটা বিলম্ব হলেও সব এলসির দায় পরিশোধ করে দেওয়া হচ্ছে।

অপরদিকে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, অগ্রণী, জনতা ও রূপালী ব্যাংক ইতোমধ্যে অনেক এলসি পরিশোধে বিলম্ব করেছে। স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ছাড়াও ইউরোপের অন্যতম বৃহৎ কমার্স ব্যাংকের এলসির দায় পরিশোধে বিলম্ব করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো। সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংকসহ দেশের এক ডজন ব্যাংকের বিরুদ্ধে এলসি দায় বিলম্বে পরিশোধের অভিযোগ করছে বিদেশি ব্যাংকগুলো।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়মে বলা আছে, ব্যাংকগুলো তাদের রেগুলেটরি ক্যাপিটালের ১৫ শতাংশের সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সংরক্ষণ করতে পারবে। এ হিসাবে ঢাকা ব্যাংকের ডলার সংরক্ষণের সীমা ৩০ মিলিয়ন। কিন্তু ব্যাংকটি প্রায় ৬৮ মিলিয়ন ডলার ঘাটতিতে রয়েছে বর্তমানে। ডলার সংরক্ষণে সীমার সমপরিমাণ ঘাটতিতে থাকলে সেটিকে স্বাভাবিকভাবে দেখে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে তা সীমার অতিক্রম করলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে জরিমানার বিধান রয়েছে।

ব্যাংক পরিচালকদের মতে, বিদ্যমান ডলার সংকট পরিস্থিতি ভয়াবহ। এর ভয়াবহতা অনেকেই বুঝতে পারছেন না। প্রতিদিনই কোনো না কোনো ব্যাংক এলসির দায় পরিশোধ করতে ব্যর্থ হচ্ছে। এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে যে, বিদেশি ব্যাংকগুলো বাংলাদেশের এলসি নেওয়াই বন্ধ করার উপক্রম হচ্ছে।

সম্প্রতি শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহী মোসলেহ্ উদ্দীন আহমেদ বলেন, ব্যাংকের নিট এক্সচেঞ্জ পজিশনে ডলার ঘাটতি কমাতে রেমিট্যান্স বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছি। শুধু আমরা নই, দেশের প্রায় সব ব্যাংকই ডলার সংকটে আছে বলে জানান তিনি।

এ অবস্থায় ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীরা গত সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের দুই ডেপুটি গভর্নরের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে এবিবি ও বাফেদার দায়িত্বে থাকা ব্যাংক নির্বাহীরা ডলার সংকটের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ডলার সহায়তা চান। যদিও বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর কাজী ছাইদুর রহমান ব্যাংক এমডিদের দাবি সরাসরি নাকচ করে দেন।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র জি এম আবুল কালাম আজাদ বলেন, এলসি খোলার পরিমাণ প্রায় ৪০ শতাংশ কমেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি চৌকস টিম ব্যাংকের খোলা এলসিগুলো পর্যবেক্ষণ করছে।

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.