গ্রিনওয়াশিং নিয়ে সতর্ক থাকার আহ্বান আন্তর্জাতিক ব্যাংকগুলোর সংগঠন জিএবিভি
নিজস্ব প্রতিবেদক: মিশরে COP27 জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলন-এর (৬-১৮ নভেম্বর ২০২২) প্রেক্ষিতে মূল্যবোধ-ভিত্তিক ব্যাংকগুলির একটি গ্লোবাল নেটওয়ার্ক বিশ্বের আর্থিক খাতের প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতিগুলোকে বাস্তবে রূপ দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
১০ নভেম্বর ২০২২ বিশ্বব্যাপী ব্যাংকিং অন ভ্যালুস ডে পালন করেছে দ্যা গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ব্যাংকিং অন ভ্যালুজ (জিএবিভি)। এর উদ্দেশ্য হলো জলবায়ু পরিবর্তনের মূল কারণগুলো মোকাবেলায় ব্যাংকগুলোর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা সম্পর্কে সচেতন করা।
COP27 ‘অর্থ দিবস’-এ মূল্যবোধ-ভিত্তিক ব্যাংকগুলো সহ আর্থিক খাতকে নিজেদের প্রতিশ্রুতি মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছে জিএবিভি। গত বছর যুক্তরাজ্যের গ্লাসগো-তে অনুষ্ঠিত COP26 সম্মেলনে, মূলধারার আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় এবং নেট জিরোর দিকে অগ্রসর হওয়াকে সম্ভব করতে সরকারগুলোর কাছ থেকে অঙ্গীকার ও ঘোষণা আহ্বান করে। এক বছর পরে, জীবাশ্ম জ্বালানি শিল্পে অনেকে ইন্ডাস্ট্রিয়াল স্কেলে অর্থায়ন চালিয়ে যাচ্ছেন। ফাইন্যান্স ওয়াচের একটি সাম্প্রতিক প্রতিবেদন ধারণা করে যে, ৬০টি বৃহত্তম গ্লোবাল ব্যাংকের এখনও ১.৩৫ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার সমমূল্যের জীবাশ্ম জ্বালানি সম্পদের সাথে সম্পৃক্ত আছে।
জিএবিভি-এর এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর মার্টিন রোনার বলেন, ব্যাংকিং কখনোই নিরপেক্ষ হয় না – অর্থায়ন এবং বিনিয়োগ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেয় প্রতিষ্ঠানগুলো, যা আমাদের সামষ্টিক ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে৷ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, মূলধারার ব্যাংকগুলো ক্রমবর্ধমানভাবে তাদের সামাজিক উদ্দেশ্য এবং পরিবেশগত লক্ষ্যগুলোকে ভিত্তি করে নিজেদের অবস্থান তৈরি করছে। তাদের এই প্রতিশ্রুতি কাজের মাধ্যমে বাস্তবে রূপ দেয়া উচিত।
১০ নভেম্বর, বাংলাদেশের ঢাকায় ব্যাংকিং অন ভ্যালুজ ডে ২০২২ পালন করা হয়। বার্ষিক সভা উপলক্ষে জিএবিভি-এর সদস্যরা আর্থিক খাতে গ্রিনওয়াশিং-এর ক্রমবর্ধমান প্রচলন সম্পর্কে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছে। "বড় প্রতিশ্রুতির পিছনে বাস্তবায়নের প্রকৃত চিত্র" থিমের ক্যাম্পেইনটি মূল্যবোধ-ভিত্তিক ব্যাংকগুলোর প্রতিশ্রুতি এবং তাদের বাস্তব প্রভাবের উপর ফোকাস করে৷ বিশ্বব্যাপী ভার্চুয়াল প্যানেল আলোচনায়, নেতারা গ্রিনওয়াশিংয়ের ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি এবং প্রকৃত প্রভাব সৃষ্টির লক্ষ্যে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
ব্র্যাক ব্যাংক-এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর অ্যান্ড সিইও সেলিম আর. এফ. হোসেন, যুক্তরাষ্ট্রের অ্যামালগামেটেড ব্যাংক- এর সিইও প্রিসিলা সিমস ব্রাউন এবং ব্যাংক অস্ট্রেলিয়া’র সিইও ড্যামিয়েন ওয়ালশ প্যানেলিস্ট হিসেবে আলোচনায় অংশ নেন।
এ উপলক্ষে সেলিম আর. এফ. হোসেন বলেন, “সাসটেইনেবিলিটির ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতামূলক প্রচেষ্টা অত্যন্ত প্রয়োজন। আমাদেরকে অবশ্যই শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে হবে এবং তাদেরকে দীর্ঘমেয়াদী ইতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে সচেতন করতে হবে। এর ফলে, তারা বাস্তব কার্যক্রমে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়ার অনুপ্রেরণা পাবে। ব্যাংকিং অন ভ্যালুস ডে পালনের মাধ্যমে আমরা বার্তাটি বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর ব্যাংকিং আন্দোলনের শুরু করতে পারবো। আসুন আমরা আমাদের লক্ষ্য নির্ধারণ করে একটি উন্নত সমাজের জন্য একসাথে কাজ করি।
সারা বিশ্বের ৭০টি ব্যাংক, ক্রেডিট ইউনিয়ন এবং ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে জিএবিভি গঠিত। এটি ব্যাংকগুলোর পক্ষে অর্থনীতি, সমাজ এবং পরিবেশ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। জিএবিভি সদস্যগণ পার্টনারশিপ ফর কার্বন অ্যাকাউন্টিং ফাইন্যান্সিয়ালস (পিসিএএফ)-এর মতো উদ্যোগ নিতে এবং বাস্তবায়নে সহায়তা করছে। পিসিএফ হলো আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণ এবং বিনিয়োগ হতে নির্গত গ্রিনহাউজ গ্যাস এমিশন (জিএইচজি) পরিমাপ ও প্রকাশের জন্য একটি হারমোনাইজড, ওপেন-সোর্স টুল। জিএবিভি সম্প্রতি ফাইন্যান্স ফর দ্যা ফিউচার অ্যাওয়ার্ড দ্বারা ক্লাইমেট লিডার হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছে এবং একটি পর্যবেক্ষক এনজিও হিসাবে COP27-এ অংশগ্রহণ করছে। মূল্যবোধ-ভিত্তিক ব্যাংকগুলো সিদ্ধান্ত গ্রহণের কেন্দ্রে মানুষ এবং বিশ্বকেত একত্রে রাখে। আকার, ব্যবসায়িক মডেল, সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট কিংবা বাজারের ক্ষেত্রে শক্তিশালী বৈচিত্র্যের সাথে তারা একটি সাধারণ লক্ষ্য ভাগ
করে নেয়। তাদের উদ্দেশ্য হলো সম্প্রদায়ের চাহিদা মেটাতে এবং একটি ইতিবাচক প্রভাব তৈরি করতে অর্থায়নকে ব্যবহার করা।
জামানত ছাড়াই ছোট আকারের এসএমই ঋণের প্রবর্তক ব্র্যাক ব্যাংক গ্রামীণ জনপদের তৃণমূল উদ্যোক্তাদের উন্নয়নে সহায়তা করে আসছে। পাশাপাশি, প্রকৃত অর্থনীতি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতেও এটি উল্লেখযোগ্য অবদান রাখে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে, ব্যাংকটি দশ লাখ এসএমই উদ্যোক্তাদের সেবা দিয়েছে, যা অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য মূল্য যোগ করেছে। ব্যাংকের ৭০% এরও বেশি সম্পদ প্রকৃত অর্থনীতিতে অবদান রাখে। মানুষ, পৃথিবী এবং সমৃদ্ধিতে বিশ্বাসী হিসেবে,ব্র্যাক ব্যাংক নিজের ব্যাংকিং কার্যক্রমকে সাসটেইবেবিলিটি দৃষ্টিতে দেখে।