আজ: বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ইং, ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৫ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

০১ ডিসেম্বর ২০২২, বৃহস্পতিবার |

kidarkar

এসএমই মেলায়

ক্রেতাদের উপস্থিতি আশা দেখাচ্ছে বিক্রেতাদের

নিজস্ব প্রতিবেদক : এসএমই মেলায় ক্রেতার ব্যাপক উপস্থিতি আশা দেখাচ্ছে বিক্রেতাদের। কেউ এনেছেন ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য রংপুরের শতরঞ্জি, কেউবা বাঁশ-বেত-পাট দিয়ে তৈরি বিভিন্ন পণ্য। কারও স্টলে বিক্রি হচ্ছে হালকা প্রকৌশল পণ্য, আবার কারও কাছে রয়েছে ছোটদের খেলনা। পোশাক ও চামড়ার পণ্যের পসরা সাজিয়েও বসেছেন অনেকে। খাদ্য ও কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ পণ্য, হস্ত ও কারুশিল্প, পাটজাত পণ্য, প্লাস্টিক, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস এবং তথ্যপ্রযুক্তি পণ্যের স্টল রয়েছে। সবই দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) খাতের উদ্যোক্তাদের তৈরি। সেবা খাতেরও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান আছে।
রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে চলা ১০ দিনের জাতীয় এসএমই পণ্যমেলা ঘুরে এমন সব দৃশ্য দেখা গেছে। গত বৃহস্পতিবার শুরু হয়েছে এ মেলা, যা চলবে আগামী ৩ ডিসেম্বর শনিবার পর্যন্ত।
বিক্রেতাদের একটি বড় অংশ জানান, গত বছরের চেয়ে এবারে শুরুর দিকে বিক্রি তুলনামূলক কম ছিল। তবে মেলার শেষের দিকে এসে ক্রেতাদের সংখ্যা বাড়ছে। সরেজমিন গতকাল বুধবার মেলা প্রাঙ্গণে গিয়ে দেখা যায়, সারা দিন ঢিলেঢালাভাবে চললেও সন্ধ্যার পর গ্রাহকদের উপচে পড়া ভিড় হয়। এতে বিক্রি বেশ বাড়ে বলে জানান বিক্রেতারা।
এবারের মেলায় সারা দেশ থেকে ৩২৫টি ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠান ৩৫১টি স্টলে তাদের উৎপাদিত পণ্য প্রদর্শন ও বিক্রি করছে। এর মধ্যে সংখ্যায় সবচেয়ে বেশি ফ্যাশন–শিল্পের উদ্যোক্তারা। আর বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানই ঢাকাকেন্দ্রিক।
কাদা-মাটি দিয়ে কাপড় প্রিন্ট করেন উদ্যোক্তা জগদীস চন্দ্র রায়। পাটগাছের পাতা, কলার পচানি, হলুদ ইত্যাদি দিয়ে প্রাকৃতিকভাবে রং তৈরি করেন তিনি। বানান শাড়ি, থ্রি-পিস, বেড শিট, কাপড়ের জুতা, কুশন কাভার ইত্যাদি। এসব পণ্য নিয়েই এ বছর মেলায় হাজির হয়েছেন টি-গাঁও কারুশিল্পের স্বত্বাধিকারী জগদীস।

তিনি জানান, মেলায় প্রথম ছয় দিনে প্রায় ৬০ হাজার টাকার বেশি পণ্য বিক্রি করেছেন। এ ছাড়া বেশ কিছু ক্রয়াদেশ পেয়েছেন।
মেলায় হাতে সেলাই করা বাহারি নকশার নকশিকাঁথার পসরা সাজিয়ে বসেছেন চাঁপাই নকশিকাঁথার উদ্যোক্তা আইরিন খাতুন। শীত এসে গেছে, তাই সংগত কারণেই তাঁর দোকানে ভিড় তুলনামূলক বেশি। আইরিন খাতুন জানান, মাসে ১৫ লাখ টাকার বেশি পণ্য পাইকারিতে বিক্রি করেন তিনি। সারা দেশে তাঁদের গ্রাহক আছেন। গ্রাহকদের আরও কাছে যেতে প্রতিবছর মেলায় অংশ নেন বলে জানান তিনি।
মেলায় ঘুরতে ঘুরতে একটি স্টলের দেয়ালে হয়তো আটকে যাবে আপনার চোখ। সেই দেয়ালে টানানো আছে বিভিন্ন বিখ্যাত লোকের ছবি। হাতের সেলাইয়ের মাধ্যমে কাপড়ের মধ্যে এসব ছবি ফুটিয়ে তুলেছেন সুচিশিল্পী ইলোরা পারভীন। তিনি জানান, ছোটবেলা থেকে অনেক অধ্যবসায়ের মাধ্যমে এই কৌশল আয়ত্ত করেছেন। গত ছয় মাসে এ রকম ছবি বিক্রি করে ১৫ লাখ টাকা আয় করেছেন তিনি।
মেলায় অংশ নিয়েছে চামড়াশিল্পের বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান। তাদের স্টলগুলোতে মিলছে চামড়ার জুতা, ব্যাগ, জ্যাকেট, বেল্ট, ওয়ালেট, চাবির রিং ইত্যাদি পণ্য। চামড়ার পণ্য বিক্রির প্রতিষ্ঠান আমিন এক্সওয়াইজেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিনুর রহমান বলেন, এবারে বেচাকেনা মোটামুটি ভালো। যাঁরা মেলায় আসছেন, তাঁরা কিছু না কিছু কিনছেন।
বগুড়ার ধরমপুর এলাকা থেকে মেলায় গয়না নিয়ে এসেছে আরআর জুয়েলার্স। প্রতিষ্ঠানটির বিক্রয়কর্মী মো. রিপন বলেন, ‘মেলা শুরুর দুই দিন পর আমরা স্টলে আসি। গত চার দিনে ৬০ হাজার টাকার পণ্য বিক্রি করেছি।’
পোড়ামাটির বিভিন্ন পণ্য নিয়ে মেলায় এসেছেন রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা মো. আবুল কালাম মিয়া। তিনি ১৯৭৫ সাল থেকে এই ব্যবসা করছেন। এসএমই মেলাতেও অনেক বছর ধরে আসেন। পোড়ামাটির নকশা ঘরের মালিক আবুল কালাম মিয়া বলেন, ‘মেলায় আসলে অনেক নতুন গ্রাহক তৈরি হয়। এ জন্য প্রতিবছর এ মেলায় আসি।’
মেলা থেকে কেনাকাটা করে ফিরছিলেন দুই ভাই-বোন আরিক অর্ক ও অনসূয়া বিথিন। অনসূয়া এবার উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছেন। গতকাল তাঁর পরীক্ষা ছিল না। এ জন্য বাবার সঙ্গে মেলায় ঘুরতে আসেন। কাশফুলের খড়ি দিয়ে বানানো বড় ঝুড়ি, ডেনিম কাপড়ের ব্যাগ, জুতা, গয়না ও চাবির রিং কেনেন তাঁরা। অনসূয়া বলেন, ‘এসব জিনিস বাইরে সচরাচর পাওয়া যায় না। তাই মেলা থেকে কিনেছি।’ গতকাল এসএমই মেলায় ঘুরতে আসেন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনোভেশন ও এন্টারপ্রেনারশিপ বিভাগের ৩৮ শিক্ষার্থী। তাঁরা মেলা ঘুরে উদ্যোক্তাদের সঙ্গে পরিচিত হন। এই দলের এক সদস্য নহিমিয় বিশ্বাস বলেন, ‘আমাদের পড়ালেখার বিষয়ের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত এই মেলা। এ জন্য সবাই মিলে এসেছি বিভিন্ন উদ্যোগ সম্পর্কে জানতে ও আমাদের নেটওয়ার্ক বাড়াতে।’
এসএমই উদ্যোক্তাদের পণ্যের প্রচার ও প্রসারে ২০১২ সাল থেকে জাতীয় এসএমই পণ্যমেলার আয়োজন করে আসছে এসএমই ফাউন্ডেশন। এখন পর্যন্ত অনুষ্ঠিত ৯টি এসএমই পণ্যমেলায় প্রায় দুই হাজার ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা অংশ নিয়েছেন। ঢাকায় জাতীয় পর্যায়ের মেলা আয়োজনের পাশাপাশি বিভাগীয় আর জেলা পর্যায়েও এসএমই পণ্যমেলা আয়োজন করা হয়।

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.