আজ: সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫ইং, ১৫ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২৯শে শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

০৫ ডিসেম্বর ২০২২, সোমবার |

kidarkar

শেয়ারবাজারের ব্রোকারেজ হাউসগুলোও সংকটে

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশের শেয়ারবাজারে লেনদেনের মন্দাভাব বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি বাজারসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকেও এখন বিপাকে ফেলেছে। কয়েক মাস ধরে অনেক ব্রোকারেজ হাউসে কোনো লেনদেন নেই। আবার যারা লেনদেন করতে পারছে, তাতে তাদের তেমন মুনাফা হচ্ছে না। ফলে এসব প্রতিষ্ঠান কয়েক মাস ধরে পরিচালন লোকসানে রয়েছে বলে জানা গেছে।
গত কয়েক দিনে ছোট-বড় প্রায় ১০টি ব্রোকারেজ হাউসের শীর্ষ নির্বাহীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঋণগ্রস্ত সাধারণ বিনিয়োগকারীদের অবস্থা বেশি খারাপ। শেয়ার লেনদেন করতে না পারলেও ঋণের বিপরীতে চড়া সুদ গুনতে হচ্ছে তাঁদের। একাধিক ব্রোকারেজ হাউসের নির্বাহী বলেন, যেসব ব্রোকারেজ হাউস ঋণ দেয়, তারা কিছু সুদ পাচ্ছে। কিন্তু যারা ঋণ দেয় না, তাদের কয়েক মাস ধরে কোনো আয় নেই। কারণ, নিজেদের পোর্টফোলিওর পাশাপাশি সাধারণ বিনিয়োগকারীদের লেনদেন কমে গেছে।
যেসব ব্রোকারেজ হাউস ঋণে ব্যবসা করে না, তাদের আয় আসে শেয়ার লেনদেনের বিপরীতে পাওয়া কমিশন থেকে এবং পোর্টফোলিও বা নিজস্ব পত্রকোষের বিনিয়োগ থেকে পাওয়া মুনাফা বাবদ। কিন্তু দুই মাসের বেশি সময় ধরে এ দুটি খাত থেকে ব্রোকারেজ হাউসগুলো তেমন আয় করতে পারছে না। কারণ, বাজারে বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ এবং লেনদেন দুটোই তলানিতে নেমে গেছে। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারই এখন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) বেঁধে দেওয়া ফ্লোর প্রাইস বা সর্বনিম্ন দামে নেমে এসেছে। এসব শেয়ারের লেনদেন হচ্ছে না বললেই চলে। ফলে এসব শেয়ারে সাধারণ ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ আটকে আছে।
দেশজুড়ে ২৩টি শাখা রয়েছে এমন একটি শীর্ষস্থানীয় ব্রোকারেজ হাউসের প্রধান নির্বাহী বলেন, ‘আমাদের প্রতিষ্ঠানটিকে লাভজনকভাবে পরিচালনা করতে হলে গড়ে প্রতিদিন সর্বনিম্ন ১০০ কোটি টাকার লেনদেন হওয়া দরকার। কিন্তু তখনই আমাদের লেনদেন শতকোটি টাকার বেশি হয়, যখন বাজারের সার্বিক লেনদেন ৭০০ কোটি টাকার ওপরে থাকে। কিন্তু বেশ কিছুদিন ধরেই ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ৫০০ কোটি টাকার কম লেনদেন হচ্ছে।
গতকাল রোববার ডিএসইতে লেনদেন নেমেছে ৩১৪ কোটি টাকা, যা গত ২০ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। এর আগে গত বছরের ৫ মে ডিএসইতে সর্বনিম্ন ২৩৭ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছিল। লেনদেনের পাশাপাশি গতকাল সূচকও কমেছে। ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স এদিন ২১ পয়েন্ট কমে ৬ হাজার ২২৫ পয়েন্টে নেমেছে।
বেসরকারি একটি ব্যাংকের ব্রোকারেজ হাউসের শীর্ষ নির্বাহী জানান, গত সেপ্টেম্বর থেকে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালন লোকসানে চলছে। তবে বছরের প্রথম ছয় মাসে ভালো ব্যবসা করায় গত কয়েক মাসের ধাক্কা সামাল দেওয়া গেছে। তিনি আরও জানান, তাঁদের প্রতিষ্ঠানের ২৫০ কোটি টাকার বিনিয়োগ এখন ৩০-৩৫ কোটি টাকা লোকসানে আছে।
ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, ফ্লোর প্রাইসে আটকে থাকা ১০৫টি কোম্পানির শেয়ারের লেনদেন হয়নি গতকাল। শতাধিক কোম্পানির শেয়ারের দাম এখন ফ্লোর প্রাইসে আটকে আছে। মাঝেমধ্যে কোনো কোনো কোম্পানির হাতেগোনা কিছু শেয়ার লেনদেন হয় ফ্লোর প্রাইসে। ফ্লোর প্রাইসে আটকে থাকা কোম্পানিগুলোর মধ্যে গ্রামীণফোন, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, ব্র্যাক ব্যাংক, বিএসআরএম, স্কয়ার ফার্মার মতো ভালো মৌলভিত্তির কোম্পানিও রয়েছে।
এই অবস্থায় পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, তারা এখনই ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার কথা ভাবছে না। প্রতিষ্ঠানটি মনে করছে, এ মুহূর্তে ফ্লোর প্রাইস তুলে নিলে শেয়ারের দামে ধস নেমে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ভীষণ ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.