আজ: বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ইং, ১১ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৩ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

০৭ ডিসেম্বর ২০২২, বুধবার |

kidarkar

বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সংকটের প্রভাব পড়েছে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের উপর

শাহ আলম নূর : বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সংকটের প্রভাব পড়েছে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের উপর। এতে লাভের পরিবর্তে এসব প্রতিষ্ঠান লোকসানের সম্মুখিন হয়েছে।
যে সব প্রতিষ্ঠান গত অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে লাভ করেছিল এমন প্রতিষ্ঠানের মধ্য থেকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ২৪টি প্রতিষ্ঠান নতুন করে লোকসানী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। চলমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের কারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) এসব প্রতিষ্ঠন ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, টাকার বিপরীতে মার্কিন ডলারের মূল্যবৃদ্ধি এবং জ্বালানি সংকটের কারণে এসব প্রতিষ্ঠান লাভের পরিবর্তে লোকসানি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ঠরা।
২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে শুধুমাত্র ৮টি কোম্পানি লোকসানের সম্মুখীন হয়েছিল। কিন্তু ২০২২-২৩ অর্থ বছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে লোকসান প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়ে ২৪ কোম্পানিতে পৌঁছেছে।
বর্তমানে, ৩৫৩টি কোম্পানি দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত রয়েছে। এদের মধ্যে ২৯৪টি তাদের সর্বশেষ ত্রৈমাসিক (জুলাই-সেপ্টেম্বর ২০২২) আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
যে সব প্রতিষ্ঠান আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে তাদের মধ্যে মুনাফা করেছে ২৩২টি কোম্পানি। বাকি ৬২টি লোকসানের সম্মুখিন হয়েছে। এর মধ্যে ২৪টি নতুন কোম্পানি যারা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় লোকসান করেছে।
কোম্পানিগুলোর তথ্যানুসারে ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্য কমে যাওয়ার কারণে আমদানি ব্যয় ব্যাপক ভাবে বেড়েছে। এতে ২০২২-২৩ অর্থ বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর মাসে তাদের মুনাফা হ্রাস পেয়েছে।
কোম্পানির অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা গেছে, অর্থবছরের প্রথম থেকে উৎপাদন ও ব্যবস্থাপনা ব্যয় বাড়তে শুরু করেছে। কোম্পানিগুলোর মধ্যে সাতটি প্রকৌশল খাতের এবং বাকিগুলো বিদ্যুৎ, বস্ত্র, অর্থ, বীমা, রাসায়নিক, ট্যানারি এবং পর্যটন খাতের।
লাভ থেকে লোকসানে যাওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ, সিঙ্গারবিডি, এসিআই লিমিটেড, বারাকা পাওয়ার, বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ার, অ্যাপেক্স ট্যানারি, ফিনিক্স ফাইন্যান্স, বে লিজিং, ইফাদ অটোস, রানার অটোমোবাইলস, লিগ্যাসি ফুটওয়্যার, ন্যাশনাল ব্যাংক, ইসলামিক ব্যাংক। ফাইন্যান্স, প্রোভাতি ইন্স্যুরেন্স, পেনিনসুলা চিটাগাং, গোল্ডেন সন, সাফকো স্পিনিং, বিডি থাই, ফার ইস্ট নিটিং, প্রাইম টেক্সটাইল, গোল্ডেন হারভেস্ট এগ্রো, ইউনাইটেড ইন্স্যুরেন্স, রহিম টেক্সটাইলস এবং খান ব্রাদার্স পিপি বোনা ব্যাগ ইন্ডাস্ট্রিজ।
স্থানীয় ইলেকট্রনিক্স এবং অ্যাপ্লায়েন্স নির্মাতা ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ তার ব্যবসায়িক লাভের ক্ষেত্রে ব্যাপক ধাক্কা খেয়েছে। কারণ ইলেকট্রনিক্স জায়ান্টটি ২০২২-২৩ অর্থ বছরের প্রথম ত্রৈমাসিকে ৪৬ কোটি টাকা লোকসান করেছে।
কোম্পানির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যে বিশ্ববাজারে কাঁচামালের দাম বৃদ্ধির কারণে তাদের উৎপাদন খরচ এবং অন্যান্য ব্যয় ব্যপক ভাবে বেড়েছে। এতে সদ্য সমাপ্ত প্রান্তিকে লাভের পরিবর্তে লোকসানের সম্মুখীন হয়েছে। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠনটি ২০২১-২২ অর্থ বছরের প্রথম ত্রৈমাসিকে ২৮১ কোটি টাকা লাভ করেছিল।
এদিকে, চলমান বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাব এসিআই লিমিটেডের উপরও ছায়া ফেলেছে। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানটি ২০২২-০২৩ অর্থ বছরের প্রথম ত্রৈমাসিকে ১৮.৬ কোটি টাকার নিট লোকসান করেছে।
তালিকাভুক্ত জায়ান্ট কোম্পানি, যদিও, ২০২১-২২ অর্থ বছরের প্রথম প্রান্তিকে ৩০.১২ কোটি টাকা নিট মুনাফা করতে সক্ষম হয়েছিল।
আর্থিক প্রতিবেদন থেকে বোঝা যায় কোম্পানিটি সর্বশেষ প্রান্তিকে তার ব্যবসায়িক অগ্রগতিতে একটি বিশাল আঘাতের সম্মুখীন হয়েছে।
ডলারের বিপরীতে টাকার অত্যধিক অবমূল্যায়ন, কাঁচামালের দামে অস্বাভাবিক বৃদ্ধি, পরিবহ খরচ বৃদ্ধি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বাজারের অস্থির অবস্থার কারণে আমদানি ব্যয় ব্যাপক ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে মুনাফার উপর প্রভাব ফেলছে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা।
দেশের আটটি তালিকাভুক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন কোম্পানির মধ্যে সাতটি চলতি অর্থবছরে প্রথম প্রান্তিকে তাদের আয়ের নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি নথিভুক্ত করেছে। ২০২২-২৩ অর্থ বছরের প্রথম প্রান্তিকে এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দুটি বারাকা পাওয়ার এবং বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ার লিমিটেড বড় লোকসানের সম্মুখিন হয়েছে।
সংশ্লিষ্ঠদের মতে প্রধানত বিশ্ববাজারে জ্বালানি মূল্যের অত্যধিক স্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেনে উল্লেখযোগ্য ক্ষতি, রাশিয়া-ইউক্রেনীয় যুদ্ধ এবং জ্বালানি সরবরাহের ঘাটতির কারণে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং অস্থিরতার কারণে কোম্পানিগুলির আয় কমেছে।
২০২২-২৩ অর্থ বছরের প্রথম ত্রৈমাসিকে, পেনিনসুলা চিটাগাং হোটেলের আয় গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৬৫ শতাংশ বেড়ে ৯.৫৫ কোটি টাকা হয়েছে। কিন্তু মূল্যস্ফীতি তার লাভের অংশ খেয়ে ফেলেছে। এ প্রতিষ্ঠানটি বছরের প্রথম প্রান্তিকে ৩.৬৯ কোটি টাকার মুনাফার পরিবর্তে চলতি অর্থ বছরের জুলাই-সেপ্টম্বর ৩.৯৩ কোটি টাকা লোকসান করেছে।
দ্য পেনিনসুলার কোম্পানি সেক্রেটারি মোহাম্মদ নুরুল আজিম বলনে “সেবার মান নিশ্চিত করতে আমাদের অনেক পণ্য আমদানি করতে হয়। মার্কিন ডলারের দাম বেশি হওয়ায় খরচ বেড়েছে। তবে গ্রাহকদের স্বার্থে আমরা সেবার মূল্য অপরিবর্তিত রেখেছি। ফলস্বরূপ, আমাদের লোকসান গুনতে হয়েছে”।
রানার অটোমোবাইলস, দেশের শীর্ষস্থানীয় বাইক প্রস্তুতকারক। প্রতিষ্ঠানটি ২০২২-২৩ অর্থ বছরের প্রথম ত্রৈমাসিকে ৮.৯৩ কোটি টাকা ক্ষতির কথা জানিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি গত অর্থ বছরের একই সময়ে ১০.৪ কোটি টাকার মুনাফার করতে সক্ষম হয়েছিল।
কোম্পানির চিফ ফাইন্যান্সিয়াল অফিসার শানত দত্ত বলেন, শুধু টাকার অবমূল্যায়নেই এ বছর কাঁচামালের দাম এক-পঞ্চমাংশেরও বেশি বেড়েছে এবং কোম্পানিগুলোকে দাম বাড়াতে হয়েছে।

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.