আজ: শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ইং, ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৮ই রমজান, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

১৩ ডিসেম্বর ২০২২, মঙ্গলবার |

kidarkar

দক্ষিণ এশিয়া অর্থনীতির দোঁড়ে এগিয়ে ভারত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ২০২২ সাল খুব একটা ভালো কাটেনি দক্ষিণ এশিয়ার জন্য। শ্রীলঙ্কায় অর্থনীতি ভেঙে পড়েছে, মূল্যস্ফীতি ৭০ শতাংশে পৌঁছেছে, খাদ্য ও জ্বালানির অভাব দেখা দিয়েছে, জনগণের তোপের মুখে দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন প্রেসিডেন্ট। পাকিস্তান দেউলিয়াত্বের শঙ্কায় পড়েছে, ভয়াবহ বন্যায় আনুমানিক চার হাজার কোটি মার্কিন ডলারের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের অবিরত আন্দোলনে অশান্ত হয়ে উঠেছে দেশটি। এ বছর বাংলাদেশে ভয়ংকর শিল্প দুর্ঘটনা ঘটেছে, বন্যা দেখা দিয়েছে এবং ১০ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা শরণার্থী সামলাতে গিয়ে অস্থির হয়ে উঠেছে জনগণ। আর নেপাল পড়েছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংকটে।

কিন্তু দক্ষিণ এশিয়াজুড়ে এমন অন্ধকারের মধ্যেও একটি জায়গা জ্বলজ্বল করেছে সারা বছর। ২০২২ সালে বেশিরভাগ মানদণ্ডেই ভালো করেছে ভারত। মহামারি সংক্রান্ত বিধিনিষেধ তুলে দেওয়ায় জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হয়েছে। ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুদের হার বৃদ্ধি ধনী দেশগুলোর তুলনায় কম নৃশংস ছিল। মূল্যস্ফীতি ছিল প্রায় সাত শতাংশ, যা যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যের তুলনায় ইতিবাচক, আর পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কার তুলনায় তো কথাই নেই!

পূর্বাভাসে ২০২২ সালে ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৮ শতাংশ ধরা হয়েছে, যা বেশিরভাগ বড় অর্থনীতিগুলোর তুলনায় বেশি। মার্কিন ডলারের বর্তমান মূল্যে পরিমাপ করলে যুক্তরাজ্যকে ছাড়িয়ে ভারত এখন বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতি। ২০২৩ সালে দুই দেশের মধ্যে এই ব্যবধান আরও বাড়বে বলে মনে করছে আইএমএফ।

উত্তর প্রদেশসহ বিভিন্ন রাজ্যে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির পুনর্নির্বাচিত হওয়া অঞ্চলগুলোতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আনতে পারে। বিদেশের ক্ষেত্রে ঐতিহাসিক মিত্র রাশিয়া এবং ক্রমেই ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকা পশ্চিমাদের মধ্যে একটি জটিল ভারসাম্যমূলক কৌশল গ্রহণ করেছেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়ায় ভারতের অধিকারের পক্ষে শক্ত অবস্থান নিয়েছেন।

ভারতীয়দের এমন অসাধারণ চলার গতি ২০২৩ সালেও অব্যাহত থাকবে বলে মনে হচ্ছে। চীন যখন স্ব-প্রবর্তিত মন্থরতায় ভুগছে, পশ্চিমের কিছু অংশ যখন অর্থনৈতিক মন্দার কিনারায় দাঁড়িয়ে, তখন ভারতের প্রবৃদ্ধি খুব সামান্যই কমতে পারে। নতুন বছরে এর অর্থনীতি ৬ দশমিক ১ শতাংশ বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।

ভারতের অর্থনৈতিক অগ্রগতির অন্যতম কারণ হলো অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ। দেশটির বৃহত্তম ব্যবসায়িক গোষ্ঠীগুলো সৌর, বায়ু, হাইড্রোজেনসহ সবুজ জ্বালানির পেছনে অর্থ ঢালছে। ইলেকট্রনিকস, ওষুধ, ড্রোন ও ব্যাটারিসহ ১৪টি ‘মূল শিল্প’ উত্পাদনকে উত্সাহিত করতে সরকারি ভর্তুকিতে প্রলুব্ধ হচ্ছে বহু কোম্পানি৷ আদানি ও রিলায়েন্সের মতো ভারতীয় জায়ান্ট, কিংবা ওলা’র মতো রাইড-শেয়ারিং ও ইলেকট্রিক-স্কুটার স্টার্টআপের মতো নতুন সংস্থাগুলো এর সুবিধা নিচ্ছে৷

অবশ্য তারপরও যে ২০২৩ সালে ভারতের চলার পথটা খুব মসৃণ হবে, তা নয়। দক্ষিণ এশিয়ার বাকি অংশের মতো এটিও নিয়ন্ত্রণের বাইরের কিছু ঘটনা ও প্রবণতার ঝুঁকিতে রয়েছে। মূলত তিনটি বিষয় ২০২৩ সালে এ অঞ্চলকে অস্থিতিশীলতার হুমকিতে রেখেছে।

প্রথমটি হলো- জীবনযাত্রার ব্যয়। অর্থনৈতিক ও জলবায়ু সংকট শ্রীলঙ্কা এবং পাকিস্তানে বহু মানুষের জীবন অসহনীয় করে তুলেছিল। তবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মূল্য চুকাতে হয়েছে পুরো অঞ্চলকেই। এই যুদ্ধ খাদ্য ও জ্বালানির খরচ বাড়িয়ে দিয়েছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে ডলারের মূল্যবৃদ্ধি ও যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর মুদ্রানীতি। এটি অন্য সব কিছুর দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। ২০২৩ সালে দক্ষিণ এশিয়ার বাকি অংশের তুলনায় ভারতে মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতি হয়তো অতটা খারাপ হবে না, তবে কিছু ক্ষতি তো করবেই।

আরেকটি বড় উদ্বেগ হলো- ক্রমবর্ধমান জলবায়ু সংকট। পাকিস্তান এবং উত্তর ভারতে গত মার্চ-এপ্রিলে রেকর্ডভাঙা তাপপ্রবাহের কারণে স্থবির হয়ে গিয়েছিল শহরগুলো। বাড়িতে থাকতে বলা হয়েছিল বাসিন্দাদের। পরে দুই দেশই প্রবল বৃষ্টিপাতের শিকার হয়। অঞ্চলটি পরিবর্তনশীল জলবায়ুর জন্য বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ। ভবিষ্যতে এ অঞ্চলে আরও রেকর্ডভাঙা তাপপ্রবাহ, খরা ও বন্যার আশঙ্কা রয়েছে।

সম্ভাব্য অস্থিতিশীলতার তৃতীয় কারণ হলো- ভূরাজনীতি। ২০২০ সালে লাদাখে উদ্ভূত সীমান্ত বিরোধ এখনো মেটাতে পারেনি ভারত ও চীন৷ পারস্পরিক সন্দেহের কারণে তাদের ছোটখাটো শোডাউনগুলো হঠাৎই বড় হয়ে উঠতে পারে; বিশেষ করে, ভারত ক্রমেই পশ্চিমা-ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠার কারণে।

২০২২ সালের ১২টি মাস বেশ অস্থিরতায় কেটেছে দক্ষিণ এশিয়ার। ফলে এ অঞ্চলের দেশগুলো আশা করবে, নতুন বছর শান্ত, স্থিতিশীল ও আরও সমৃদ্ধ হোক। অর্থনীতির টার্নিং পয়েন্টে পৌঁছানো ভারতের আশাও থাকবে একই।

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.