আজ: শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ইং, ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৭ই রমজান, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

১৪ ডিসেম্বর ২০২২, বুধবার |

kidarkar

‘মায়ের কান্না’য় বিব্রত মার্কিন রাষ্ট্রদূত, মন্ত্রীর কাছে অসন্তোষ

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর শাহীনবাগে নিখোঁজ বিএনপি নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমনের বাসায় গিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয় মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসকে। এ ঘটনায় রাষ্ট্রদূত হাস বেশ অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন বলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনকে জানিয়েছেন।

বুধবার (১৪ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবসের অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

এদিন সকালে ২০১৩ সালে বিএনপির নিখোঁজ নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমনের শাহীনবাগের বাসায় যান পিটার হাস। তিনি অবস্থান করেন প্রায় ২৫ মিনিট। তবে সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনও কথা বলেননি। সেখানে অনির্ধারিতভাবে উপস্থিত হয়েছিলেন ‘মায়ের কান্না’ নামে একটি সংগঠনের সদস্যরা।

জানা গেছে, এই ঘটনায় আমেরিকান কর্মকর্তা ঘাবড়ে যান। এরপর তার প্রটোকল কর্মীদের সহযোগিতায় দ্রুত ওই এলাকা ত্যাগ করে সোজা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চলে যান। সেখানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনকে পুরো ঘটনা খুলে বলেন।

বুধবার সন্ধ্যায় মন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, এই অস্বাভাবিক ঘটনায় কিছুটা ঘাবড়ে গেছেন যুক্তরাষ্ট্রের দূত। তিনি দুশ্চিন্তায় আছেন। অসন্তুষ্ট হয়েছেন। তবে তিনি চাইলে তাকে অধিক নিরাপত্তা দেওয়ার কথা জানানো হয়েছে।

প্রসঙ্গত, এই সংগঠনের সদস্যরা; যারা জিয়াউর রহমানের আমলে ১৯৭৭ সালে বিমান বাহিনীতে ঘটে যাওয়া ঘটনাপ্রবাহের শাস্তির দাবি করেন। সেসময় সেনা ও বিমান বাহিনীর নিখোঁজ সদস্যদের স্বজনদের সংগঠন ‘মায়ের কান্না’ যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের কাছে দেওয়া স্মারকলিপি দেওয়ার চেষ্টা করে। এতে ৪৫ বছর আগের গুমের ঘটনা আন্তর্জাতিক তদন্ত চাওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে সামরিক শাসনামলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সহযোগিতা চান।

স্পষ্টতই পিটার হাস এটি পছন্দ করেননি। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে গিয়ে তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটালেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত আজকে হঠাৎ করে জরুরি ভিত্তিতে আমার সঙ্গে দেখা করেন। আমার সঙ্গে দেখা করে আমাকে উনি বললেন, উনি একটি বাসায় গিয়েছিলেন। সেখানে অনেক লোক ছিল। উনি গিয়েছিলেন একটি বাসায়। কিন্তু বাইরে অনেক লোক ছিল।

‘তারা উনাকে একটা কিছু বলতে চাচ্ছিল। উনার সিকিউরিটির লোকরা উনাকে বলেছে, আপনি তাড়াতাড়ি এখান থেকে চলে যান। এই লোকরা আপনার গাড়ি ব্লক করে দেবে। তিনি তখন তাড়াতাড়ি সেখান থেকে চলে যান। এই ঘটনায় উনি খুবই অসন্তুষ্ট হয়েছেন।’

মোমেন বলেন, আমি উনাকে বললাম, আপনার নিরাপত্তা বিধানের দায়িত্ব আমাদের। আপনার ওপর বা আপনার লোকদের ওপর কেউ আক্রমণ করেছে? উনি বললেন, ‘না’। তবে উনার গাড়িতে হয়তো দাগ লেগেছে। তবে উনি সিওর না।

‘আমি বললাম আপনার এবং আপনার লোকজনকে আমরা নিরাপত্তা দেবো। আপনি আরও অধিকতর নিরাপত্তা চান আমরা দেবো। তবে আপনি যে ওখানে গেছেন, এই খবরটা কে প্রকাশ করল; আমরা তো জানি না। আমরা আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কিছুই জানি না। আপনারা আমাদের কিছুই জানানওনি। আপনি ওখানে যাবেন, এই তথ্যটা লিক করল কে। উনি এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি।’

মোমেন বলেন, আমি তাকে আবার বলেছি, আপনার নিরাপত্তা দেবো। কিন্তু আপনি বের করেন আপনার যাওয়ার খবরটা কে বের করল। উনি দুশ্চিন্তায় আছেন। আমি উনাকে বলেছি, আমাদের মিডিয়া খুবই সোচ্চার। তারা যেকোনও কিছুর পেছনে লেগে থাকে। তাদের আমি বাধা দিতে পারব না। কারণ আমাদের দেশে ফ্রিডম অব মিডিয়া খুবই স্ট্রং। তবে আমি তাদের ডিস্টেঞ্জ রাখতে পারব। ১০ ফুট, ১৫ ফুট।

‘আমাদের ওখানে লোকজন গেছে সেটাও আমি বাধা দিতে পারবো না। তবে কেউ যদি আপনার ওপর আক্রমণ করে, সম্পদ ধ্বংস করে আমি আইনি ব্যবস্থা নিতে পারবো। আপনার থেকে সবাইকে দূরে রাখতে পারব।’

উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের দূতের এই সফর যে সরকারের পছন্দ হয়নি, সেটি পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যে স্পষ্ট হয়েছে। শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবসের আলোচনায়, সরাসরি বিষয়টি নিয়ে কথা না বললেও আওয়ামী লীগ সভাপতি যুক্তরাষ্ট্রের বিষয়ে বলেন, ‘আমেরিকা খুনিদের মানবাধিকার নিয়ে ব্যস্ত।’ তবে ওবায়দুল কাদের সরাসরিই বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস সাহেব আজকে ভোরবেলায় বুদ্ধিজীবী দিবসে সাজ্জাদুল সুমনের বাড়িতে গেলেন। ২০১৩ সালে গুম হয়েছিল। তার বাড়িতে উনি গেলেন, আমি সবিনয়ে তাকে জিজ্ঞেস করি যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি মাসে কতজন গুম হয়, সেই চিত্রটা কিন্তু সিএনএনে আমরা দেখেছি। কতজন ধর্ষিত হয় নারী, সেটাও আমরা দেখেছি। কতজন খুন হয় সেই চিত্রও আমরা দেখেছি।’

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.