আন্তর্জাতিক বাজারে অবস্থান তৈরী করতে ব্যর্থ হয়েছে বেঙ্গল বিস্কুট
শাহ আলম নূর : পুঁজিবাজারে এসএমই মার্কেটে তালিকাভুক্ত কোম্পানি বেঙ্গল বিস্কুট আন্তর্জাতিক বাজারে শক্ত অবস্থান তৈরী করতে পারছে না।
বেঙ্গল বিস্কুট লিমিটেড দেশের বাজারে একটি জনপ্রিয় বিস্কুট ব্র্যান্ড, ব্যবসায়িক অবস্থান বৃদ্ধির আশায় গত বছর বিশ্ব বাজারে তারা প্রবেশ করে। তবে এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক বাজারে নিজেদের অবস্থান খুব সামান্যই তেরী করতে পেরেছে।
একবার তালিকাভুক্ত, পরে আবার তালিকাচ্যুত হয়ে ডিএসই’র এসএমই বোর্ডে তালিকাভুক্ত হয়। প্রতিষ্ঠানটি ২০২১-২২ অর্থবছরে মাত্র ৩৩ লাখ টাকার রপ্তানি আদেশ পেয়েছে। এবং রপ্তানি আয়ের উপর নগদ প্রণোদনা হিসাবে পেয়েছে ৩ লাখ টাকা।
কোম্পানির প্রকাশিত ২০২১-২২ অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে প্রতিষ্ঠানটি ৫৬.৫৫ কোটি টাকার পণ্য বিক্রি করেছে। আগের অর্থবছরে একই সময়ে ছিল ৫৬.২৭ কোটি টাকা।
বিস্কুট প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানটি ২০২১-২২ অর্থবছরে ০.৫৪ কোটি টাকা নিট লাভ করেছে যা আগের অর্থবছরে একই সময়ে ছিল ০.৬২ কোটি টাকা। ২০১৯-২০ অর্থ বছরে প্রতিষ্ঠানটির মুনাফা ছিল ০.১৮ কোটি টাকা।
রপ্তানিতে শক্ত অবস্থান তৈরী করতে না পারার কারন সম্পর্কে বেঙ্গল বিস্কুটের কর্মকর্তারা বলছেন তারা মাত্র এক বছর আগে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশ করেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে অনেক চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি অনেক সুযোগ রয়েছে। তবে তারা বিশ্ববাজারে একটি শক্তিশালী অবস্থান তৈরী করতে পারবেন বলে আশা করেন।
সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘনের কারণে, কোম্পানিটি ২০০৯ সালে পুঁজিবাজার থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল এবং পরবর্তীতে বর্তমানে বন্ধ ওটিসি বাজারে যুক্ত করা হয়েছিল।
পরবর্তীতে, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ কোম্পানিটিকে এসএমই বোর্ডে যুক্ত করা হয়। স্বল্প মূলধনী কোম্পানিগুলোর ব্যবসা সম্প্রসারণে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে মূলধন উত্তোলনের সুযোগ দিতে মূল লেনদেন প্ল্যাটফর্মের বাইরে বিশেষ এ বোর্ড চালু করেছে ডিএসই। সেজন্য আলাদা বিধিও করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি।
বেঙ্গল বিস্কুটের রপ্তানি শুরু করলেও তথ্যে দেখা যায় রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে সামান্যই। কোম্পানির পক্ষ থেকে অবশ্য রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে দায়ী করে বলা হয়েছে বিশ্ববাজারে কাঁচামালের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে গত অর্থবছরে প্রত্যাশার চেয়ে কম মুনাফা অর্জিত হয়েছে। কোম্পানির ওয়েবসাইটে বা বোর্ডের ওয়েবসাইটে পর্যাপ্ত আর্থিক তথ্য নেই।
এসএমই প্ল্যাটফর্মে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর অবশ্য ত্রৈমাসিক আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করার বাধ্যবাধকতা নেই যেভাবে মূল বাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো করে থাকে। এসএমই কোম্পানিগুলো বছরে একবার আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করতে পারে।
কোম্পানির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এ বিষয়ে বলেন, এটি একটি এসএমই বোর্ড। এখানে তালিকাভুক্ত কোম্পানির পর্যাপ্ত আর্থিক তথ্য প্রকাশের প্রয়োজন নেই।
বেঙ্গল বিস্কুটস লিমিটেডের কোম্পানি সেক্রেটারি খোন্দকার হাসান রেজা বলেন, ২০২১-২২ অর্থবছরে আমাদের মূলধনের বেশির ভাগই ব্যয় হয়েছে কাঁচামাল এবং পণ্য বাজারজাতকরণে। এতে আমরা গত অর্থবছরে বড় অঙ্কের মুনাফা করতে পারিনি।
তবে গত অর্থবছরের তুলনায় তাদের ব্যবসা ভালো হওয়ায় চলতি অর্থবছরে ভালো করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন হাসান রেজা।
পরিশোধিত মূলধন মাত্র ৭.৯ কোটি টাকা সহ কোম্পানিটি ২০০৯ সালে তালিকাচ্যুত হওয়ার পর অনেক দিন শেয়ারবাজারের ওটিসি মার্কেটে পড়ে ছিল।
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) পাবলিক ইস্যু রুলস ২০১৫ অনুসারে, একটি কোম্পানির মূল বোর্ডে তালিকাভুক্ত হতে ন্যূনতম ৩০ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধন প্রয়োজন। তাই বেঙ্গল বিস্কুটস মূল বাজারে ফেরার আশা একেবারেই কম।
কোম্পানির কর্মকর্তারা বলেছেন যে কোনও ছোট-ক্যাপ কোম্পানি তার পরিশোধিত মূলধন এত দ্রুত বাড়াতে পারে না।
এক্সেলসিয়র গ্রুপের একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান বেঙ্গল বিস্কুট লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির ফার্মাসিউটিক্যালস, টেক্সটাইল, ফুটওয়্যার সহ বেশ কয়েকটি খাতে ব্যবসা রয়েছে ।
১৯৮০ সালের নভেম্বরে একটি প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি হিসাবে অন্তর্ভুক্ত, কোম্পানিটি ১৯৯৪ সালে একটি পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে রূপান্তরিত হয়।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের এসএমই ট্রেডিং ফ্লোরে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম ছিল ৮২.৩০ টাকা।
৩০ জুন ২০২২ পর্যন্ত স্পন্সর এবং পরিচালকদের যৌথভাবে কোম্পানিতে রয়েছে ৩০.৬০ শতাংশ শেয়ার। একই সাথে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের ১০.২৭ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারিদের ৫৯.১৩ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।