আজ: শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ইং, ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৮ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

২৫ জানুয়ারী ২০২৩, বুধবার |

kidarkar

বিএসইসির কাছে নীতি সহায়তার আবেদন

সব সম্পদ বন্ধক, ব্যবসায়ী মূলধন সংকটে লুব-রেফ

নিজস্ব প্রতিবেদক :  দেশের পুঁজিবাজারে দুই বছর ধরে তালিকাভুক্ত কোম্পানি লুব-রেফ (বাংলাদেশ) লিমিটেড ইতোমধ্যে ব্যবসায়ী মূলধনের ঘাটতিতে পড়েছে। সেই সঙ্গে ঘাটতি পূরণে কোনো ব্যাংক থেকেই ঋণ নিতে পারছে না। কারণ কোম্পানির সব স্থায়ী সম্পদ ঋণ নেয়া ব্যাংকগুলোর কাছে বন্ধক রাখা হয়েছে বলে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কাছে জানিয়েছে কোম্পানিটি। এজন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থার নীতি সহায়তা চেয়ে কমিশনের কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ ইউসুফ। বিএসইসির কাছে আইপিওর মাধ্যমে নেয়া অর্থ ব্যবসায়ী মূলধন হিসেবে ব্যবহারের অনুমোদন চাওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন কোম্পানিটির প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) মোহাম্মদ মফিজুর রহমান। সম্প্রতি সার্বিক অবস্থা তুলে ধরে ও সহায়তা চেয়ে কমিশনের কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন কোম্পানির এমডি।

কোম্পানির চিঠিতে বলা হয়েছে, উদ্যোক্তা ও আইপিওর মাধ্যমে বর্তমানে কোম্পানির ইক্যুইটি শেয়ারের পরিমাণ ১৪৫ কোটি ২৪ লাখ টাকা। কোম্পানির দীর্ঘ ও স্বল্পমেয়াদি ঋণ রয়েছে যথাক্রমে ৫২ কোটি ৯৭ লাখ এবং ৭৪ কোটি ২১ লাখ টাকা। এ দায় পরিশোধ করতে কোম্পানির কমপক্ষে ১৪০ কোটি টাকার ব্যবসায়ী মূলধন প্রয়োজন, যেখানে কোম্পানির এখন অর্থায়ন ও অর্থায়ন ছাড়া উভয়ভাবে ৭০ কোটি টাকার ব্যবসায়ী মূলধন রয়েছে। ২০২২ সালের বিক্রয় লক্ষ্যমাত্রা এবং ২০২৩ সালের বিক্রয় লক্ষ্যমাত্রা পূরণের জন্য যা যথেষ্ট নয়। বিশেষ করে কাঁচামালা বাবদ ব্যয় কয়েক গুণ বেড়ে যাওয়ার কারণে সম্ভব নয়।

আরও বলা হয়েছে, মহামারি চলাকালে কোম্পানির মোটরগাড়ি খাতের বাজার চাহিদা বন্ধ হয়েছিল। সে সময় শিল্প খাতের কার্যক্রমও খুব খারাপ অবস্থায় ছিল। ফলে কোম্পানির ব্যবসায়ী মূলধনের অধিকাংশ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। সেই সঙ্গে সে সময় সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কোম্পানিকে অতিরিক্ত ব্যবসায়ী মূলধন দিতে ব্যর্থ হয়েছে। তারা শুধু ১০ কোটি টাকার মধ্যে থাকা ঋণের সুদের হারে ছাড় দিয়েছে। ফলে কোম্পানির চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হয়নি।

এদিকে কোম্পানি যখন মহামারী-পরবর্তী সময়ে পুনরুদ্ধারের জন্য কাজ করছে, তখন ইউক্রেন ও রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে পুরো পেট্রোলিয়াম খাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে যুদ্ধের আগের পরিস্থিতির তুলনায় কাঁচামালের দাম দুই থেকে তিন গুণ বেড়ে গিয়েছে। একই সময় পণ্যের দামও বেড়েছে কয়েকগুণ। তাই কোম্পানির ব্যবসায়ী মূলধন এক-তৃতীয়াংশে হ্রাস পেয়েছে বলে জানিয়েছে।

এখন উৎপাদন চলমান রাখার জন্য কোম্পানির ব্যবসায়ী মূলধনের সীমা অবিলম্বে বৃদ্ধি করতে হবে। দুর্ভাগ্যবশত কোম্পানির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক অতিরিক্ত জামানত ছাড়া অর্থ দেবে না বলে জানিয়েছে। কোম্পানি জামানত দিতে অক্ষম, কারণ তারা ইতোমধ্যে কোম্পানির সব স্থায়ী সম্পদ ব্যাংকের কাছে বন্ধক রেখেছে। এছাড়া আইপিওর ৩৭ কোটি টাকা ২০২২ সালের ২৩ জুন সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড থেকে অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেডে ট্রান্সফার করা হয়। এরপর ব্যাংকটি কোম্পানির নতুন প্রস্তাবের প্রতি কঠোর হয়েছে।

সব অসুবিধার পরও কোম্পানিটি ২০২১ সালের সমাপ্ত বছরে সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে উল্লেখ করে জানায়, কোম্পানি আশা করছে চলতি বছর এবং পরের বছরও একই রকম লভ্যাংশ দেবে, যদি কোম্পানি প্রকল্পগুলো সঠিকভাবে চালাতে পারে।

এদিকে আইপিও অর্থ থেকে ব্যাংকের কিছুটা দায় পরিশোধের পর নতুন প্রকল্পের সাইট উন্নয়নে কোম্পানির কাছে আইপিও অর্থের ২০ ও ৩৭ কোটি টাকা যথাক্রমে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক এবং অগ্রণী ব্যাংকে রয়েছে। উল্লেখিত আইপিও অর্থ এলসি মার্জিনের জন্য একটি বিশেষ অ্যাকাউন্টে রাখা হয়েছে, যা বিএমআরই প্রকল্পের জন্য যন্ত্রপাতি আমদানির বিপরীতে নামমাত্র টাকা। উল্লিখিত ব্যাংক দুটি পূর্বে দেয়া প্রতিশ্রুত সিন্ডিকেট ঋণ দিতে ব্যর্থ হয়েছে এবং দুই বছরের জন্য কোম্পানির ঋণ প্রস্তাব বাতিল করেছে।

এদিকে বিশ্বে অস্থিতিশীলতার কারণে অর্থনীতির মন্দার প্রভাব কোম্পানি ওপরও পড়বে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এছাড়া অগ্রণী ব্যাংকে প্রস্তাবিত একটি সিন্ডিকেটেড ঋণ প্রক্রিয়াধীন। তারপরও বিএমআরই প্রকল্প শেষ হতে দেরি হবে জানিয়েছে কোম্পানি। এ সময়ের মধ্যে অবশ্যই শুধু কোম্পানিকেই নয়, কর্মচারী ও তাদের পরিবারকেও রক্ষা করতে হবে এবং অনেক শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থ বজায় রাখতে হবে। তাই এ পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য কোম্পানিটির বিএসইসির নীতিগত সহায়তা প্রয়োজন। এ কারণে কোম্পানিটি বিএসইসির সব ধরনের এবং দ্রুত পদক্ষেপ চেয়েছে।

চিঠির বিষয়ে নিশ্চিত করে কোম্পানির সিএফও মোহাম্মদ মফিজুর রহমান বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে ব্যাংকের কোনো সহয়োগিতা নেই। প্রায় ছয় মাস আগে এলসি বন্ধ করে দিয়েছে। এখন আবার এলসি খোলা হচ্ছে, তবে যেখানে আগে ৫ থেকে ১০ শতাংশ মার্জিনের মাধ্যমে এলসি করা হত তা এখন ১০০ থেকে ১৫০ শতাংশ মার্জিনে করা হয়। তাও ব্যাংক সুযোগ বুঝে করে এবং তাদের আবার ২০০ শতাংশ মার্জিন দিতে হয়। এখন শতাংশের হার বৃদ্ধি পাওয়ার পরও আমাদের টার্গেট পূরণ করতে হচ্ছে। না হলে আমরা আবার বকেয়ায় পরে যাব বা খেলাপি হয়ে যাব। যে কারণে আমাদের ব্যবসায়ী মূলধন কমে যাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের যে প্রকল্প করার কথা ছিল সেখানে ব্যাংক আর বড় আকারে যেতে চাইছে না। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি ছোট আকারে সেটা করব। আর এদিকে প্রকল্পের জন্য নেয়া আইপিও অর্থের একটা অংশ রয়েছে, যাকে স্বল্প সময়ের জন্য ব্যবসায়ী মূলধন হিসেবে ব্যবহার করতে পারি কি না সে বিষয়ে নীতি সহায়তা চেয়েছি। যা তিন বা ছয় মাসের জন্য হবে জানিয়েছেন তিনি।

কোম্পানিটি ২০২১ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। কোম্পানির অনুমোদিত মূলধন ২৫০ কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মূলধন ১৪৫ কোটি ২৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা। কোম্পানির মোট শেয়ারের মধ্যে ৩৫ দশমিক ৭০ শতাংশ উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের, ২২ দশমিক ২০ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী, শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ বিদেশি বিনিয়োগকারী এবং ৪২ দশমিক ৪ শতাংশ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে।

১ টি মতামত “সব সম্পদ বন্ধক, ব্যবসায়ী মূলধন সংকটে লুব-রেফ”

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.